নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ অক্টোবর, ২০২১

বাস কন্ডাক্টর থেকে ‘মানবাধিকার কর্তা’

হাতিয়েছেন কোটি টাকা

দীর্ঘদিন বাস কন্ডাক্টরের চাকরি করে গড়ে তোলেন ‘সিকিউরিটি গার্ড’ সরবরাহের প্রতিষ্ঠান। শুরু করেন চাকরির নামে প্রতারণা। পরে সেই অফিস বন্ধ করে শুরু করেন জমি ও ফ্ল্যাটের ব্যবসা। নিজেকে পরিচয় দিতেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। অনেক গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান প্রতারক শাহীরুল ইসলাম সিকদার। অবশেষে মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিয়ে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। বিভিন্ন নামি-দামি ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলে কোটি টাকার প্রতারণা করেন তিনি।

বহু অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত রাজধানীর রামপুরা বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহীরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে তিনটি বিদেশি পিস্তল, একটি শর্টগান, একটি এয়ারগান, একটি এয়ার রাইফেল, ২৩৭ রাউন্ড গুলি, পাঁচটি ম্যাগাজিন, পাঁচটি খালি খোসা, ২২টি কার্তুজ, চারটি চাকু, তিনটি ডামি পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড গার্ড সার্ভিস লিমিটেডের চাকরির আবেদন ফরম, চুক্তিপত্র, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ব্যানার, প্যাড, স্ট্যাম্প, ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, গোপন ক্যামেরা, পাসপোর্ট, ভিজিটিং কার্ড, আইডি কার্ড, নেমপ্লেট, বিভিন্ন নামি দামি ব্যক্তির সঙ্গে তোলা ছবি, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, পাসপোর্ট, মানি রিসিট বই, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে র‌্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, রাজধানীতে তার একাধিক ফ্ল্যাট ও জমিসহ দৃশ্যমান প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এছাড়া তার কথিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড গার্ড সার্ভিসেস লিমিটেড, হোমল্যান্ড ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, মানবাধিকার সংস্থা, শাহীরুল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কো. লিমিটেড, হোমল্যান্ড হাউজিং, হোমল্যান্ড বেভারেজ অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মাদারল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড, শাহীরুল ইসলাম বাংলাদেশ আউট সোর্সিং অ্যান্ড পাওয়ার সাপ্লাইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন।

যেভাবে উত্থান প্রতারক শাহিরুলের উচ্চমাধ্যমিক পাস শাহীরুল কর্মজীবন শুরু করেন গাড়ির ব্যবসা দিয়ে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত শৌখিন পরিবহনে কন্ডাক্টরের কাজ করেছেন। এরপর শুরু করেন প্রতারণা ব্যবসা। ২০০৩ সালে সিকিউরিটি গার্ড সরবরাহের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। অল্প সময়ে বিপুল টাকার লোভে ২০১৪ সালে রামপুরায় ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড গার্ড সার্ভিস লিমিটেড’ নামের ওই প্রতিষ্ঠান খুলে শুরু করেন অর্থ আত্মসাৎ। এরপর থেকে তিনি অবৈধভাবে সম্পদের মালিক হতে শুরু করেন। প্রতারণার অভিযোগ আড়াল করতে শাহীরুল তার অফিসের ঠিকানা পরিবর্তন করেন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেডের পরিবর্তে নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি বেনামি মানবাধিকার সংস্থা খুলে নিজেকে চেয়ারম্যান পরিচয় দিতেন।

এছাড়া ক্ষমতা প্রদর্শনের উদ্দেশে নামি দামি ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলে সেগুলো প্রদর্শন করতেন এবং বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতেন। প্রতারণার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার ও শিক্ষিত বহু নারী-পুরুষকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ড, ড্রাইভার, কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী, বিক্রয় কর্মকর্তা, লাইনম্যান হিসেবে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close