নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ আগস্ট, ২০২১

প্রজ্ঞাপন জারি

কারখানা খোলা রেখে বিধিনিষেধ বাড়ল

করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে দেশে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের সময়সীমা আরো পাঁচ দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে বলা হয়, আগের সব বিধিনিষেধের অনুবৃত্তিক্রমে দুটি শর্ত যুক্ত করে ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে ১০ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত বিধিনিষেধের সময়সীমা বর্ধিত করা হলো। শর্ত দুটি হলো শিল্প, কল-কারখানা এই বিধিনিষেধের আওতায় পড়বে না। ফলে আজ থেকে শিল্পকারখানা খুলছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে অভ্যন্তরীণ রুটেও বিমানও। এ ছাড়া আগামী বুধবার থেকে সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

সেদিন থেকে ৩৮ জোড়া আন্তনগর এবং ১৯ জোড়া মেইল ও কমিউটার ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জনিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে। টিকিট শুধু অনলাইনে পাওয়া যাবে এবং কাউন্টার বন্ধ থাকবে। তবে কঠোর বিধিনিষেধ ১০ আগস্টের পর বর্ধিত করা হলে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। এবারও ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হবে, যার পুরোটাই দেওয়া হবে অনলাইনে।

এর আগে মঙ্গলবার করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে করণীয় নির্ধারণে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের এক সভায় লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

সেদিন মন্ত্রী জানান, আগামী বুধবার থেকে দোকানপাট ও অফিস-আদালত খুলে দেওয়া হবে, সীমিত পরিসরে চলবে গণপরিবহনও। তবে এর আগেই সব কর্মজীবী মানুষকে করোনার টিকা গ্রহণ করতে হবে।

করোনাভাইরাস মহামারির দেড় বছরে এখনই সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পার করছে বাংলাদেশে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ১ জুলাই দেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হলেও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে কোরবানির ঈদের সময় ৯ দিন তা শিথিল করা হয়েছিল। ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই থেকে আবার কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হলেও এর মধ্যে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। সরকার আগে ঘোষণা দিয়েছিল, ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধে শিল্পকারখানা, সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের অফিস আদালত বন্ধ থাকবে।

ঈদের পর এবারের কঠোর বিধিনিষেধ ‘কোনোভাবে শিথিল করা হবে না’ বলে সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হলেও শিল্পকারখানা মালিকদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী কারখানা খুলে দেওয়া হয়। এদিকে দিন যত যাচ্ছে, রাস্তাঘাটে মানুষও তত বাড়ছে, জীবিকার তাগিদে মানুষও আর বিধিনিষেধ মানতে চাইছে না।

কঠোর লকডাউনে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। একেতো বর্তমান সময়েই আয় কমে গেছে, তার ওপর নতুন করে আরো পাঁচ দিনের বিধিনিষেধকে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলেই মনে করছেন দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর লকডাউনের সময়ে নির্দিষ্ট নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া সব দোকানপাট বন্ধ। বিভিন্ন পয়েন্টে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের টহলের পাশাপাশি চেক পোস্টে নজরদারি চলছে। ঘরের বাইরে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ তেমন একটা বের হচ্ছেন না। ফলে কাজ হারিয়েছেন অসংখ্য দিনমজুর।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কড়াকড়ি লকডাউনের ফলে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন বিপাকে। বন্ধ হয়ে গেছে শ্রমের কেনাবেচা। প্রতিদিন ভোরবেলা বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রম বিক্রির জন্য যারা আসতেন, তারাও এখন বিপাকে।

একইসঙ্গে নগরীর রিকশাচালক বা গৃহশ্রমিক ও নির্মাণ শ্রমিকরাও দিন কাটাচ্ছেন বিভিন্ন অসুবিধার মধ্যে দিয়ে। কঠোর লকডাউনে আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় সংসার চালানোয় প্রায় দায় হয়ে পড়েছে তাদের।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় রিকশাচালক আবদুল গণি বলেন, আগে এই এলাকায় রিকশা চালিয়ে দিনে ১ হাজার ৫০০ টাকাও ইনকাম করছি। কিন্তু এখন ৫০০ টাকাও হয় না সারা দিনে। অনেকে ভাবেন লকডাউনে তো রিকশাচালকদের ইনকাম সবচেয়ে বেশি, কিন্তু আসলে তা না। মানুষ বাইরে আসেন না, ফলে ভাড়াও পাওয়া যায় না। যে দু-একজন আসেন, তারাও ভাড়া নিয়ে অনেক দরদাম করে। সবাই কষ্টে আছে। আর নতুন করে আবার লকডাউন বাড়ানো যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকাতেই একটি হোটেলে দিন ৩০০ টাকা হাজিরায় কাজ করতেন মধ্যবয়সি জিয়ারত আলী। তবে এখন কাজ হারিয়ে তিনিও আছেন বেশ বিপাকে। তিনি বলেন, আগে যা ইনকাম করতাম, কোনো রকমে সংসার চলে যেত। এখন হোটেল বন্ধ, ইনকামও বন্ধ। বউ একটা বাড়িতে কাজ করত, করোনার জন্য সেখান থেকেও কাজ চলে গেছে। কোনো উপায় না দেখে শেষমেশ এখন এই হাসপাতালেই দিন কাটাই। বিভিন্ন রোগীর দেখাশোনা ও রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের সাহায্য করি। তারা খুশি হয়ে যা দেয়, তাই দিনে কোনো রকমে দিন চলে।

এরকম পথে পথে ভোগান্তি আর হতাশা নিয়ে এই কঠোর লকডাউনে দিন কাটাচ্ছেন আরো অনেকে। ঢাকায় থাকলে অনেক খরচ, তাই অনেক কষ্ট করে এই লকডাউনের মধ্যেও ভেঙে ভেঙে গ্রামে ফিরেছেন খেটে খাওয়া মানুষ। জীবন-জীবিকার বড় ধরনের হুমকি হয়ে এসেছে এই ভাইরাসটি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close