আবারো বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে স্বর্ণের বাজারে। গতকাল শুক্রবার বিকালে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হতে দেখা যায় ১৮৫৬ দশমিক ৬২ ডলারে; যা আগের দিনের চেয়ে ১১ দশমিক ৪২ ডলার কম।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বড় ধরনের দরপতন ঘটে সোনার বাজারে। ওই দিন ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম কমে ৩৮ দশমিক ৬৮ ডলার। বুধবার দিন শেষে স্বর্ণের দাম দাঁড়ায় ১৮৬১ দশমিক ৯০ ডলার/আউন্স। এরপর দিন আবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। গত বৃহস্পতিবার প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বাড়ে ৬ দশমিক ১৫ ডলার। আর বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষ হয় ১৮৬৮ দশমিক ০৪ ডলারে। গোল্ডপ্রাইসের তথ্যে দেখা যায়, গেল ৩০ দিনের ব্যবধানের প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম কমেছে ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ। তবে গেল ছয় মাসের ব্যবধানের প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৫৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমানোয় এবং নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র ডলার শক্তিশালী করার চেষ্টা করায় স্বর্ণের এই দরপতন হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন দৌরাত্ম্যের কারণে স্বর্ণের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ডলারের পতন এবং স্বর্ণের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনে চীনের হাত ছিল। এখন নির্বাচনের আগে ট্রাম্প ডলার শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এর সঙ্গে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমিয়েছে। আবার অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে কিছু জুয়াড়ি স্বর্ণ বিক্রির চাপ বাড়িয়েছে। স্বর্ণ বিক্রি করে তাদের একটি অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। এ সবকিছু মিলে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমেছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে চলতি বছরের শুরু থেকে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার প্রবণতা শুরু হয়। দফায় দফায় দাম বেড়ে আগস্টের শুরুতে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম রেকর্ড দুই হাজার ৭৫ ডলারে উঠে।

বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ আগস্ট দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম রেকর্ড ৭৭ হাজার ২১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৭৪ হাজার ৬৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৫ হাজার ৩১৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫৪ হাজার ৯৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে এই দাম বাড়ার পর ৭ আগস্ট পতনের মুখে পড়ে স্বর্ণ। ১১ আগস্ট একদিনে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১১২ ডলার পর্যন্ত কমে যায়। এরপরও চলতে থাকে স্বর্ণের দরপতন। ফলে বাংলাদেশেও কয়েক দফায় স্বর্ণের দাম কমানো হয়। অবশ্য বিশ্ববাজারে দাম না বাড়ার পরও চলতি মাসে দুই দফা দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। এর মধ্যে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দরপতন চলতে থাকে। দফায় দফায় দাম কমে এখন প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৮৬৮ ডলারে নেমে এসেছে। বিশ্ববাজারে দরপতনের পরিপ্রেক্ষিত গতকাল দেশের বাজারে আবার স্বর্ণের দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। নতুন দাম অনুযায়ী, ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৪৪৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৪ হাজার ৮ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ভরি ৭০ হাজার ৮৫৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ভরি ৬২ হাজার ১১১ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৫১ হাজার ৭৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশ্ববাজার ও দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমার কারণ হিসেবে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে ট্রাম্প ডলার শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার এটিই অন্যতম কারণ। আর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার কারণে বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে।’

"