প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৪ মে, ২০২২

বাঁশি বাজিয়ে সংসার চলে

শখের বশে বাবার বাঁশি বাজানো দেখে ছোটবেলায়ই বাঁশির প্রতি তৈরি হয় ঝোঁক, একসময় মোহন বাঁশিতে সুরও উঠে, আর সেই সুরই এখন ইব্রাহিমের সংসার চালানোর একমাত্র ভরসা।

বছর তিনেক আগেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের সড়কে রিকশা চালাতেন তিনি, এখন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বাঁশি বাজান। বাঁশির সুরে মুগ্ধ করে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের কাছ থেকে যা পান, তাতেই চলে ইব্রাহিমের ছয়জনের সংসার।

দুই ছেলেমেয়ে, স্ত্রী আর মা-বাবা নিয়ে হাটহাজারী থাকেন তিনি। বাবা আহমেদ সফা একসময় হাটহাজারীতে প্রহরীর কাজ করতেন। বয়সের কারণে এখন বাড়িতে।

ইব্রাহিম বলেন, প্রতিদিন হাটহাজারী থেকে চট্টগ্রাম শহরে যাই। সন্ধ্যার পর শহরের চেরাগী পাহাড়, জামালখান, ষোলশহর, গোলপাহাড়, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন স্থানে যেখানে লোকসমাগম বেশি থাকে, সেসব জায়গায় বসে বাঁশি বাজাই।

বাঁশি শুনে লোকজন ৫, ১০, ২০ টাকা বা যে যেমন পারেন দেন। দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। মা-বাবার ওষুধ, সন্তানদের পড়ালেখা ও পরিবারের খরচ ও দিয়েই চালাতে হয়। বাঁশি বাজানো শুরু কবে থেকে? ইব্রাহিম জানালেন, নৈশপ্রহরী বাবা শখ করে বাঁশি বাজাতেন। ছোটবেলায় তাকে দেখেই বাঁশি বাজানোর চেষ্টা শুরু। প্রথমে সুর তুলতে পারতাম না। পরে সেটা শিখলাম। সেই সুরের মায়া কাটাতে না পেরে তা এখন এটাই রোজগারের পথ হয়েছে।

ইব্রাহিম বলেন, বেশ কয়েক বছর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় রিকশা চালাতেন। বছর তিনেক আগে রিকশা চালানো ছেড়ে দিয়ে বাঁশি বাজিয়ে রোজগার করা শুরু করেন। বাঁশি বাজিয়ে রোজগারের চিন্তা কীভাবে এলো? ইব্রাহিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রিকশা চালানোর সময় সেখানেও অবসরে বসে বাঁশি বাজাতেন। এক দিন শহীদ মিনারের সামনে বসে বাঁশি বাজানোর সময় এক বিদেশির সঙ্গে দেখা হয়। ওই বিদেশি আমাকে তার মোবাইল দেখান, বিদেশে অনেকেই সড়কের পাশে বসে গিটার, বাঁশিসহ নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আয়-রোজগার করেন। সেটা তখন আমার মাথায় ঢুকল। কিছুদিন পর রিকশা চালানো বন্ধ করে দিয়ে বাঁশি বাজানো শুরু করলাম।

চট্টগ্রাম শহর ছাড়াও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতেও বাঁশি বাজাতে যাওয়ার কথা জানান ইব্রাহিম। প্রতি মাসে দু-একবার করে কক্সবাজারে যাই। সেখানে দু-তিন দিন থেকে সৈকতে বাঁশি বাজাই। আয়-রোজগার ভালোই হয়।

ইব্রাহিম বলেন, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে অনেক পর্যটক হয়েছে। ঈদের এক সপ্তাহ পরও সেখানে বিপুল লোকসমাগম ছিল। আগে কক্সবাজারে গেলে রাতে থাকতে কষ্ট হতো। যা রোজগার হতো, তা দিয়ে থাকাণ্ডখাওয়ার পর হাতে কিছুই থাকত না। পরে কক্সবাজারের বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী তাদের বাড়িতে একটি রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দিল। কক্সবাজার গেলে এখন সেখানেই থাকি। বাঁশিই তার শখ এবং সন্তানদের সুন্দর জীবনের আশায় বাঁশিতেই ভরসা পান ইব্রাহিম। তার ভাষ্য, বাঁশি বাজিয়ে খাই, কারো কাছে তো আর হাত পাতি না। এভাবেই জীবন কাটলে ক্ষতি কী?

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close