হারুন হাবীব

  ২৬ মার্চ, ২০২২

বাংলা ভাষীরা হারানো জাতিসত্তা খুঁজে পায়

পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনে বড় ভূমিকা রাখে বাঙালি মুসলমান, যদিও তাদের স্বপ্নভঙ্গ হতে দেরি হয়নি। নতুন রাষ্ট্র গঠনের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নব্য উপনিবেশবাদীদের চেহারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাংলা ভাষার আন্দোলন সেই স্বপ্নভঙ্গেরই প্রথম বিস্ফোরণ। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সদ্য জন্ম নেওয়া পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষীরা তাদের হারানো জাতিসত্তা খুঁজে পায়।

যে সাম্প্রদায়িকতা পাকিস্তান সৃষ্টি করে, সেই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেই বাঙালি জনগোষ্ঠী রুখে দাঁড়ায়। সেটি ছিল এক তাৎপর্যময় জাতীয় উন্মেষ, একটি নবজাগরণ, যা বাঙালিকে নতুন করে আত্মসচেতন হওয়ার পথ দেখায়। বলা বাহুল্য, বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিসত্তার যে স্ফুরণ, তা থেমে থাকে না। ১৯টি বছর ধরে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালি গণমানুষ আত্মানুসন্ধান করে, পরিশুদ্ধ হয় এবং সেই আত্মানুসন্ধানের বাঁকে বাঁকে জাতি অগ্রসর হয়, পৌঁছে যায় ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় যে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বাতাবরণে এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতিচর্চায় বাঙালি হিন্দু-মুসলমানের মনোজগতে জাতি পরিচয়ের যে সংকট তৈরি হয়, বাংলা ভাষা আন্দোলন সে সংকট বা দ্বন্দ্ব ভাঙতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান-নির্বিশেষে নতুন উপলব্ধিতে সমৃদ্ধ হয়। ভাষা ও সংস্কৃতির বাঁধন ধর্মের বাঁধনকে ছাপিয়ে দেয়। অন্ধকার থেকে আলোতে আসে মানুষ। পাকিস্তানের মেকি ধর্মবাঁধন কিংবা বর্বর সামরিক আধিপত্য কিছুই তাকে বাঁধতে পারে না। বাঙালি নিজেকে আবিষ্কার করে। তার আত্মপরিচয়ের সংকট ঘুচতে থাকে। ধর্ম ও সামরিক আধিপত্য যত বাঁধতে চায়, তত তার মোহমুক্তি ঘটে। বেগবান হয় বাঙালির আত্মপরিচয়ের অন্বেষণ।

এই প্রগতিশীল উত্তরণের নানা অবস্থানে রাজনৈতিক নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মুখ্য ভূমিকা রাখেন বাঙালির মুখ্য জাতীয়তাবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন। তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে ছাত্র বা তারুণ্যের আন্দোলন। এসবের ধারাবাহিকতায় আসে উনসত্তরের গণবিস্ফোরণ, ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের পতন ঘটে। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে স্বাধিকার ও আত্মমর্যাদার পক্ষে দাঁড়ায় বাঙালি। পরিশেষে আসে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, যা পাকিস্তান রাষ্ট্রকে বহিষ্কার করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে।

বাংলা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালির যে দীর্ঘ পথপরিক্রমা, তাতে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বড় অংশীদারি আছে। বাঙালি অসাম্প্রদায়িক বুদ্ধিজীবীরা ধারাবাহিকভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জনমত জাগিয়ে তোলেন। বলা বাহুল্য, সাংস্কৃতিক আন্দোলন ভিত্তি স্থাপন করলেও গোটা জনগোষ্ঠীর মনোজগতে মহাবীক্ষার যে বহ্নিশিখা প্রজ্বলিত হয়েছিল, তার মুখ্য কারিগর ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বঞ্চিত, অবহেলিত জাতির বুকে বল দিয়েছেন, কণ্ঠে প্রতিবাদের ভাষা দিয়েছেন, জাতীয় মর্যাদা পুনরুদ্ধার ও অধিকার বা আত্মপরিচয়ের সংকট দূর করেছেন, প্রতিরোধে দাঁড়ানোর শক্তি জুগিয়েছেন। রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের সিঁড়ি বেয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছেন।

