নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ জুন, ২০২১

বাপসের সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা

ঈদের আগে বেতন পরিশোধ না করলে কর্মবিরতি

ঈদুল আজহার আগে বকেয়া বেতন পরিশোধসহ অন্য দাবি মানা না হলে আগামী ২৫ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পৌর কর্মচারীরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে গতকাল শনিবার এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপস) নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি আবদুল আলীম মোল্যা। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিশেনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাত্তার, ঢাকা বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ম ই তুষার, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা সরকার দলিল উদ্দিন, সহসভাপতি আখতার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন দত্ত প্রমুখ।

পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বৈষম্যের শিকার উল্লেখ করে আবদুল আলীম মোল্যা বলেন, বেতন-ভাতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন, ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বেতন-ভাতা খাতে ইউনিয়ন পরিষদের আদলে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ অবিলম্বে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। ঈদুল আজহার আগে শতভাগ বকেয়া বেতন-ভাতাসহ অবসর-ভাতা পরিশোধ না করলে আগামী ২৫ জুলাই থেকে সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলোতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি দিয়ে স্ব স্ব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।

তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের ৫১(১) অনুচ্ছেদে পৌরসভাগুলোকে প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু সরকারের অন্যান্য প্রশাসনিক ইউনিটের কর্মচারীদের সঙ্গে সীমাহীন বৈষম্য থাকার কারণে পৌরসভার কর্মচারীদের দুঃখ-দুর্দশা চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক পৌর কর্মচারীদের রাত-দিন পরিশ্রমের কারণে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। অথচ পৌর কর্মচারীরা বেতন না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশের ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ পৌরসভায় ২ থেকে ৭০ মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। এ পর্যন্ত ১০২৬ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর প্রায় ৩৮৫ কোটি টাকা অবসরকালীন ভাতা বকেয়া রয়েছে।

সংগঠনের নেতারা জানান, ৩২৯টি পৌরসভায় ১১ হাজার ৬৭৫ জন পৌর কর্মচারীদের প্রায় ৮৭৫ কোটি টাকা বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। নির্বাচন-পরবর্তী নতুন মেয়ররা পুরাতন মাস্টাররোল কর্মচারীদের ছাঁটাই করে অর্থের বিনিময়ে নতুন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া এবং কর্মকর্তাদের জিম্মি করে বেতন বকেয়া রেখে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে রাজস্ব তহবিল থেকে বিধিবহির্ভূত ব্যয় করা অধিকাংশ মেয়রের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে বেতন-ভাতা না পেয়েও কর্মচারীদের বাধ্য করে মানহানিকর অতিরিক্ত কাজ করানোর মাধ্যমে জীবনযাপন করতে হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেতন-ভাতাহীন কর্মচারীদের অফিস চলাকালীন রিকশা চালাতে কিংবা মুদি দোকান দিয়ে জীবনযাপন করতে হয়। অবসরকালীন ভাতা না পেয়ে কোনো কোনো কর্মচারীকে অন্যের সাহায্যে বেঁচে থাকতে হয়েছে যাকে আমরা ভিক্ষা বৃত্তিও বলতে পারি। করোনাকালীন কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণ দেওয়াসহ সরকারের সব নির্দেশনা মেনে কাজ করলেও কিন্তু তাদের নিজের ঘরে খাবার নেই অথচ ত্রাণ নিতে পারে না। সংবাদ সম্মেলনে নেতারা ৮ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। সেগুলো হলো ১. উচ্চ আদালতের আদেশ দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। ২. পৌরসভাগুলো আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন না করা পর্যন্ত জাতীয় বাজেটে পৌরসভার কর্মচারীদের বেতন খাত নং-৩৬৩১১০১ এ আর্থিক অনুদান বৃদ্ধি করে ইউনিয়ন পরিষদের মতো আসছে সংশোধিত বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দসহ প্রতি বছর এ বরাদ্দ অব্যাহত রাখতে হবে। ৩. স্থানীয় সরকার বিভাগের গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নকল্পে সব বকেয়া বেতন-ভাতা ও অবসর কালীন ভাতা স্থানীয় সরকার বিভাগ গঠিত কমিটির প্রস্তাবিত ৭৯২ কোটি টাকা বেতন খাতে বরাদ্দ দিতে হবে। ৪. তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মরহুম জিল্লুর রহমানের ঘোষণা বাস্তবায়নকল্পে কেন্দ্রীয়ভাবে অবসরকালীন ভাতা দিতে হবে। ৫. সব পৌরসভা বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে রাজস্ব খাত থেকে দরপত্র আহ্বান বা অন্যান্য ব্যয় যাতে করতে না পারে সেজন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের তদারকি জোরদার করতে হবে। ৬. রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য এ সংক্রান্ত কমিটিতে জনপ্রতিনিধির পরিবর্তে কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে। ৭. স্থানীয় সরকার বিভাগ আয়-ব্যয় সংক্রান্ত বিষয়ে সব পৌরসভাকে জবাবদিহির আওতায় আনার ব্যবস্থা করে তদারকি জোরদার করতে হবে। ৮. সব ধরনের নিয়োগে স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধি করা। যাতে কর্মকর্তারা অনৈতিক কার্যকলাপে বাধা দিলে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য কর্মকর্তাদের যোগদান গ্রহণ ও অবমুক্তির বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close