প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

তিন মাসে যৌন নিপীড়নের শিকার ২৩৫০০ শিশু

দেশে চলমান কোভিড মহামারির মধ্যেও আশঙ্কাজনক বেড়েছে শিশু নির্যাতনের ঘটনা। গত ৩ মাসে সাড়ে ২৩ হাজার শিশুকে যৌন-নিপীড়নের তথ্য-প্রমাণ সিআইডিকে দিয়েছে মার্কিন সংস্থা ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেন (এনসিএমইসি)। প্রাপ্ত তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে এরই মধ্যে এক শ ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে সিআইডি। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে দুই ঘটনার অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।

এনসিএমইসি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। তারা শিশু যৌন নির্যাতন বন্ধ, শিশু পর্নোগ্রাফি নির্মূলসহ শিশুদের অধিকার-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধন করা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট তাদের নেটওয়ার্কে শিশুদের যৌনকাজে ব্যবহার, যৌন নিপীড়ন-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য এনসিএমইসিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জানায়। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এনসিএমইসির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিআইডি। সেখান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ডিসেম্বর থেকেই অভিযান চালাচ্ছে তদন্ত সংস্থাটি।

গোয়েন্দারা বলছেন, শিশু যৌন-নিপীড়ন, এর ভিডিও ধারণ, ছড়ানো বা সংরক্ষণ করলেই বিশেষ প্রযুক্তিতে তথ্য-প্রমাণ চলে যাই সংস্থাটির কাছে। আর সেই তথ্য-প্রমাণ তারা পাঠাই সিআইডির কাছে।

২০২০ সালের আগস্টে রাজধানীর তুরাগে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ১১ বছরের এক কন্যাশিশু। বেড়াতে এলে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে নিপীড়ন করেন ফুফা, আর সে দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন ফুফু। সেই ভিডিও গুগলের মাধ্যমে যায় যুক্তরাষ্ট্রের এনসিএমইসির কাছে। তারা সেটি পাঠায় সিআইডির কাছে। পরে ২৯ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় সেই দম্পতিকে।

বরিশালে ২০১৯ সালে এক ছেলেশিশুকে যৌন নিপীড়ন করে সেই ভিডিও নিজের ফোনেই রাখে এক তরুণ। একইভাবে প্রায় দেড় বছর পর গ্রেপ্তার হয় ওই অভিযুক্ত।

সিআইডির বিশেষ সুপার রেজাউল মাসুদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গত তিন মাসে সাড়ে ২৩ হাজার নিপীড়নের তথ্য সিআইডিকে দিয়েছে সংস্থাটি। যেগুলোর মধ্যে বর্তমানে ১০০টি ঘটনার তদন্ত চলছে।

তবে সিআইডির সাড়ে ২৩ হাজার কনটেন্টের মাত্র দুটির সুরাহা করতে পারাকে যতেষ্ট মনে করছেন না দেশের অপরাধ বিশ্লেষকরা। এ বিষয়টি উল্লেখ করে অপরাধ বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, এসব ঘটনা তদন্তে প্রযুক্তি সক্ষমতা থাকা পর্যাপ্ত লোকবল নিয়ে আলাদা ইউনিট গঠন করতে হবে।

এ ছাড়া অনেক পরিবার জেনেও যৌন নিপীড়নের ঘটনা আড়াল করে। তাই এমন ঘটনা বন্ধ করতে তাদের আরো সতর্ক থাকতে বলছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এবং পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০ বলবৎ থাকার পরও এসব আইনে হওয়া মামলায় খুব কমই দোষীদের সাজা হয়।

সরকারি ৯টি ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের একটির হিসাবে প্রায় ১১ হাজার নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার মধ্যে মাত্র ১৬০টি ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা সম্ভব হয়েছে। চূড়ান্ত বিচারে মাত্র ১ শতাংশ ভিকটিম নির্যাতনের ন্যায়বিচার পেয়েছেন। অর্থাৎ ৯৯ শতাংশ ঘটনার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়নি, যা আইনের কার্যকর প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে খুবই উদ্বেগজনক একটি চিত্র।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১১ মাসে ২০ হাজার ৭১৩ জন নারী ও শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

এনসিএমইসির তথ্য মতে, শিশুদের দিয়ে যৌনদৃশ্যে কাজ করানো, তাদের যৌন নিপীড়নের ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং তা আদান-প্রদানের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশের আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে ২০১৯ সালে চাইল্ড পর্নোগ্রাফি আদান-প্রদান হয়েছে ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪২টি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close