reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

গাজী তারেক আজিজের হাসির গল্প

ফুচকা চুক্তি

মামাতো বোনকে ফুচকা খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে চুটিয়ে প্রেম। তারপর পরিবারের অমতে পালিয়ে বিয়ে। বিয়ে আবার যেনতেন বিয়ে নয়। খুব ঘটা করে ঢাকবাদ্য পিটিয়ে সামাজিকভাবে বিয়ে! দাওয়াতি কার্ড ছাপিয়ে, সবাইকে বিলি করে দিনক্ষণ ঠিক করে অনুষ্ঠান। তাই বলা হচ্ছে সামাজিক বিয়ে! পাড়ার শিশু, কিশোর, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ সবাই দিন গুনে হাজির বিয়ে বাড়িতে। কিন্তু একি! শুধু ঢোলই বাজছে। সবকিছু সাজানোও আছে। খাবার কিংবা আপ্যায়নের কোনো কিছুই চোখে পড়ছে না। কেউ কাউকে কিছু বলছে না। কেউ কাউকে কিছু জিজ্ঞেসও করছে না। অনেকেই উপহার উপঢৌকন নিয়ে এলেও কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। তার মধ্যে রতন ছিল পাড়ার দুষ্টু ছেলে। চিন্তায় পড়ে গেল দাওয়াত না খেয়ে উপহার দিলে হিসাবটা মিলে না। রতনসহ আরো চার বন্ধু আলাপ-আলোচনা করে এখন উপায়? কারণ তারা পাঁচ বন্ধু মিলে যেকোনো দাওয়াতে গেলে উপহারের সঙ্গে মূল্যমান মিলিয়ে সে হিসেবে খায়। তাতে করে তাদেরও পুষিয়ে যায়। আবার কখনো অন্য কোথাও যদি একজন বন্ধু দাওয়াত পায় তো তারা নির্দ্বিধায় সবাই একসঙ্গে যায়। এ নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনার খোরাক হলেও তারা এসব কানে কমই তোলে। অন্যরাও বেশ মজা লুটে। তারা সেদিকেও ভ্রুক্ষেপ করে না।

তবে চমক কিন্তু আয়োজকদের পক্ষ থেকে রাখা হয়েছে। কেউই তাদের সেই চালাকি ধরতে পারেনি। আচ্ছা সে আলোচনার আগে আসল কথায় আসি। নব দম্পতির কেউই তাদের পরিবারের এবং পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত কাউকে দাওয়াত করে নাই। এতে উভয় পরিবারের লোকজন আরো ক্ষুণ্ণ হয়। দুই পরিবার জামাই-বউকে না জানিয়ে নিজেদের উদ্যোগে মিলে যায়। কিছুটা অপমানবোধ থেকে। উভয়ের পরিবারের এই দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলে। দুই পরিবার মিলে এই চুক্তির নামকরণ করে ‘বেয়াইনামা’। এই ‘বেয়াইনামা চুক্তি’র কথা জানাজানি হলে নববিবাহিত দম্পতি বাদ সাধে। তারাও পাল্টা কৌশল করে উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। উভয়ের পরিবারের সম্পাদিত চুক্তিকে অসামাজিক আখ্যা দিয়ে প্রতিহত করার। সবাই হাত তুলে সায় দেয়। শিশুরা এতে রোমাঞ্চ অনুভব করে। কিশোররা দেখতে থাকে ব্যাপক কৌতূহল নিয়ে। কী হয়? কী হয়? আর যুবকরাই হচ্ছে এই আন্দোলনের প্রাণ।

উপস্থিত রতনসহ পাঁচ বন্ধুর কেউই কোনো কথা বলছে না, তা দেখে সবাই জিজ্ঞেস করে আমরা এখানে কেন এসেছি? সবাই বলছে কেন?

