ভোলা প্রতিনিধি

  ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সাগরে ৮ জেলে নিখোঁজ

গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে গিয়ে ভোলা সদর উপজেলায় ভেলুমিয়া এলাকার ১১ জন জেলে ঝড়ের কবলে পড়লে ট্রলারটি ডুবে যায়। ঝড়ের কবলে পড়া ট্রলার থেকে গত বুধবার ৩ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও পাঁচ দিন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ট্রলার মালিকসহ ৮ জেলে। তাদের স্বজনদের কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। নিখোঁজদের সন্ধানে গতকাল পর্যন্ত কোস্টগার্ড কোনো উদ্ধারকাজ চালাতে পারেনি। গত সোমবার রাতে বঙ্গোপসাগরের মহিপুরা পয়েন্টে ট্রলারডুবির ঘটনায় বেঁচে ফিরে আসা সিরাজ মিয়া মাঝি গতকাল শুক্রবার এসব কথা জানান।

সিরাজ মিয়া জানান, রবিবার দুপুরে ভোলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নে তাদের বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে সাগরে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে চরফ্যাশনের সামরাজ মাছ ঘাটের উদ্দেশ্যে সড়কপথে যাত্রা শুরু করে বিকালে পৌঁছাই। সেখানে আগে থেকে রাখা ভেলুমিয়া ইউনিয়নের নিরব মাঝির ট্রলারে করে সন্ধ্যায় মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মাছ শিকার শুরু করি। মাছ ধরার ঝাল অর্ধেক তোলার পর হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের ট্রলারটি উল্টে যায়। এ সময় আমরা সবাই ট্রলারের ভেতরে কেবিনে অবস্থান করছিলাম। একপর্যায়ে সেখান থেকে অমি (সিরাজ মাঝি), জাহাঙ্গীর হাওলাদার ও মজিদ মাঝি জীবিত বের হন। দুদিন ধরে ট্রলারে থাকা রশির মাধ্যমে নিজের শরীর বেঁধে রেখে কোনো রকমে প্রাণ বাঁচাই। পরে ট্রলারে থাকা প্লাস্টিকের সাহায্যে ভাসতে ভাসতে সাগরের এক প্রান্তে পৌঁছালে অন্য একটি মাছ ধরার ট্রলার আমাদের উদ্ধার করে চরফ্যাশনের সামরাজ ঘাটে নামিয়ে দেয় এবং বাকি ৮ জেলে কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তারা সবাই ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের কুঞ্জপট্টি এলাকার বাসিন্দা।

এদিকে ট্রলারডুবির ঘটনার পর পরিবারের পক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়া হলেও মাছের আড়তদার নয়ন তাদের কোনো সহায়তা করেননি। ট্রলারডুবির ঘটনা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে অন্য জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ট্রলারমালিক নিরবের মা মানছুরা বলেন, ‘কৃষি ব্যাংক থেকে লোন করে ১৬ লাখ টাকা দিয়া বোট করে সাগরে গেছে মাছ ধরে দোন শোধ করব আশা কইরা। এখন আমার ছেলে গেছে, নাতি গেছে, বোট গেছে। এখন আমার সব শেষ। কে আমার সংসার চালাইব। কে আমোগোরে খাওয়াইবো। এক লগে আমার দুইটা পরিবার বিধবা হইয়া গেলে নাতিরা এতিম হইয়া গেল। এখন দুজনের লাশ পাইলে ঘরের দুয়ারে মাটি দিতে পারতাম।’

নিখোঁজ সিরাজ ব্যাপারীর স্ত্রী জান্নাত বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘শনিবার বিকালে আমার স্বামীর সঙ্গে তার ছোট মেয়ের সর্বশেষ কথা হয়। তারপর আর কোনো কথা হয় না। এখন আমার ছোট ছোট ২টা ছেলেমেয়ে এতিম হয়ে গেছে। এখন ওদের কে দেখব।’

নিখোঁজ জেলের তথ্য নিশ্চিত করে ভেলুমিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মহসিন খাঁ বলেন, ভেদুরিয়া ইউনিয়ন থেকে ১১ জন জেলে সাগরে মাছ শিকার করতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে। সেখান থেকে তিন জেলে জীবিত ফেরত আসেন এবং বাকিরা এখনো নিখোঁজ আছেন। এ সময় তিনি নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধার করার দাবি জানান।

এদিকে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন অপারেশন কর্মকর্তা লেফট্যানেন্ট সাফকাত জানান, ‘আমরা বঙ্গোপসাগরে ৮ জেলে নিখোঁজের খবর পেয়েছি। আমারা খোঁজখবর নিচ্ছি। নিখোঁজদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে ভোলা জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী জানান, ‘আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারের জন্য কোস্টগার্ডকে জানানো হয়েছে। তারা উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।’ ঝড়ের কবলে পড়া নিখোঁজ ও জীবিত ফিরে আশা জেলে পরিবারকে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close