বিশেষ প্রতিবেদক, রাজশাহী

  ১৭ জানুয়ারি, ২০২১

রাজধানীর কলাবাগানে ধর্ষণকান্ড

দিহানের বাবার সম্পদের পাহাড়

ছিলেন জেলা রেজিস্ট্রার। তারপরও পৈতৃক জমি বাদেই গড়েছেন প্রায় ১৫০ বিঘা সম্পত্তি। এ ছাড়াও রয়েছে রাজশাহী শহরের অভিজাত দুই এলাকায় দুটি ভবন। তবে তার প্রতিপত্তি বা ক্ষমতার প্রভাব এতটাই যে, তার দ্বারা কোনো অনিয়ম বা অন্যায় কাজ সংঘটিত হলেও এলাকার সাধারণ জনগণ কোনো প্রতিবাদ করতেন না। শুধু তাই নয়, এই অবসরপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পরিবারটির বহুমুখী প্রভাবের কারণে মুখ খুলতেও ভীত গ্রামবাসী। আর অবসরপ্রাপ্ত এই রেজিস্ট্রারের স্ত্রী বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে তারেক রহমানের সঙ্গেও ছিল ঘনিষ্ঠতা। যার প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন সময়ে অনেক সম্পদ গড়ার পাশাপাশি এলাকায় ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা পরিবার হিসেবে পরিচয় পায়। অনুসন্ধানকালে উঠে আসা সেই ব্যক্তি বা পরিবারটি হচ্ছে রাজধানী ঢাকার কলাবাগানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বহুল আলোচিত ‘ও’ লেভেলের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত দিহানের বাবা অবসরপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আবদুর রউফ সরকার ও মা শিল্পী বেগমের। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার রাতুল গ্রামে। মূলত আলোচিত এই ধর্ষণের ঘটনার পরই পরিবারটির বিষয়ে এসব তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। তবে এই ক্ষমতাধর পরিবারের রোষাণলে পড়ার শঙ্কায় তথ্য সরবরাহকারী এলাকাবাসীর অনুরোধে তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।

অভিযুক্ত দিহানের গ্রামের প্রতিবেশীরা জানান, দিহানের বাবা আবদুর রউফ সরকার ২০০৯ সালে জেলা রেজিস্ট্রারের পদ থেকে অবসর নেন। এর আগে ঠাকুরগাঁ ও রাজশাহীতে জেলা রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেন। চাকরিকালীন দুর্গাপুর উপজেলার কিসমত গণকৈড়, বাগমারার তাহেরপুর, নওগাঁ জেলার আত্রাইসহ বিভিন্ন স্থানে অনেক জমি কিনেছেন। ভূমি অফিসের তথ্য মতে, শুধু দিহানের বাবার নামে নিজ গ্রামেই জমি রয়েছে প্রায় ৭৮ বিঘা। এ ছাড়াও আছে পুকুর, ফসলি জমিসহ গ্রামের মধ্যে আলিশান বাড়ি। পাশাপাশি রাজশাহী মহানগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকা ও সাগরপাড়ায় জমি কেনাসহ বানিয়েছেন দুটি ভবন।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, দিহানের নানার বাড়ি বগুড়ায়। দিহানের মা শিল্পী বেগমের ঘনিষ্ঠতা ছিল বিএনপির তারেক রহমানের সঙ্গেও। যার প্রভাব খাটিয়েও হয়েছেন ক্ষমতাধর, করেছেন অনেক সম্পদও। যে কারণেই শঙ্কার জায়গা থেকে নাম প্রকাশ করতে তথ্যদাতারা অনীহা করেছেন।

তবে দিহান পরিবারটির ইতিবাচক ভূমিকার বিষয়েও গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তথ্য দিয়েছেন এক কলেজ শিক্ষকসহ কয়েকজন ব্যক্তি।

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তারা প্রতিবেদককে জানান, প্রতিটি মানুষেরই ভালো-খারাপ দিক থাকে। চাকরিকালীন আবদুর রউফ সরকার ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করলেও পৈতৃকভাবে তারা সম্পদশালী হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। কোনো ব্যক্তিসহ এলাকার বিভিন্ন সমস্যায় এই পরিবারটি এগিয়ে আসত। এলাকার সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বাজার-হাটসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে জমিও দান করেছেন। অভিযুক্ত দিহানের দাদা মৃত ‘দায়েম সরকার’ নামকরণে এলাকায় একটি স্মৃতি সড়কও রয়েছে। তবে দিহানের দাদার মৃত্যুর পরই মূলত পরিবারটি সুনীতি ভ্রষ্টের দিকে ধাবিত হতে থাকে। বিশেষ করে, প্রায় গত ১০ বছর থেকে পরিবারের পৈতৃকনীতি আদর্শ থেকে একেবারেই ছিটকে পড়েছে।

তাদের ভাষ্য মতে, দিহানের পরিবার মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকলেও চরিত্রগত সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে এখন গরিব মানুষদের মামলা ও মোকদ্দমার ফাঁদে ফেলার ঘটনাও শোনা যাচ্ছে।

খোঁজখবর নিতে দিহানের গ্রামের বাড়িতে গতকাল শনিবার বিকালে গেলে বাড়ির প্রধান দরজায় তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। এরপর মুঠোফোনের মাধ্যমে কথা বলার চেষ্টা করা হলে দিহানের বাবা আবদুর রউফ সরকারের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়ায় কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close