আমরা এসেছি বিয়ের দাওয়াত খেতে।

অন্য সবাই মাথা ওপর-নিচ করে সায় দেয়। হ্যাঁ তাই তো আমরা খেতেই এসেছি।

সবাই জামাই-বউয়ের দিকে তাকাতেই, জামাই-বউ মিটিমিটি হাসছে দেখে। সবার কৌতূহল আরো বাড়ে।

জামাই-বউ একসঙ্গে বলে ওঠে খাবারের ব্যবস্থা আছে। সবাই তখন বলে কই? কই?

তখন জামাই-বউ বলে আমরা খাবারের আয়োজনে দায়িত্ব দিয়েছি একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে।

তখন ছেলে-বুড়ো সবাই বলল বাহ্! এ-তো ভালো কথা। সবাই আস্বস্ত হলেও রতন ও অন্য চার বন্ধুর বিশ্বাস হয় না!

এরই মধ্যে চাউর হয় কথিত ‘বেয়াইনামা চুক্তি’ অসম চুক্তি। অর্থাৎ দুই পরিবার মিলে এই বিয়ে ভেঙে দিতে চায়। কিন্তু গ্রামের আর কেউই চায় না এমন হোক। উভয়ের পরিবার কল করে ৯৯৯ নম্বরে। যথারীতি ম্যাজিস্ট্রেট হাজির পুলিশসহ। এসেই বউ-জামাইকে খুঁজে সামনে পেয়ে বলে এই মেয়ের বয়স কম। এই বিয়ে আইন অনুযায়ী বে-আইনি। তখন জামাই-বউয়ের উভয়ের মা-বাবা এসে বলে একই কথা। কারণ যেকোনো মূল্যে এই বিয়ে ভাঙতে হবে।

এদিকে জামাইয়ের দুষ্টু সেই বন্ধুদের দল এসে বাগড়া দেয়। অসম্ভব এই মেয়ের বয়স ঠিকই আছে। সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট ডকুমেন্টস দেখতে চায়। রতনসহ বন্ধুরা মেয়ের জন্মনিবন্ধন সনদ দেখায়। দেখে মেয়ের বয়স আঠারো। অর্থাৎ আইন অনুযায়ী সঠিকই আছে। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত মেয়ের মা আর বাবার চক্ষু চড়কগাছ! কী বলে? আমাদের বিয়েই হয়েছে সতেরো বছর। মেয়ে হয়েছে এক বছর পর। সে হিসেবে মেয়ের বয়স ষোলো বছর দুই মাস।

ম্যাজিস্ট্রেটকে উদ্দেশ্য করে মেয়ের বাবা বলে উঠল অসম্ভব, এই জন্মনিবন্ধন সনদ ভুয়া। তখন ম্যাজিস্ট্রেট অনলাইন চেকিং করে তথ্য সঠিক পান। মেয়ের মা বলেন, স্যার এটা বিশ্বাস করবেন না। ম্যাজিস্ট্রেট তখন বলে ওঠেন, তাহলে কী বিশ্বাস করব শুনি? বলে, মুখ ভাংচি দিয়ে ব্যঙ্গ করেন। মেয়ের মা বলে, আমাদের বিয়ে হয়েছে আজ সতেরো বছর। মেয়ের কী করে আঠারো বছর হয়? ম্যাজিস্ট্রেট বলে ওঠেন, প্রেম করলে আপনারাও বুঝতে পারতেন কী করে হয়! এই কথায় হাসির রোল পড়ে যায়।

পুলিশ নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট চলে যেতে চাইলে সবাই অনুরোধ করেন আপনারা আমাদের অতিথি। দয়া করে খেয়ে যাবেন। তখন সবার মধ্যে খুশির বন্যা বয়ে যায়। আর এর মধ্য দিয়ে তথাকথিত ‘বেয়াইনামা চুক্তি’র নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ফুচকা চুক্তি’!

যথারীতি মামাতো বোন অর্থাৎ বউকে নিয়ে বাড়িতে গেলে বউ বলে ওঠে, ভাইয়া আমার ফুচকা নিয়ে আসো! যে ফুচকার মোহে প্রেম-বিয়ে! সেই ফুচকা না হলে হবে?

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close