
মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেনের হাসির গল্প
অযথা ডট কম

অনলাইনে কেনাকাটা একরকম অভ্যাসে পরিণত হয়েছে আবিরের। কোন সাইটে কি অফার, কখন দেয়, কত পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট, সব যেন আবিরের নখ দর্পণে। ৯ টাকার অফার, ১১ টাকার ডিল, মিষ্টি বক্স, জাদুর বাক্স, আলাদিনের বাক্স, ধামাকা অফার, বর্ষপূর্তি অফারের যখন ছড়াছড়ি ঠিক তখনই আবির অযথা ডটকমের সন্ধান পায়। এ সাইটে ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তারা সব আকর্ষণীয় অফারের পসরা সাজিয়েছে। কিন্তু সমস্যা একটাই তাদের আটটি ক্যাটাগরিতে হাজারো পণ্যের মাঝে খুঁজে বের করতে হবে কোনটি তারা ১০ টাকায় দিচ্ছে। এখানে আরো একটি শর্ত হচ্ছে একটি আইডি থেকে একবারই শুধু ১০ টাকার পণ্য অর্ডার করা যাবে পুরো ক্যাম্পেইনে।
আবিরের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। বাবার দুইটি সিম, মায়ের দুইটি সিম ও নিজের দুইটি সিমে মোট ছয়টি অ্যাকাউন্ট খুলে প্রস্তুত হয়ে থাকে আবির। প্রথম দিন রাত বারোটার পর একটি ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল দিয়ে অফার খোঁজার প্রাণান্ত চেষ্টা চলে। কোন ক্যাটাগরির পণ্যে ১০ টাকার অফার লুকিয়ে আছে। খুঁজতে খুঁজতে তার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। এ যেন বড়শি ফেলে মাছ শিকার করার মতো অবস্থা। ঘণ্টা দুয়েক খুঁজে কোনো অফার না পেয়ে বিষণ্ণ মনে সে ঘুমাতে যায়।
পরের দিন আবারো অফার ধরার চেষ্টা। এবার ঘণ্টাখানি চেষ্টা করার পর পেয়ে যায় ফ্যানের সন্ধান। চিৎকার করে ওঠে আবির, মা দশ টাকায় ফ্যান। মা’র বিশ্বাস হয় না দশ টাকায় ফ্যান! সত্যি ওরা দিবে তো? একে একে অর্ডার করে ফেলে ২৪ ইঞ্চি সাইজের চারটি ফ্যান। আবির আজ খুব খুশি। পরের দিন আবারো আবির অযথা ডটকমের সাইটে ডুকে। এবার যদি কিছু পাওয়া যায়, সেই আশায়।
কিন্তু অনেক চেষ্টার পর আজ মাত্র দুটি আলাদিনের বাক্স ধরতে পারে। তবুও আবির খুশি, কিছু না কিছু তো ধরতে পেরেছে। পরের দিন অযথা ডট কম থেকে আবিরের কাছে ফোন আসে, আপনি আমাদের আলাদিনের বাক্স পেয়েছেন, আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন। কাস্টমার কেয়ারের এমন ফোন পেয়ে আবির খুব খুশি। আচ্ছা আলাদিনের বাক্সে কি কি থাকবে? আগে বলে দিলে তো আর সারপ্রাইজ থাকলো না- উত্তরে কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি।
আবির আলাদিনের বাক্সে কি পেতে পারে এটা নিয়ে অনেক এক্সাইটিং। কিন্তু দশ টাকায় ২৪ ইঞ্চি ফ্যান কবে আসবে তা জানার জন্য আবির কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে। অনেক কষ্টে কাস্টমার কেয়ারের লাইন পাওয়ার পর তারা বলে ক্যাম্পেইন শেষ হলে তারা দশ টাকার প্রোডাক্টগুলো পাঠিয়ে দেবে। হঠাৎ একদিন কুরিয়ার অফিস থেকে ফোন আসে- আপনার নামে আলাদিনের বাক্স নামে একটি বাক্স আসছে। আবির আলাদিনের বাক্স খুলে দেখে দুইটা ছোট প্যান্টি আরেকটি আন্ডারওয়্যার। এসব পেয়ে খুব বিব্রত হয় সে।
