reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১০ নভেম্বর, ২০২৪

হানিফ ওয়াহিদের হাসির গল্প

বিয়ের পরে

রিয়া আর ফাহাদ ছয় মাস প্রেম করে পারিবারিকভাবেই বিয়ে করেছে। তখন রিয়ার আগ্রহ ছিল প্রবল, মনে হয়েছিল, এই ছেলেকে না পেলে সে মরে যাবে।

ফাহাদও একই কথা ভেবেছিল। বিয়ের পাঁচ মাস পর দুজনেই অবাক হয়ে দেখে, দুজনের মধ্যে চিন্তাভাবনা, রুচি, খাদ্যাভ্যাস কোনো কিছুরই মিল নেই, শুধু তাদের বিয়ের তারিখটা এক। একজন টেকনাফ তো আরেকজন তেঁতুলিয়া।

রিয়ার ধারণা, তার জামাই তাকে মোটেই পাত্তা দেয় না। তার কোনো কথাই শুনে না।

এদিকে ফাহাদ ভেবেছিল সে নিশ্চয় একটা ভালো বউ পাবে, মা-বাবার অধীনে জীবন থেকে সরে এসে স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারবে। হয়েছে উল্টো। বিয়ের পর সে অবাক হয়ে আবিষ্কার করে অন্য অধিকার বাদ থাক, শরীরের ব্যক্তিগত গ্যাস ছাড়ার অধিকারও এখন তার বউয়ের হাতে। আগের মতো আর এই কর্ম সে যখন তখন করতে পারে না। বিয়ের পর সে কনফিউজড কোনটা আসলে বেশি খারাপ, তার চেহারা, নাকি ভাগ্য!

বিয়ের পর নাকি মানুষের চেহারা খুলে, ফাহাদ কিছুতেই ভেবে পায় না, এত স্নো ক্রিমের যুগে অন্যদের চেহারা সুন্দর হলেও তার চেহারা দিনকে দিন এত কালো হচ্ছে কেন? সেটা কি বউয়ের অভিশাপের গুণে?

বন্ধুরা বলেছিল, ছেলেরা বিয়ের পর মেন্টালি স্ট্রং হয়, সে তো পুরাই মেন্টাল হয়ে বসে আছে। এমন বিয়ের কোনো মানে হয়!

পাঁচ মাসেই ফাহাদ বুঝতে পারছে, জামাইয়ের মৃত্যুর পরে যদি বউদের কান্নার রেওয়াজ না থাকত, তার বউ রিয়া তার মৃত্যুর পরে খিলখিল করে হাসত। সে ভেবে পায় না, মানুষ পৃথিবীতে আসে একা যায়ও একা, মাঝখানে বিয়ে নামক জেলখানায় স্বেচ্ছায় বন্দি হওয়ার কী দরকার? মানুষ চাইলেই দেশের ফ্যাসিস্ট সরকার পাল্টাতে পারে, হায় আফসোস! ঘরের বউ পাল্টাতে পারে না।

আহা! ফুটবল খেলার মাঠের মতো যদি লাল কার্ড দেখিয়ে বউকে সংসার থেকে বিদায় করা যেত! সে কি আর জানত, বিবাহিত পুরুষদের শুধু বাজারের হিসাব জানতে হয় না, বউয়ের সামনে হিসাব করে হাসতেও জানতে হয়।

আজকে ফেসবুকে একটা ফানি লেখা পড়ে হাসতে গিয়েই লাগল ক্যাচাল। এই হাসি যেন বউয়ের লিভার, কলিজা, গুর্দায় আগুন ধরিয়ে দিল। রিয়া বিছানা ঠিক করতে করতে তির্যক গলায় বলল, বিয়ে করে দাসী এনে কাজ করাতে ভালোই লাগে, না? কোন বিশ্ব সুন্দরীর দিকে হাসছো বল তো?

বউকে রাগানোর জন্য ফাহাদ বলল, স্বামী-স্ত্রী নিয়ে একটা জোকস পড়ছিলাম।

কী জোকস!

সেটা তোমাকে বলা ঠিক হবে না। তবে আমি হিসাব করে দেখলাম স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হচ্ছে সাইকোলজিক্যাল। এখানে কে সাইকো আর কে লজিক্যাল এটা জানতে চেয়ে আমাকে লজ্জা দিও না। রিয়া কিছুক্ষণ কঠিন চোখে তাকিয়ে থেকে বলল, একটা সত্যি কথা বলবে?

কী কথা?

আমাকে বিয়ে করেছিলে কেন?

ফাহাদ হাসতে হাসতে বলল, আমাকে সহ্য করার জন্য। আজীবন আমাকে তুমি সহ্য করবে এ জন্যই বিয়ে করেছি। অবশ্য আরেকটা কারণ আছে।

কী কারণ?

তখন আমার আবেগ কাজ করেছিল, বিবেক কাজ করে নাই।

বুঝছি।

রিয়াদ এবারও হাসতে লাগল, কী বুঝেছো?

তিতা হয়ে গেছি সবার কাছে, এখন আর মিঠা লাগি না।

মিঠা কথা বললেই তো পারো। তিতা কথা বলো কেন? তোমার কথা শুনলেই মনে হয় মুখে এক কেজি তেঁতুল ঢুকিয়ে বসে আছো...

