টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

  ০৪ মার্চ, ২০২১

লৌহজং উদ্ধারে মামলার বাগড়া

একটি মামলার কারণে টাঙ্গাইলে লৌহজং নদ দখলমুক্ত করার প্রশাসনিক তৎপরতা মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছে। নদতীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর একটি সাততলা অবৈধ স্থাপনার একাংশ ভেঙে ফেলায় সেই ভবন মালিকের ক্ষতিপূরণ মামলার পর এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা আইনি বিষয়টি মোকাবিলা করেই নদ দখলমুক্ত করার অভিযান অব্যাহত রাখবেন।

মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ১৪ জনকে। তাদের মধ্যে জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র, দৈনিক লোককথা পত্রিকার সম্পাদক এবং লৌহজং নদ, পরিবেশ রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রতন সিদ্দিকী প্রমুখ।

জমশের আলী জমিটির বৈধ মালিক দাবি করে বলেন, আমার জমিটি নদের জায়গা মনে করে আমার সাততলা ভবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন ভবনের অবশিষ্ট অংশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভবনটি না ভাঙতে ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট একটি আদেশ দেয়। কিন্তু আদেশ অমান্য করে আমার ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে আমি একটি ক্ষতিপূরণ মামলা করি। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৩০ মার্চ। জমির বৈধতা দাবি করে আরেকটি মামলা করি। আইনের যে ধারায় আমার স্থাপনা ভাঙা হয়েছে সেই আইন এই নদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টাঙ্গাইল পৌর এলাকার ভেতর দিয়ে বয়ে চলা একসময়ের খরস্রোতা লৌহজং নদ এখন মরা খাল। নদটি শুধু শহরের অংশের প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় স্থাপনা ও ভবন নির্মাণ করে বেদখল করে আছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। মৃতপ্রায় নদটিকে উদ্ধারের জন্য ২০১৬ সালে টাঙ্গাইলের সবস্তরের মানুষ আন্দোলনে নামে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভূমি অফিস যৌথভাবে এর সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রম শুরু করে। একই সঙ্গে সচেতনতা সৃষ্টি, পরামর্শ, সভা, সেমিনার, প্রচার, লিফলেট বিতরণ, আলোকচিত্র প্রদর্শনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দাবি জানায়।

নদী, খাল-বিল, জলাশয়, বন ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রতন সিদ্দিকী বলেন, ‘২০১৬ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে টাঙ্গাইলের সবস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে লৌহজং নদ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। গত বছর নদতীরের একটি ভবনকে অবৈধ বলে চিহ্নিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন থেকে ভবন মালিককে নোটিস করা হয় স্থাপনা সরিয়ে নিতে। কিন্তু ভবন মালিক তা না করায় প্রশাসন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভবনের অবৈধ অংশ ভেঙে দেন। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা পরিবেশবাদীরা সরব থাকায় আমার বিরুদ্ধেও ক্ষতিপূরণ মামলা করা হয়েছে।’

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নদী আইনের ওপর সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় আছে। যদি সিএস রেকর্ড ব্যক্তি মালিকানা থাকে, তবু এর ৩০ ফিটের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এরই আলোকে নদতীরের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমরা যথাযথ নিয়ম ও বিধি মেনেই তৎপরতা চালিয়েছি। কোনো ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্ররোচিত হইনি। মামলা মোকাবিলার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। আদালত যে ফয়সালা দেবে আমরা সেটাই মেনে নেব।’

টাঙ্গাইল পৌরসভার সদ্যনির্বাচিত মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীর প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমি সবেমাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। লৌহজং নদ উদ্ধার বিষয়ে আমরা সবাই জানি। তবে মামলার বিষয়টি আমি অবগত নই। মামলার বিষয়ে আইনগতভাবে যা করণীয় আমরা তাই করব।’

জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘মামলার জবাব আমরা আইনগতভাবেই দেব। যেকোনো দখল, দূষণের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। দখল-দূষণ নিয়ে যারাই অপতৎপরতা চালাবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অ্যাসি ল্যান্ডসহ সব কর্মকর্তাকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close