কুমিল্লা প্রতিনিধি

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২১

ভাষাসৈনিক আলী তাহের মজুমদার মারা গেছেন

কুমিল্লার ভাষাসৈনিক আলী তাহের মজুমদার (১০৬) আর নেই। গতকাল শনিবার সকালে কুমিল্লার সদর দক্ষিণের চাঁনপুরে নিজ বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া এই বিপ্লবী বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।

আলী তাহের মজুমদার তার সংগ্রামী জীবনে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ১৯১৭ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম চারু মজুমদার ও মা সাবানী বিবি। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে এবং দুই মেয়েসহ অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।

তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর দক্ষিণ উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম সেরোয়ার জানান, বার্ধক্যজনিত কারণে গতকাল শনিবার সকালে আলী তাহের মজুমদার মৃত্যুবরণ করেন। বিকাল ৫টায় জানাজা শেষে চাঁনপুরে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তিনি আরো জানান, আলী তাহের মজুমদারের মৃত্যুর সংবাদ শুনে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর, কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদসহ উপজেলা প্রশাসন, আওয়ামী লীগের নেতা ও মুক্তিযোদ্ধারা মরহুমের বাড়িতে ছুটে যান।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আলী তাহের মজুমদার চাঁনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর কুমিল্লা জিলা স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ছাত্রাবস্থায় ১৯৩৫ সালে কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অষ্টম পাঞ্জাব আর্মিতে যোগ দেন। তবে সাত থেকে আট মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ছুটিতে এসে আর ফিরে যাননি। তখন তার বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। তাকে বাঁচাতে কুমিল্লার তখনকার জেলা প্রশাসক আবদুল মজিদ ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের মোজাফ্ফর হোসেন ভূঁইয়া ফেনীতে জাপানি বাহিনীর বোমায় আলী তাহের মজুমদার নিহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেন। ওই সময়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর গুপ্তচর হিসেবে কাজ শুরু করেন আলী তাহের মজুমদার। কুমিল্লা ও ফেনীতে বিলি করেন সুভাষচন্দ্র বসুর লিফলেট। দেশ ভাগের আগে ১৯৪৬ সালে নোয়াখালীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলে কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবিরোধী কমিটি গঠন করেন তিনি। ১৯৪৬ সালের এক দিন কলকাতার এক চা দোকানে আড্ডা দেওয়ার সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয় আলী তাহের মজুমদারের। বঙ্গবন্ধুর মুখেই আলী তাহের জানতে পারেন বাংলা ভাষাভাষী এলাকা নিয়ে বাংলাদেশ করার কথা। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ বোসের পরিকল্পিত বাংলা ভাষাভাষী এলাকা নিয়ে স্বাধীন সরকার গঠনের জন্য কাজও করেছেন আলী তাহের। দেশ ভাগের পর ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের গণপরিষদে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে অন্যতম ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি তোলেন কুমিল্লার গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত। তখন ভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আলী তাহের মজুমদার তখন আরএসপি (রেভল্যুশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টি) করতেন। ওই অফিসে বসে ভাষা আন্দোলনের লিফলেট-পোস্টার লিখে বিলি করতেন। কুমিল্লা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও বিপ্লবী অতিন্দ্র মোহন রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চালাতেন আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মিছিলে গুলি হলে তা অতীন রায়ের মাধ্যমে জানতে পারেন। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে কুমিল্লার মানুষ। আলী তাহের মজুমদার মিছিল করার সময় কুমিল্লা শহরের রাজগঞ্জে গ্রেপ্তার হন। পরদিন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগেও দুই দফা গ্রেপ্তার হন আলী তাহের মজুমদার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close