তারপরের দিন আরো একটি আলাদিনের বাক্স আসে। এই বাক্সে কয়েকটি ছোট ছোট জুসের বোতল। মন খারাপ করা দুটি আলাদিনের বাক্সে তার ২০০ টাকার মতো খরচ। খুব বেশি লাভ তার হয়নি। তবুও সান্তনা এই ভেবে যে এটা তো তার অজানা ছিল। কিন্তু দশ টাকার পণ্য তো আর তার অজানা নয়। ২৪ ইঞ্চি ফ্যান মূল্য ২৫০০ টাকা।
হঠাৎ একদিন অযথা ডটকমের ফোন আসে। খুব খুশি মনে আবির ফোন রিসিভ করে। কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি যখন বলে, আপনি আমাদের থেকে দশ টাকার ফ্যান অর্ডার করেছিলেন কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রথম ১০ জনকে ফ্যান দেব- একথা শুনে আবিরের মাথায় রক্ত উঠে যায়।
- আপনারা তো কোথাও একথা লিখেন নাই যে প্রথম দশ জনকে দেওয়া হবে।
- আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত স্যার। যান্ত্রিক সমস্যার কারণে এমনটা হয়ে গেছে।
- এটা কোনো যুক্তি হলো, অন্য কোনো অফারে এমন যান্ত্রিক সমস্যা হলো না। এটা আপনারা ইচ্ছে করে গ্রাহকের সঙ্গে বাটপারি করলেন।
- সরি স্যার আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
- দুঃখিত বললে সব শেষ হয়ে যায় না। আপনি কাউকে খুন করে যদি বলেন, আপনার মাথার সমস্যা ছিল। আদালত সেটা মানবে?
- দুঃখিত স্যার। আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
- আপনি জানেন এই ফ্যানগুলো ধরতে আমার কি পরিমান কষ্ট করতে হয়েছে। কত কষ্ট হয়েছে, কত রাত জাগতে হয়েছে।
- আপনার কষ্ট বুঝতে পারছি। সরি স্যার।
- সারাদিন বড়শি ফেলে পুকুরে মাছ মারার চেয়েও কষ্টসাধ্য কাজ ছিল এটি।
- দুঃখিত স্যার। আমরা এর বদলে আলাদিনের বাক্স দিতে চাচ্ছি।
- প্যান্টির মূল্য কি একটি ফ্যানের মূল্যের সমান?
- এবার আলাদিনের বাক্সে গার্মেন্টস পণ্য দেওয়া হবে না,স্যার। ফুড প্রোডাক্ট দেওয়া হবে।
- ছোট ছোট কয়েকটি জুসের বোতলের মূল্য কি ফ্যানের মূল্যের সমান হবে?
- সরি স্যার, আপনি চাইলে টাকা রিফান্ড করে দিবো।
- সরি স্যার, দুঃখিত স্যার। এগুলো বলে কি পার পাওয়া যাবে? আপনি জানেন কত স্বপ্ন ছিল ফ্যান নিয়ে। একটি ফ্যান টয়লেটে লাগানোর প্ল্যান ছিল। গরমের সময় আমি টয়লেট থেকে বের হলে লোকে বলে, তুই কি টয়লেট থেকে গোসল করে এলি? আমার আধা ঘণ্টা লাগে টয়লেট সারতে। ছোট ফ্যান ভাবছিলাম টয়লেটে লাগাবো।
- আন্তরিকভাবে দুঃখিত স্যার।
- অত্যন্ত ভালোবাসা ও আস্থা ছিল অযথা ডটকমের প্রতি। আপনাদের এমন প্রতারণায় সব ভেঙে খান খান।
- নেক্সট টাইমে এমন হবে না স্যার।
- সরি বলে সব শেষ হয়ে যায় না। মনের যে ক্ষত আপনারা তৈরি করলেন তা সারতে বহুদিন লাগবে।
- সরি স্যার।
- আমি আপনাদের নামে ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ করব।
এবার লাইন কেটে দেয় অযথা ডটকমের কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি। আবিরের চোখে জল এসে যায়। মা এসে আবিরের কাঁধে হাত রেখে বলে অযথাই তুই অযথা ডটকমে অর্ডার করেছিস।
আবির মনে মনে ভাবে কি গালি দিলে যে মনটা শান্তি পাবে। তার চেয়েও তার বড় ভাবনার বিষয় হলো, তার গার্ল ফ্রেন্ডকে সে একটি ফ্যান উপহার দেওয়ার কথা বলেছিল।
"