লেখক, প্রকাশক ও দেশের ব্যতিক্রমধর্মী এক প্রকাশনী ‘সেবা’র কর্ণধার কাজী আনোয়ার হোসেন আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগের সঙ্গে লড়াই করে গতকাল বুধবার হার মানলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তার মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছেন পূত্রবধূ মাসুমা মায়মুর।

তিনি তার ফেসবুকে লেখেন, নিভে গেছে দীপ জনমের তরে জ্বলিবে না সে তো আর। দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে আমার ছেলেটা। আমার ছোট্ট ছেলেটা। আর কোনো দিনও আমার পিছু পিছু ঘুরে খুঁজবে না মায়ের গায়ের মিষ্টি গন্ধ। কোনো দিনই না। কিন্তু মাকে ছেড়ে থাকবে কীভাবে ওই অন্ধকার ঘরে আমার ছেলেটা? একা শুধু একা? কী সব বকছি জানি না। আব্বা (কাজী আনোয়ার হোসেন) আর নেই। চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। (গত ৩১ অক্টোবর প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে। মাঝে পাঁচবার হসপিটালাইজড ছিলেন। চিকিৎসার সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায়নি। একটা ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্টঅ্যাটাক হয়ে সব শেষ হয়ে গেল। ১০ জানুয়ারি থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। আজ (বুধবার) চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। সেবা প্রকাশনীর ফেসবুক পেজে তৌফির হাসান উর রাকিব লিখেছেন, যার কাছ থেকে অপরিমেয় ভালোবাসা পেয়েছিলাম এবং যাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে বাধ্য হয়েছিলাম, সেই মানুষটি আর নেই! কাজী আনোয়ার হোসেন আঙ্কেল আর আমাদের মাঝে নেই! মাসুদ রানার স্রষ্টা, এই নশ্বর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে, আমাদের সবাইকে ছেড়ে অনেক দূরে কোথাও চলে গেছেন।

আপনারা সবাই তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করবেন, প্লিজ। কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই। তার পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাক নাম ‘নবাব’। তার পিতা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মাতা সাজেদা খাতুন। তিনি ছিলেন একাধারে লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক। জনপ্রিয় মাসুদ রানা সিরিজের স্রষ্টা তিনি। সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসেবে তিনি ষাটের দশকের মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামক গুপ্তচর চরিত্রকে সৃষ্টি করেন। এর কিছু আগে কুয়াশা নামক আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র তার হাতেই জন্ম নিয়েছিল। কুয়াশা চরিত্রটি নিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেন প্রায় ৭৬টির মতো কাহিনি রচনা করেছেন। কাজী আনোয়ার হোসেন ছদ্মনাম হিসেবে বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব নাম ব্যবহার করে থাকেন।

"