reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ জুলাই, ২০২৪

আবুল কালাম আজাদের হাসির গল্প

বয়কট

তসলিম ভাই। হ্যাঁ, আমাদের পাড়ার তসলিম ভাইয়ের কথা বলছি। তাকে এখন আমরা বয়কট ভাই ডাকতে শুরু করেছি। তাহলে ব্যাপারটা খুলে বলি।

তসলিম ভাই এক দিন বাজারে গেছেন। খুব বৃষ্টি হয়েছে তখন। বাজারে বেশ কাদা-পানি। তসলিম ভাইয়ের দুই হাতে দুই ব্যাগ। ব্যাগ ভরা মাছ, তরিতরকারি, আরো অনেক কিছু। আচানক লুঙ্গিতে পা লেগে ভরা বাজারে তার লুঙ্গি গেল খোলে। বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! লুঙ্গি নিচে পড়ে কাদাপানিতে একাকার। তসলিম ভাই কাদার ভেতর দুটো ব্যাগ নামিয়ে লুঙ্গি তুলে পরল। সেই থেকে তসলিম ভাই লুঙ্গি বয়কট করেছে। দিন-রাত ট্রাউজার পরে থাকে। গরমের দিনে ২৪ ঘণ্টা লুঙ্গি পরে থাকা খুব কঠিন। ভেতরে চুলকায়। ঘেমে খুব খারাপ অবস্থা হয়। অনেকেই বলেছে, যা হওয়ার একবারই হয়েছে। বারবার হবে এমন কোনো কথা নেই। শীত অঞ্চলের মানুষ দিন-রাত ট্রাউজার পরে থাকতে পারে। আমাদের মতো গরম অঞ্চলের মানুষের জন্য এটা ক্ষতিকর। কিন্তু তসলিম ভাই কারো কথায় কর্ণপাত করেনি। সে লুঙ্গি বয়কট করেছে তো করেছেই, ওটা আর ধরবে না।

এক দিন তসলিম ভাই দোকানে চা খেতে গিয়ে আচানক ঠোঁটে ছ্যাকা খায়। চমকে তার হাত থেকে কাপ যায় পড়ে। কাপ গিয়ে পড়ে পাশের লোকের পায়ে। গরম চা পড়াতে লোকটাও গরম হয়ে যায়। আশপাশের লোকজন হাসাহাসি করে। সেই থেকে তসলিম ভাই চা বয়কট করেছে। যে লোকের দিনে দশ কাপ চা ছাড়া চলত না, সে চা বয়কট করে দিব্যি আছে। আমরা অনেক অনুরোধ করেছি। তার হাতে আর চায়ের কাপ তুলে দিতে পারিনি।

চায়ের বদলে তসলিম ভাই পান খেতে শুরু করল। পান খেতে গিয়ে এক দিন চুন বেশি খেয়ে জিহ্বা পুড়ে যাওয়ায় পানও বয়কট করল। কি একটা অবস্থা!

আমাদের এলাকার সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের নাম বনলতা। ফিজিক্স-এ অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। আমরা ডাকি বনলতা আপু। বনলতা আপু যেমন সুন্দরী তেমন দেমাগী। হয়তো জন্মের সময়ই সে শপথ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে যে, কোনো ছেলের প্রেমে পড়বে না। অনেকেই বনলতা আপুর কাছে প্রেম প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছে। কোনো লাভ হয়নি। তসলিম ভাইয়ের ভালো লেগে গেল সেই বনলতা আপুকে। আমরা বললাম, তসলিম ভাই, এদিক থেকে সরে আসেন। লাভ হবে না কোনো, উল্টো অপমানিত হবেন।

কিন্তু তসলিম ভাই তার ভালোবাসায় অটল। সে বনলতা আপুর কাছে গেল প্রেম নিবেদন করতে। পত্রপাঠ বিদায়। বনলতা আপু মুখের ওর বলে দিল- সম্ভব না। আপনি অন্যদিকে যেতে পারেন।

কিন্তু তসলিম ভাই তখন বনলতা আপুকে ছাড়া আর কাউকে ভাবতে পারে না। বারবার বনলতা আপুর কাছে যায় প্রেমের ফুল নিয়ে, মালা নিয়ে। বনলতা আপু তা দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। এক দিন বনলতা আপু ভার্সিটি থেকে ফিরছিল রিকশা করে। তসলিম ভাই তার পথ আটকালো। বলল- বনলতা, আমাকে আর ব্যথা দিয়ো না। তোমাকে ছাড়া আমি কিছু চোখে দেখি না। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না।

বনলতা আপু মুখ বাঁকিয়ে বলল- আপনি কী মনে করেন, এই পৃথিবীর আপনাকে খুব দরকার? আমি তা মনে করি না। আপনি না থাকলে পৃথিবীর এতটুকু ক্ষতি হবে না।

কি নিষ্ঠুর আচরণ!

তসলিম ভাই নারী জাতিকে বয়কট করে বসল। আর তখনই তার বাবা-মা তার বিয়ে ঠিক করে ফেললেন। বিয়ে ঠিক করলেন অন্য এক সুন্দরী নারীর সঙ্গে। কিন্তু তসলিম ভাই তো নারী জাতিকে বয়কট করেছেন। বাপ-মায়ের সঙ্গে শুরু করে দিল ঝামেলা। শেষে আমরা গেলাম তসলিম ভাইয়ের হয়ে আঙ্কেল-আন্টিকে বোঝানোর জন্য। যে মানুষ লুঙ্গি, চা, পান বয়কট করার পর সেগুলোর কাছে আর যায়নি সে নারীর কাছেও যেতে পারবে না। তাকে বিয়ে দেওয়া মানে বড় ধরনের ঝামেলা বাধানো। আঙ্কেল বললেন- তোমরা আমার কথার ঠিক ঠিক জবাব দেবে।

- জি আঙ্কেল। ঠিক ঠিক জবাব দেব।

- তোমরা কি ফেসবুক, ইউটিউব মোটের ওপর ইন্টারনেট বয়কট করতে পারবে?

- না আঙ্কেল, সেটা সম্ভব না। ফেসবুক-ইন্টারনেট বয়কট করে আমাদের পক্ষে বাঁচা সম্ভব না। এক/দেড় ঘণ্টার জন্য ফেসবুকে গোলোযোগ হলে আমাদের দম বের হয়ে যেতে চায়।

- পুরুষের জীবনে নারী হলো ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্টারনেটের মতো। নারীকে বয়কট করা সম্ভব না। বিয়ে না করলেও একসময় রান্না করার জন্য, কাপড় কাচার জন্য একজন বুয়া রাখতে হবে। আর সে হবে নারী। সুতরাং তোমাদের কোনো কথা এখানে খাটবে না। যদি কখনো ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্টারনেট বয়কট করতে পারো তো তখন এসো।

আগামী পরশু তসলিম ভাইয়ের বিয়ে। আহ তসলিম ভাই! সবখানে বয়কট চলে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close