মনে রাখা উচিত যে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের রক্তে যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, সে রাষ্ট্রের মূল প্রতিপক্ষ, সাম্প্রদায়িক শক্তি আত্মসমর্পণ করেনি; পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করলেও এই সব অপশক্তি আজও নানা অঙ্গনে সক্রিয়। বাংলাদেশের মাটিতে তাদের একাধিক ছিটমহল বিদ্যমান। পুনর্জাগরিত এই বিষবৃক্ষগুলো বাঙালির শাশ্বত উদারতাকে গ্রাস করতে উদ্যত। অতএব আত্মতুষ্টির সুযোগ কম। কিছু নির্বাচনী বিজয় মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক শক্তির অধিষ্ঠান ঘটায় বটে; কিন্তু সাংস্কৃতিক বোধের পূর্ণ মেরামত ঘটে না। অতএব বাঙালির জীবনে প্রয়োজন একটি বড় লড়াই, সে লড়াই সংস্কৃতির, বায়ান্ন ও একাত্তরের চেতনা পুনঃস্থাপনের, যা মানবিক, আধুনিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে। এ লড়াইয়ের বিকল্প আছে বলে আমি মনে করি না।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ আজ মনোজাগতিক বিপ্লবের একটি অধ্যায় অতিক্রম করে চলেছে। এই অধ্যায় অপসারিত করে চলেছে দীর্ঘকালের চেপে থাকা এমন এক আধিপত্য, যা ১৯৭১ সালের বিজয়ী বাংলাদেশকে পরাভূত করেছিল, ন্যুব্জ করেছিল এবং আপসকামী বানিয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ এই জাগরণের নায়করা সবাই যুবতারুণ্য- যারা উঁচিয়ে ধরেছেন জাতীয় নৈতিকতার নিশান।

এ কথা স্বীকার করাই যুক্তিযুক্ত হবে যে বিজয়ী বাংলাদেশের মাটিতে মনোজাগতিক এই বৈকল্য শুরু করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যখন বিজয়ী বাংলাদেশকে পরাজিতের পোশাক পরানো হয়েছিল। সামরিক ও আধাসামরিক শাসনগুলোতে এই আধিপত্য পরিকল্পিত প্রয়াসে বেগবান হয়। স্বাধীনতাণ্ডউত্তর প্রজন্মগুলোর তাৎপর্যময় অংশকে বৈকল্যের শিকার বানানো হয়। সত্য ও মিথ্যার মাঝে, সুন্দর ও কুৎসিতের মাঝে, স্বাধীনতা ও পরাধীনতার মাঝে ভেদাভেদ ঘুচিয়ে দেওয়া হয়।

এই আধিপত্যবাদের এক পর্যায়ে আরো দেখতে হয়- কিভাবে, পরিকল্পিত পন্থায় আমাদের উত্তর প্রজন্মের একটি বড় অংশকে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল, কিভাবে পঁচাত্তরের রক্তপাতের পর জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ, তার ইতিহাস ও জাতীয় বীরদের সম্পর্কে অবজ্ঞা ছড়ানো হয়েছিল। পঁচাত্তর-পরবর্তী রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে সৃষ্ট নতুন প্রজন্মের এই বিভ্রান্তি জাতিকে বিভাজিত করেছে, সদম্ভে পথ চলতে দেয়নি। এসব ঘটনাবলিতে একাত্তরের রণাঙ্গনের সৈনিক হিসেবে আমরা ফুঁসে উঠেছি, কখনো অসহায় হয়েছি, মনে হয়েছে আমরা পরাজিত-ব্যর্থ। আবারও কখনো মনে হয়েছে, না, স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রার্থনায় যে মাটিতে ৩০ লাখ মানুষ আত্মাহুতি দেয়, যে জাতির চার লাখ নারী পশুত্বের কাছে সম্ভ্রম হারায়, যে দেশের এক কোটি মানুষ নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে পড়শি দেশে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়, সে দেশ এক দিন না এক দিন তার হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে বাধ্য।

আমি গর্বিত যে আমাদের উত্তর প্রজন্ম আমাদের শঙ্কা দূর করেছে, মাটি খুঁড়ে তারা জাতীয় স্বাধীনতার ইতিহাস ও গর্ব তুলে এনেছে। সবচেয়ে বড় যে কাজটি হচ্ছে- পরিকল্পিত মনোজাগতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে তারা সরব হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক জাতীয় বোধের বিরুদ্ধে কয়েক যুগের লাগাতার আগ্রাসন পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও নবীন প্রজন্মের এই মনোজাগতিক উন্মেষ ছিল অবধারিত। তারুণ্যের এই উত্থান ঘটেছে অনেকটাই সংগোপনে, অনেকটাই নীরবে, অস্তিত্বের তাগিদে। রাজনৈতিক সংকট, ব্যর্থতা ও বহুবিধ সংকটের পরও নতুন প্রজন্মকে জাগিয়ে তোলার এই প্রক্রিয়া কখনো থেমে থাকেনি। বৈরী আধিপত্য বলয়ের মুখোমুখি হয়েও মুক্তিযোদ্ধারা, বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা সাহসে কথা বলেছেন, বীরত্বের কাহিনি শুনিয়েছেন নতুন প্রজন্মকে। সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল গণসংগঠনগুলোর অব্যাহত তৎপরতাও বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

