বিনোদন প্রতিবেদক

  ১৪ এপ্রিল, ২০২১

চলে গেলেন সুরস্রষ্টা ফরিদ আহমেদ

না ফেরার দেশে চলে গেলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সুরস্রষ্টা, সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ। গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।

ফরিদ আহমেদ বেশকিছু দিন ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গত ১১ এপ্রিল তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় এ গুণী ব্যক্তিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ফেরা হলো না ফরিদ আহমেদের।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দেশের সংগীত, নাট্য ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকেই। উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা, দেশ বরেণ্য শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, কুমার বিশ^জিৎ, তপন চৌধুরী, সামিনা চৌধুরী, ফাহমিদা নবী, মমতাজ, এসআই টুটুল, পলাশ, বাপ্পা মজুমদার, আঁখি আলমগীর, দিনাত জাহান মুন্নী, দিঠি আনোয়ার, কনা, মুহিন, লুইপা, লিজা, চম্পা বণিক, ইউসুফ, তিন্নী, অনন্যা, স্মরণ’সহ আরো অনেকেই গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন ফরিদ আহমেদের অকাল মৃত্যুতে।

রুনা লায়লা বলেন, ‘বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই সংগীতের একজন নিবেদিত মানুষকে হারাল। শুধু তাই নয়, সংগীত পরিবারের মানুষের জন্য যার ছিল সারাক্ষণ ভাবনা। তার এই অকাল প্রয়াণে আমাদের জন্য সত্যিই অনেক ক্ষতির হয়ে গেল। ফরিদের সুরে আমি ‘অন্তবিহীন এই পথচলা’ গানটি গেয়েছিলাম। গানটির কথা এবং সুর আমার কাছে ভীষণ প্রিয়। সেই প্রিয় ফরিদই অন্তবিহীন পথে চলে গেল।’

ফরিদ আহমেদ ‘তুমি রবে নীরবে’ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। স্কুলজীবনে বন্ধু বায়েজীদের কাছে প্রথম গীটারে হাতেখড়ি হয় তার। আর তার পরপরই ফিরোজ সাঁইয়ের হাত ধরে পেশাগতভাবে সংগীতাঙ্গনে ফরিদ আহমেদের প্রবেশ ঘটে। ফিরোজ সাঁইয়ের ব্যান্ডদল ‘স্পন্দন’-এ তখন ফরিদ বেজ গীটার বাজাতেন। যখন ফিরোজ সাঁই ‘স্পন্দন’ ছেড়ে দিলেন তখনো তার সঙ্গে থেকে তিনি গীটার বাজাতেন। তাই পেশাগতভাবে সংগীতাঙ্গনে নিজের সম্পৃক্ততার কথা বলতে গিয়ে ফরিদ আহমেদ কৃতজ্ঞ ছিলেন ফিরোজ সাঁইয়ের কাছে। কারণ তিনিই ফরিদ আহমেদকে শুরুতে শেখ সাদী খান, সেলিম আশরাফ, জালাল আহমেদ, শাহনেওয়াজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে তিনি গীটার বাজাতেন। কখনো বেজ গীটার আবার কখনো রিদম গীটারও বাজাতেন। ফরিদ আহমেদের গুরু সমতুল্য সংগীত পরিচালক সুবল দাস, সত্য সাহা, আলম খান, খন্দকার নূরুল আলম, আবদুল আহাদ ও আলাউদ্দিন আলী। তাদের সঙ্গে তিনি গীটার বাজাতেন। তবে সুবল দাস, আনোয়ার পারভেজ, আলম খান, আলী হোসেনের সঙ্গে তিনি সংগীত আয়োজনেরও কাজ করতেন।

‘বেদের মেয়ে জোছনা’ খ্যাত সংগীত পরিচালক আবু তাহেরের সঙ্গে বসে সুরও করতেন ফরিদ আহমেদ। সুর করার ব্যাপারে তাকে উৎসাহ দিতেন চিরসবুজ কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। যে কারণে ফরিদ আহমেদ তার গানেরই প্রথম সুর করেন। লিটন অধিকারী রিন্টুর লেখা ‘তুমি ছাড়া আমি যেন মরুভূমি’। প্রথম গানের সুর করেই দারুণ প্রশংসিত হন ফরিদ আহমেদ। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত বহু গানের সুর করেছেন তিনি। করেছেন সংগীতায়োজনও। তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হানিফ সংকেত’র ইত্যাদি’র টাইটেল সং ‘কেউ কেউ অবিরাম চুপি’। এটি লিখেছেন লুৎফর রহমান রিটন। এছাড়া কুমার বিশ্বজিৎ এর ‘মনেরই রাগ অনুরাগ’, ‘আমি তোরই সাথে ভাসতে পারি মরণ খেয়ায় একসাথে’, রুনা লায়লার কণ্ঠে ‘ফেরারী সাইরেন’, রুনা সাবিনার কণ্ঠে ‘দলছুট প্রজাপতি’, চ্যানেল আইয়ের ‘আজ জন্মদিন’, খুদে গান রাজ’র ‘থিম সং’, ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ এর থিম সং, সেরা কণ্ঠের থিম সং, সুমী শবনমের জনপ্রিয় গান ‘ললিতা, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে সিনেমার গান ‘তুমি আমার জীবনের গহীনেসহ আরো অনেক জনপ্রিয় গানের সুর¯্রষ্টা তিনি। প্রয়াত নূর হোসেন বলাইয়ের ‘নিষ্পত্তি’ চলচ্চিত্রের প্রথম সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন তিনি।

ফরিদ আহমেদের বাবা লাল মিয়া হাজরা, মা মনোয়ারা বেগম। তার স্ত্রী শিউলী আক্তার ও দুই মেয়ে দুর্দানা ও লীয়ানা।

ফরিদ আহমেদের ভাতিজা নাট্যনির্মাতা দীপু হাজরা জানান, গতকাল বাদ আসর কলাবাগান আইন কলেজ মাঠে ফরিদ আহমেদের নামাজে জানাজা শেষে রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close