নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ মে, ২০২২

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে থামছে না ডাকাতি

রাতের সড়কে আড়াআড়ি করে রাখা পিকআপ দেখে বাসটি থামলে গতি কমিয়ে আনে পেছনের মাইক্রোবাসটিও। তখনই পাথর ছুড়ে মারেন এক যুবক, মুহূর্তেই অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে আসেন আরো কজন। মুন্সীগঞ্জের ভবেরচর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বৃহস্পতিবারের এ ঘটনাটি ধরা পড়ে মাইক্রোবাসের ড্যাশবোর্ড ক্যামেরায়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

ভিডিওতে দেখা যায়, মাইক্রোবাসের আরোহীরা স্বাভাবিকভাবে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে মহাসড়ক ধরে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ সামনে থাকা সোনালি পরিবহনের বাসটি ব্রেক কষে। পরে বাসটি সাইড নিয়ে সরে যেতেই সড়কের উপর একটি নীল রঙের ‘টাটা এইস’ পিকআপ ভ্যানকে আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

তখনই সড়কের পাশ থেকে কালো টিশার্ট ও মুখে মাস্ক পরা এক তরুণ মাইক্রোবাসের সামনের কাচে পাথর ছুড়ে মারেন। মাইক্রোবাসটি দাঁড়িয়ে গেলে মুহূর্তের মধ্যেই রাস্তার পাশ থেকে আরো কয়েকজন বেরিয়ে আসে। এ সময় ভেতরে থাকা যাত্রীদের ভয়ার্ত গলায় বলতে শোনা যায়, ‘ভাই আমরা না, ভাই আমরা না’।

চিৎকার করে তারা বলছিলেন, ‘রুবো টান দে, রুবো টান দে।’ এরপর মাইক্রোবাস তড়িঘড়ি করে চালিয়ে আড়াআড়ি করে রাখা পিকআপটি পার হতেই রাস্তার ওপর গাছের ডালপালা পড়ে থাকতে দেখা যায়। টয়োটা নোয়া এস্কোয়ার মাইক্রোবাসটির চালকের আসনে ছিলেন ঢাকার বাসিন্দা নাফিজুল হক রুবো। নিজের ফেইসবুক পাতায় শুক্রবার সকালে নাফিজুল হক রুবো লিখেছেন, আল্লার রহমতে ও মা-বাবার দোয়ায় চিটাগাং যাওয়ার পথে কুমিল্লার আগে মেঘনা ব্রিজে টোল দেওয়ার পর গজারিয়াতে ডাকাতের হাত থেকে ফিরে আসলাম আমরা পাঁচ বন্ধু। ওই ঘটনার পর মাইক্রোবাসের আরোহীরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চেয়েছিলেন। পরে কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের একটি দল তাদের সহায়তার জন্য আসে।

হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ জানান, খবর পেয়ে আমাদের একটি দল তাদের কাছে যায়। পরে জানা যায় ঘটনাস্থলটি পড়েছে হাইওয়ে পুলিশের ভবেরচর (গাজীপুর অঞ্চল) এলাকায়। পরে ভবেরচর পুলিশের দল এসে তাদের সঙ্গে কথা বলে।

এ ঘটনা সম্পর্কে নাফিজুল বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সবাই মিলে চিটাগং যাচ্ছিলাম। মেঘনা ব্রিজ পার হয়ে গজারিয়া হাইওয়েতে ডাকাতের খপ্পরে পড়ি। আমি আর আমার বন্ধু দুজনই আহত হই এবং গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে বড় কোনো দুর্ঘটনা ছাড়া সকালে জীবন নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসি।

আক্রমণের মধ্যেই মাইক্রোবাস নিয়ে তারা দ্রুত পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও সেই রাতে অপর একটি মাইক্রোবাস এবং প্রাইভেট কারে ডাকাতি হয় বলে জানান ভবেরচর হাইওয়ে ফাঁড়ির এসআই বিল্লাল হোসেন। ঘটনার রাতে ওই এলাকায় দায়িত্ব পালন করা এই পুলিশ সদস্য জানান, ডাকাতেরা তাদের মারধর করে মোবাইল এবং মানিব্যাগ লুটে নিয়েছে। রাস্তায় গাছের ডাল ফেলে তাদের পথরোধ করেছিল ডাকাতরা। গজারিয়া থানার পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে আটকের পর আবার যাচাই শেষে ছেড়ে দিয়েছে।

পিকআপটি ডাকাতদের কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাড়িটিসহ এর চালককে আটক করেছে গজারিয়া পুলিশ। তারা (আটকরা) বলেছে, গলায় ছুরি ধরে গাড়িটি রাস্তার ওপর রাখতে বাধ্য করা হয়। পুলিশ বিষয়টি যাচাই করছে বলে জানান ভবেরচর হাইওয়ে ফাঁড়ির এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে বিমানবন্দর থেকে কুমিল্লা যাওয়ার পথে মোগরাপাড়া এলাকায় মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজার যানজটে দাঁড়ানো অবস্থায় ডাকাতের কবলে পড়েন দুটি গাড়িতে থাকা তিন প্রবাসী। ওই ঘটনায় পুলিশ প্রথমে তাদের মামলা নেয়নি। এক সপ্তাহ পর এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, ওই এলাকায় ডাকাতি ঠেকাতে তৎপরতা বাড়াবে তারা। পুলিশ এ ধরনের ডাকাতদের নাম দিয়েছিল ‘থাবা পার্টি’।

এরপর গত ৩১ মার্চ স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং ভাগ্নিকে নিয়ে ঢাকা থেকে গাড়ি চালিয়ে কক্সবাজার যাওয়ার পথে ওই এলাকায় ডাকাতের কবলে পড়েন গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুব আলম। মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মোগরাপাড়া এলাকায় তারা ডাকাতির শিকার হন। সাধারণত ‘থাবা পার্টি’র সদস্যরা যানজটে আটকে থাকা গাড়িতে হামলা চালালেও অধ্যাপক মাহবুব বলেন, গাছের ডাল ফেলে তার চলন্ত গাড়ি আটকে ডাকাতি করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close