নিজস্ব প্রতিবেদক
সমালোচকদের প্রধানমন্ত্রী
উন্নয়ন দেখতে গ্রাম ঘুরে আসুন
যারা শহরে বসে সরকারের উন্নয়নের সমালোচনা করেন, তাদের গ্রামে গিয়ে সারা দেশের উন্নয়ন চিত্র দেখে আসার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ঢাকায় বসে অনেকেই সমালোচনা করেন। তাদের অনুরোধ থাকবে সারা বাংলাদেশটা আপনারা একটু ঘুরে দেখবেন। পরিবর্তনটা কোথায় এসেছে, কতটুকু এসেছে। সেটা বোধহয় সবাই গ্রামপর্যায়ে একটু যোগাযোগ করলে জানতে পারবেন।
গতকাল সোমবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘এসডিজি বাস্তবায়ন পর্যালোচনাবিষয়ক দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন’-এ যুক্ত হয়ে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। করোনা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে পুরো বিশ্ব সংকটে। এমন বাস্তবতায় দেশে তিন দিনের এই সম্মেলন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ‘ঘরে ঘরে’ বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে, দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন ‘মেগা প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, এর সুফল দেশের মানুষই পাবে। তৃণমূল থেকে মানুষের জীবনমান পরিবর্তন এবং অর্থনীতিতে গতিশীলতা নিশ্চিতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার।
অপচয় রোধ করে সুষ্ঠু অর্জনে মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দেন সরকার প্রধান। বলেন, সবাই মিলে কাজ করলে, ২০৩০ সালের আগেই জাতিসংঘ ঘোষিত এজেন্ডা-২০৩০ বাস্তবায়ন সম্ভব।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন একান্তভাবে অপরিহার্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যোগাযোগ যত দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, মানুষের পণ্যের পরিবহন বৃদ্ধি পাবে। মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধি পাবে, অর্থনীতি সচল হবে। একবারে তৃণমূল পর্যায়ে যে উৎপাদিত পণ্য তা বাজারজাত করা সহজ হবে এবং দারিদ্র্যবিমোচন করে আমাদের অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কাজেই এসডিজিতে যেসব বিষয়গুলো রয়েছে তার মধ্যে যে বিষয়গুলো আমাদের জন্য প্রযোজ্য তা তার সরকার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে এবং করে যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।’
খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের একটু উন্নত জীবন দেব সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
বাংলাদেশে ‘সবাই নিজের মত প্রকাশ করতে পারে’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আগে বাংলাদেশে একটিমাত্র টেলিভিশন স্টেশন ছিল, ১৯৯৬ সালে তার সরকারের সময়ই বেসরকারি খাতে টেলিভিশন, রেডিও ‘উন্মুক্ত করে’ দেওয়া হয়। এখন সবাই কথা বলতে পারেন, টকশো করতে পারেন। অবশ্য এটা আমি জানি, অনেক কথা বলার পরে বলবেন, আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না। কিন্তু যখন টকশোতে কথা বলেন, কেউ তো আপনাদের মুখ চেপেও ধরেনি, বা গলা টিপেও ধরেনি। সবাই যার যার ইচ্ছেমতো বলতে পারেন।
এসডিজি বাস্তবায়ন পর্যালোচনায় এই জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করায় সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানিয়ে সরকারি-বেসরকারি খাতকে পরস্পরের সহযোগী হিসেবে কাজ করার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়ে বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে আমরা নীতি সহায়তা এবং অর্থের জোগান অব্যাহত রাখব, তবে অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং অপচয় রোধ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে ২০৩০ সালের আগেই নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হব। আমাদের লক্ষ্য- আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, সেটা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করব। সেই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য সবাইকে আমি আহ্বান জানাই।
দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করব ইনশাল্লাহ।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ স্বাগত বক্তব্য দেন। অন্যদের মধ্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
"