নতুন প্রজন্মের সামনে অবিকৃত ১৯৭১ তুলে ধরার এবং আগ্রাসন প্রতিরোধে প্রভূত ভূমিকা রেখেছেন লেখক, গায়ক, শিল্পী, কবি, সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদরা। মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত অধ্যায়কে পূর্ণ করে জাতীয় দায়বদ্ধতার প্রশ্নে যুদ্ধাপরাধী ও মুক্তিযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবি তুলেছেন প্রগতিবাদী সংগঠন। একাত্তরপন্থি রাজনীতিবিদরা সোচ্চার থেকেছেন কয়েক যুগ ধরে। এই যৌথ প্রতিরোধ আন্দোলনের ফসল উঠেছে ঘরে। ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এসেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জাতীয় দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান দেখিয়েছে। নতুন প্রজন্মের দীর্ঘ লালিত আকাক্সক্ষার প্রতি এই শ্রদ্ধা তাদের আরো একধাপ অগ্রসর করেছে।

জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের কয়েক দশক পরে, বিশেষত স্বাধীনতাবিরোধী ও মৌলবাদী জঙ্গিরা যখন সুসংহত, তখন এই বিচারপ্রক্রিয়া শুরু বা সম্পন্ন করা কম দৃঢ়তার পরিচয় নয়। কে না জানত যে পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফেলে যাওয়া এই দোসর ও নব্য ভাবশিষ্যরা, যারা সময়ের ব্যবধানে সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী, তারা এ বিচারপ্রক্রিয়ার ওপর সর্বশক্তিতে আঘাত হানবে। সবারই জানা এ পর্যবেক্ষণ সত্যে পরিণত হয়েছে। দেশ ও বিদেশের মাটিতে এই বিচারপ্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণ পরিচালিত হয়েছে। এরপরও যুদ্ধাপরাধীর বিচার সামনের দিকে এগিয়েছে।

যে বাংলাদেশকে ন্যুব্জ, পরাভূত করে রেখেছিল যে মনোজাগতিক বৈকল্য, তার দেয়াল ভেঙে দিয়েছে বাঙালির নবতারুণ্য। যে রাজনীতিবিদরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা চাপিয়ে তুষ্ট থেকেছেন, তারা হঠাৎ করেই চোখ মেলে তাদের স্বপ্নের সিংহাসন বিচূর্ণ হতে দেখলেন! এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী, যারা মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের আদর্শ মিলিয়ে এক বিস্ময়কর সংকর জাতি তৈরির স্বপ্নে বিভোর ছিলেন, তারা হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হলেন শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন পূরণ হলো না তাদের।

উপলব্ধির আরো সংগত কারণ আছে যে তারুণ্যের এই জেগে ওঠা, যা আদর্শিক বাংলাদেশকে জাগিয়ে দিয়েছে, তা রাতারাতি আসেনি। প্রথমত, যে ইতিহাস তার নিজের শক্তিতেই বলীয়ান, সে নিজের প্রতিরক্ষা দিতে সমর্থ হয়েছে। দ্বিতীয়ত, নতুন প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি বা অংশ নিতে পারেনি বলে আক্ষেপ করেছে, অস্তিত্বের তাগিদেই তারা মাটি খুঁড়ে জাতীয় অহংকার আবিষ্কার করেছে। তৃতীয়ত, যে তথাকথিত ধর্মবাদী শক্তি মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী হয়ে ঘাতক ও ধর্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল, মানবতার বিরুদ্ধে নিকৃষ্টতম অপরাধ সংঘটিত করেছিল, তাদের পরিকল্পিত উগ্রবাদিতা বৃহত্তর তারুণ্যকে বিক্ষুব্ধ করেছে। অতএব নীরবতা ভেঙেছে। বিবেক তাদের জাগিয়ে দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের বিস্ময়কর এই জাগরণ সব অর্থেই মঙ্গলবাহী। কারণ লাখো শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না, লাখো নারীর সম্ভ্রম বৃথা যেতে পারে না, বাংলাদেশ চিরকালের জন্য পাকিস্তানি রাজনৈতিক প্রেতাত্মাদের চাপিয়ে দেওয়া বৈকল্যের শিকার হতে পারে না।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অনেক রক্তের দামে কেনা। এ রক্তের দাম দিতে হবে রাষ্ট্রের নতুন নাগরিকদের। সব আঁধার কাটুক মুক্তির আলোয় আলোয়- সে আলো ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে- সে আলো পবিত্র করুক, খাঁটি করুক সবাইকে; টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথারিয়া জেগে উঠুক নতুন ভোরের আলোয়।

লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close