চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ০১ মার্চ, ২০২১

সেচযন্ত্রের অনুমোদন পাননি ১৭০ কৃষক

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএমডিএর বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরকারিভাবে সেচযন্ত্রের অনুমোদনপত্র না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন সেখানকার চাষিরা। চলতি বোরো মৌসুমে ধান চাষের আগে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে প্রতিদিন ধরনা দিয়েও কৃষকরা তাদের কাক্সিক্ষত অনুমোদনপত্র পাননি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগÑ উপজেলা সেচ কমিটি বরাবর তারা ছয় থেকে সাত মাস আগে আবেদন করেছেন। অনুমোদন পেতে সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে মাসের পর মাস সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে ঘুরছেন। তবুও মিলছে না অনুমোদনপত্র। ফলে সেচ পাম্প স্থাপন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। চাঁপাইনবাবগঞ্জে দিন দিন বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রের চাহিদা বাড়ছে। তবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সেচযন্ত্রের অনুমোদন পেয়ে পুরোনো প্রথা অনুযায়ী ডিজেলচালিত মেশিনেই সেচ দিচ্ছেন তারা।

জানা গেছে, উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবেদনটি পাওয়ার পর সেচ কমিটির সদস্য সচিব বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) প্রকৌশলীকে সরেজমিনে তদন্তের নির্দেশ দেন। তবে বিএমডিএ এসব আবেদন তদন্ত না করেই কৃষকদের দিনের পর দিন ঘুরাচ্ছেন। কৃষকরা ডিজেলচালিত মেশিনে ধান চাষ করতে গিয়ে একদিকে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ছেন। অপরদিকে, ডিজেলচালিত মেশিনে তারা চাহিদা অনুযায়ী জমি চাষ করতে পারছেন না।

অফিসের একটি সূত্র জানায়, উপজেলায় নতুনভাবে অগভীর সেচযন্ত্রের জন্য প্রায় ২০০ কৃষক আবেদন করেছেন। আবেদনের পরিপ্র্রেক্ষিতে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ৩০টি অগভীর সেচযন্ত্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাকি আবেদনকারীদের কেন অনুমোদন দেওয়া হয়নিÑ সেটি তাদের অবহিত করা হয়নি। চাষিরা বলছেন, তাদের আবেদন সরেজমিনে তদন্ত করেনি বিএমডিএ। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কী প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে সেটি অবগত নন তারা।

১৬ ফেব্রুয়ারি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অফিস কক্ষটি খোলা। কার্যালয়ে সহকারী প্রকৌশলী আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম নেই। তবে এক নারী কর্মচারী অফিস কক্ষে বসতে বলেন। এ সময় তার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে অফিসে অপেক্ষা করতে বলেন। ওইদিন তার কার্যালয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও তিনি আসেননি। এরপর একাধিকবার তার ব্যবহৃত নম্বরে ফোন করলেও রিসিভ করেননি তিনি। এই দফতরে নতুন সেচযন্ত্রের জন্য আবেদন করা কৃষকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে গত বুধবার দুপুরে ফোন করা হলেও রিসিভি করেননি সহকারী প্রকৌশলী আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম।

উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ইলিশমারির চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি দেবিনগর মৌজায় নতুন অগভীর সেচযন্ত্রের জন্য ৬ মাস আগে উপজেলা সেচ কমিটি বরাবর নির্ধারিত ফরমে আবেদন করেছেন। আবেদনটি তদন্তের জন্য এ দফতরে (বিএমডিএ) পাঠিয়েছে। তবে এ দফতরে এসে তার আবেদনটির কী অবস্থা তা তিনি জানতে পারছেন না। তার আবেদনটি কেন তদন্ত হচ্ছে না জানতে চাইলেও কোনো সদুত্তর দিচ্ছেন না কর্মকর্তারা। সহকারী প্রকৌশলী তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন বলে অভিযোগ করেন কৃষক নজরুল ইসলাম। তিনি আরো বলেন, তার স্কিমের আওতায় রয়েছে ২০ বিঘা জমি। সেচযন্ত্রের অনুমোদন পেলে প্রতি বিঘা জমি চাষে প্রায় ৩ হাজার টাকা ব্যয় কমত। সেচযন্ত্রের অনুমোদন না পাওয়ায় তাকে ডিজেলচালিত মেশিনে জমি চাষ করতে হবে বলে জানান তিনি।

উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের কালিনগর ছাভানিয়া গ্রামের কৃষক আকবর আলী বলেন, নতুন সেচযন্ত্র আবেদনের পর বিএমডিএর কর্মকর্তাদের কথা মতো ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমা দিয়েছেন। তারপরও তার আবেদনটি তদন্ত করেননি বিএমডিএর কর্মকর্তারা। ফলে সেচযন্ত্রের অনুমোদন না পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তিনি আরো বলেন, তার স্কিমের আওতায় চকচুনাখালি মৌজায় ডিজেলচালিত মেশিনে ১০ বিঘা জমি চাষ করছেন। সেচযন্ত্রের অনুমোদন পেলে প্রায় ২০ বিঘা জমি চাষ করতে পারনে। এতে তার ধান উৎপাদন খরচ বাঁচত। ছয় মাসেও তার আবেদন তদন্ত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

উপজেলার চন্দ্রনারায়ণপুরের আবদুর রহমান বলেন, চরবাগডাঙ্গা মৌজায় ডিজেলচালিত মেশিনে জমি চাষ করছেন। ছয় মাস আগে অগভীর সেচযন্ত্রের আবেদন করেন। তার আবেদন এখন পর্যন্ত তদন্ত করেনি বিএমডিএ।

এদিকে, তদন্ত না করে সেচযন্ত্রের অনুমোদন পাবেন না বলে জানিয়েছেন বিএমডিএ’র সহকারী প্রকৌশলী। তিনি আরো বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষে ৬৫ লিটার ডিজেল খরচ হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪৫০০ টাকা। এদিকে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রে প্রতি বিঘা ধান চাষে ব্যয় হবে ১৫০০ টাকা। সেচযন্ত্রের অনুমোদন না পাওয়ায় তাকে প্রতি বিঘা জমিতে ৩০০ হাজার বেশি খরচ করে ধান চাষ করতে হবে তাকে। এছাড়াও অন্যান্য আবেদনকারীর অভিযোগ একই।

এ প্রসঙ্গে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চাঁপাইনবাবগঞ্জ রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে যেখানে-সেখানে গভীর অগভীর নলকূপ স্থাপনের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নেমে যাচ্ছে। ভূতলের পানির সুষ্ঠু বণ্টনের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট দূরত্বে গভীর অগভীর সেচযন্ত্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেচযন্ত্র অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি উপজেলা সেচ কমিটির। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নয়। বিএমডিএর বিরুদ্ধে কৃষকদের আবেদন তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, অনেক সময় কৃষকদের ফোন করে পাওয়া যায় না। তাদের না পাওয়ায় সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করা সম্ভব হয় না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close