নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ মে, ২০২২

জুয়ায় হেরে ১২ বছর ঘরছাড়া

নিখোঁজ সুমন উদ্ধার

মিরপুরে শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে ডায়মন্ড প্যাকেজিংয়ে হেলপারের কাজ নেন মো. সুমন। ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে জুয়া খেলায় বসেন। সেখানে ১০০ টাকার বাজি ফেলে হারান নিজের মোবাইলফোন। সে সময়ে ১৬ বছরের কিশোর সুমন মোবাইল খোয়ানোর ভয়ে আর বাসায় না গিয়ে শুরু করেন সংগ্রামী জীবন। কখনো রাত কেটেছে বায়তুল মোকাররম মসজিদের বারান্দায় কখনো বাসে, কখনো ফুটপাতে। জীবন সংগ্রামে ফুলের মার্কেট, বাসের হেলপার, হোটেলের বাবুর্চি, চটপটি কিংবা পপকর্ন বিক্রির কাজ করেছেন। সর্বশেষ বাসের ড্রাইভিং পেশায় যোগ দেন সুমন। চার বছর আগে বিয়েও করেন তিনি। নিখোঁজ সন্তান সুমনের সন্ধানে বাবা মোজাফফর হোসেন ওই সময় থানায় জিডি ও পরে মামলা করেন। এ মামলার থানা পুলিশ, ডিবি, সিআইডি হয়ে সর্বশেষ পিবিআইয়ের হাতে আসে তদন্ত ভার। নিখোঁজ ওই মামলায় ১২ বছরেও তদন্তের কোনো সন্ধান মিলেনি। সুমনও স্ব-উদ্যোগে আর ফেরেননি পরিবারের কাছে। অবশেষে সুমনের স্ত্রীর সহযোগিতা ও পিবিআইয়ের তদন্তে দীর্ঘ ১২ বছর পর নিখোঁজ সুমনকে ফিরে পায় তার পরিবার। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলমের তদারকিতে গত ২৩ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর কদমতলী থানাধীন মদিনাবাগ এলাকা থেকে সুমনকে উদ্ধার করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিশেষ পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট সকাল ৮টায় মোজাফ্ফর (৫২) তার ছেলে সুমনকে (১৭) নিয়ে বাসা থেকে কর্মস্থল ডায়মন্ড প্যাকেজিং গার্মেন্টে যান। এরপর আর বাসায় ফেরেনি সুমন। মোজাফ্ফর ছেলের সন্ধান চেয়ে ওই বছরের ৫ অক্টোবর পল্লবী থানায় একটি জিডি করেন। এর মধ্যে বাবা মোজাফফরের কাছে তথ্য আসে সুলায়মান হোসেন, শাওন পারভেজ, রুবেল, সোহাগ ও মানিক নামে কয়েকজন মিলে সুমনকে অপহরণ করেছে। পরে এ ঘটনায় ২০১০ সালের ২৯ অক্টোবর পল্লবী থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন মোজাফ্ফর। মামলার শুরুতে তদন্ত করে পল্লবী থানা পুলিশ। এরপর মহানগর ডিবি পুলিশ ২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর দায়িত্ব নেয়। ডিবি নিখোঁজ সুমনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করে এবং মামলার এজাহারভুক্ত সুলাইমান, পারভেজকে গ্রেপ্তার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদও করে। তবে সুমনের খোঁজ মেলেনি। পরে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের আদেশে মামলাটির তদন্তভার সিআইডির ওপর অর্পণ করা হয়। সিআইডি ২০১২ সালের ২৫ এপ্রিল মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। তারা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কোনো সুহারা না পেয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। এতে বাদী নারাজি আবেদন করলে আদালতের নির্দেশে পুনরায় তদন্তভার দেওয়া হয় ডিবিতে। এরপরও মেলেনি কোনো সমাধান। পরে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার যায় পিবিআই। তদন্তকালে পিবিআই জানতে পারেন, মামলার ভিকটিম নিখোঁজ হওয়ার ১১ দিন পর একটি মোবাইল নম্বর থেকে বাদীর সঙ্গে কথা বলেন নিখোঁজ সুমন। ভিকটিমের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো উত্তর না দিয়েই ফোনটি রেখে দেন তিনি। এরপর থেকে মোবাইল নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায়। তদন্তকালে ওই মোবাইল নম্বরের মালিককে শনাক্ত করা হয়।

ওই মোবাইলের সিমটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আবদুল হাইয়ের। তবে সেটি ব্যবহার করতেন তার ভাগ্নে সালাউদ্দিন। তার শাহবাগ থানার সামনে ফ্ল্যাক্সিলোডের দোকান। পরে সালাউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানান, অনেক অপরিচিত লোকজন দুই টাকা মিনিটে কথা বলতেন। কে কখন কল করেছিল তা তিনি শনাক্ত করতে পারেননি। তদন্তকারী বিশেষ টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিম সুমনকে শনাক্তপূর্বক ২৩ মে রাতে কদমতলী থানাধীন মদিনাবাগ এলাকা থেকে উদ্ধার করেন।

সুমন জানান, তিনি শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি ডায়মন্ড প্যাকেজিংয়ে হেলপার হিসেবে কাজ করেন। ঘটনার দিন মিরপুর-১১ নম্বর বাজার এলাকার চার রাস্তার মোড়ে তাসের জুয়া খেলায় ১০০ টাকা ধরে হেরে যান। তার কাছে টাকা না থাকায় সঙ্গে থাকা মোবাইলটি জোরপূর্বক রেখে দেয় জুয়াড়িরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close