বাসস

  ২০ অক্টোবর, ২০২১

মাছের আঁশেও স্বপ্ন...

মাছের আঁশে জীবন বাঁচে, এ ধারণার সঙ্গে আগে থেকে অনেকেই পরিচিত না হলেও এখন বাস্তবে তাই হচ্ছে। বাতিল জিনিস মানেই যে ফেলনা নয়, এটা এখন প্রমাণিত। মাছের আঁশে তৈরি হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। শুধু তাই নয় বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী, ফুড সাপ্লিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয় মাছের আঁশ। এছাড়াও কোলাজেন নামের একটি পণ্য বিক্রি হয় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে। তা-ও তৈরি হয় মাছের আঁশ দিয়ে।

কুমিল্লার মাহবুব বলেন, জীবনে কখনো ভাবিনি মাছের আঁশের ব্যবসা করব। এখন পুরো ধ্যানজ্ঞানই এই ফেলনা জিনিসটির প্রতি। প্রায় ১২ বছর আগে আমার সঙ্গে একদিন ঢাকায় দেবদূতের মতো দেখা হলো এক আঁশ ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি আমাকে বলেন, মাছের আঁশ বাসাবাড়ি কিংবা বাজার থেকে সংগ্রহ করে শুকিয়ে তাকে দিলে তিনি আমাকে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা দেবেন। এ কথায় কুমিল্লা এসে একটি পাত্র নিয়ে সকালেই চলে গেলাম রাজগঞ্জ বাজারে। বাজারে দুপুর পর্যন্ত মাছের আঁশ সংগ্রহ করে ঝাকুনীপাড়া সংলগ্ন গোমতী নদীর পাড়ে শুকিয়ে তাকে দিলাম ৬ কেজি মাছের আঁশ। তিনি আমাকে প্রতি কেজি ৪০ টাকা ধরে ২৪০ টাকা দিলেন। এতে আমার আস্থা এবং উৎসাহ বেড়ে গেল। শুরু করলাম পেশা হিসেবে মাছের আঁশ সংগ্রহ করাকে। এরপর থেকে কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ, চকবাজার, রানীর বাজার, টমছম ব্রিজ, বাদশা মিয়ার বাজার, পদুয়া বাজার, চৌয়ারা বাজার, ক্যান্টনমেন্ট বাজারসহ নানা বাজারে লোক নিয়োগ করি। এ কাজে আমাকে ছয়জন সহযোগিতা করেন। যারা প্রত্যেকেই মাসিক বেতনভুক্ত। আমার এই সহযোগীরা বিভিন্ন বাজার থেকে মাছের আঁশ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন আর আমি তা শুকিয়ে প্রস্তুত করি। ঢাকার পাইকাররা আমার বাড়ি এসে প্রতি মাসে এই মাছের আঁশ নিয়ে যান। মাসে গড়ে আমি ৬০০ কেজি মাছের আঁশ শুকিয়ে বিক্রির উপযোগী করতে পারি।

মাহবুবের দেখাদেখি কুমিল্লার বাদশা মিয়া বাজারের বাদশা আর চান্দিনার খলিলও এখন এ ব্যবসা শুরু করেন। মাহবুব বলেন, প্রথম প্রথম এলাকার মানুষ আমাকে অন্য চোখে দেখত। ঘৃণা করত। বলত, যে মাছের আঁশ আমরা ডাস্টবিনে ফেলে দেই সেগুলো সে বাড়ি এনে শুকায়। এখন স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা বেশি হওয়ায় অনেকেই এ পেশায় আগ্রহী হতে শুরু করেছেন।

এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন বলেন, মাছের আঁশ শুকিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। মাহবুবকে জেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সে যেন সঠিকভাবে এ কাজটি করতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close