তিতা কথা না বলে কী করব? মানুষের জামাই বউকে দেয় নিত্যনতুন সারপ্রাইজ, আমার জামাই দেয় কথায় কথায় লেকচার। আমার বান্ধবীরা মাসে মাসে জামাই নিয়ে সিনেপ্লেক্সে যায়, পাঁচ মাস আমাদের বিয়ে হয়েছে। এই পর্যন্ত কয়টা মুভি দেখাইছো? বুকে হাত দিয়ে বলো...

আরে বাবা বিয়ের পর ঘরে যে নাটক সিনেমা শুরু হইছে এরপর আর সিনেপ্লেক্সে যাওয়ার কী দরকার? ব্লকবাস্টার মুভি নাটক তো ঘরেই তৈরি হচ্ছে...

রিয়া চোখ বড় বড় করে ফেলল, তুমি আমাকে নাটকবাজ বলছো? তুমি? বিয়ের আগে প্রতিদিন ফুচকা চটপটি খাওয়াতে নিতে, জামাকাপড় লিপস্টিক কিনে দিতে, ব্লকবাস্টার মুভি দেখাতে নিয়ে যেতে। বিয়ের পর আমাকে কোথায় নিয়ে গেছো বলো তো?

ফাহাদ একটা শয়তানি হাসি মুখে ঝুলিয়ে রেখে বলল, কোথাও কি শুনেছো বঁড়শিতে মাছ গেঁথে গেলে তাকে কেউ আর আদার খেতে দেয়?

রিয়া চোখ বড় বড় করে ফেলল, তুমি আমাকে মাছের সাথে তুলনা করছো? হাউ ফানি জরিনার নানি! বিয়ের আগে কী বলছিলা মনে আছে তো? রিয়া, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না... তোমাকে না পেলে আমি বিষ খাব...

রিয়াও যে একই কথা বলেছিল তার ধারেকাছেও গেল না ফাহাদ।

বিয়ের আগে পাগল ছিলাম, এখন সুস্থ হয়ে গেছি। পাগলদের সব কথা ধরতে হয় না রে পাগলা, মাথায় গ্যাস্ট্রিক হয়। এখন তো তোমার কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে বিয়ে করে আমি সত্যি সত্যি মরে গেছি, বিষ না খেয়েই!

তাই নাকি?

তেমনই তো মনে হচ্ছে। আচ্ছা, জামাই হিসেবে আমি কেমন বল তো? পাস মার্ক হিসেবে তুমি আমাকে দশে কত দেবে?

রিয়া চোখমুখ বাঁকা করে তির্যক ব্যঙ্গ করে বলল, ফেইল মার্কই ঠিকঠাক জুটে না, সে আসছে পাস মার্ক নিতে। হাউ ফানি জরিনার নানি!

ফাহাদ কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে খাটের ওপর উঠে এক কোনায় গিয়ে চুপচাপ বসে রইল। তা দেখে রিয়া স্বগতোক্তি করে বলল, আগে মানুষকে লাই দিলে মাথায় উঠত, এখন দেখছি খাটের ওপর উঠে বসে! দিন দিন আরো কত কিছু যে দেখতে হবে!!

এই, তুমি একটু মিষ্টি করে কথা বলতে পারো ন?

রিয়া চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলল, মিষ্টি থেকে দূরে থাকাই ভালো, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম থাকে। তবে আমি উচিত কথা বলবই বলব, যদিও জানি উচিত কথার ভাত নাই। না থাকুক ভাত, আমি এমনিতেও ভাত পছন্দ করি না।

ফাহাদ আর্তনাদ করে ওঠে, হায় আল্লাহ! এই আমি কাকে বিয়ে করলাম! আমি শুঁকে শুঁকে এই ঘরে একটা ঝগড়ার গন্ধ পাচ্ছি।

রিয়া কিছুক্ষণ নাক শুঁকে বলল, কই, আমি তো গন্ধ পাচ্ছি না। নিশ্চয় তোমার নাকে প্রবলেম আছে। বউ পাল্টানোর চিন্তা বাদ দিয়ে তুমি বরং নাকটা পাল্টে ফেলতে পারো।

ফাহাদ কৃত্রিম রাগ দেখায়, পারলে আমি নাক না, বউ পাল্টে ফেলতাম। ওরে, আমি মরে গেছি রে...

রিয়া ফাহাদের কানের সামনে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল, এখনো তোমার আক্কেল দাঁত উঠে নাই, তুমি আমাকে হিটলারের দাঁত দেখাতে চাইছো? বিয়ের পর ছেলেরা আর জীবিত থাকে না রে পাগলা, বিবাহিত হয়ে যায়। এরা ঘুড়ির মতো যতই এদিক-ওদিক গুঁত্তা দিক না কেন, নাটাই কিন্তু বউয়ের হাতে থাকে। সুতায় কখন টান দিতে হবে এটা আমরা ভালো করেই জানি।

ফাহাদ আর কথা খুঁজে না পেয়ে বউয়ের দিকে তাকিয়ে রইল।

ওদিকে রিয়া এই দৃশ্য দেখে খিলখিল করে হেসেই যাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close