reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

হানিফ ওয়াহিদের হাসির গল্প

অজ্ঞান

বহু বছর আগের ঘটনা মুন্সীগঞ্জের বান্দুরা এলাকায় গেছি এক হিন্দু বন্ধুর বড় ভাইয়ের বিয়ের বরযাত্রী হয়ে। তখন ঢাকা-বান্দুরা লঞ্চ চলাচল করত।

আমরা বরযাত্রী গেলাম বড় একটা ট্রলারে করে। ট্রলার সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। এর আগে আমি কোনো হিন্দুদের বিয়েতে বরযাত্রী হইনি। ওটাই প্রথম, ওটাই শেষ।

অনেকটা পথ বসে থাকায় যেতে যেতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। কনেবাড়ি যেতে রাত হয়ে গিয়েছিল। হিন্দু বিয়েতে বরযাত্রীদের একরাত থাকতে হয়। সকালে বাসী বিয়ে পড়ানোর নিয়ম। রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে শুতে যাব সে উপায় নেই। সারা রাত ঢোল পিটাতে থাকে। তাদের নাকি বিয়ে দুবার পড়াতে হয়। সারা রাত না ঘুমাতে পেরে শরীর খুব খারাপ লাগছিল। একা চলে আসব সে উপায় নেই, রাস্তাঘাট খুব খারাপ। পথও চিনি না।

সকালবেলা নিজেকে পাগলের মতো লাগছিল। খবর নিয়ে জানলাম দুপুরের খাবার খেয়ে বউ নিয়ে রওনা দিতে হবে।

আমার সময় কাটছিল না। এক বন্ধুকে নিয়ে হাঁটতে বের হলাম। হাঁটতে হাঁটতে লঞ্চঘাটে চলে এলাম। এখানে এসে ভালো লাগল। যাক, এখানে চা পাওয়া যাবে।

লঞ্চঘাট ফাঁকা, লোকজন তেমন নেই। কিছুক্ষণ আগে একটা লঞ্চ ছেড়ে গেছে।

চায়ের টং দোকানে বসলাম। অদূরে দুটো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে লঞ্চের অপেক্ষায়। বেশ সুন্দরী। নিজেরা হাসাহাসি করছে। পাশেই দুটি ছেলে মেয়েদের ফলো করছে। আচরণে বোঝা যায় কিছু বলতে চাইছে, সাহস পাচ্ছে না।

ব্যাপারটা অনেকক্ষণ লক্ষ করলাম। মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো, ছেলেদের একটু ভড়কে দিলে কেমন হয়? ছোটবেলা থেকেই মানুষকে অবাক করে মজা পাই। অবাক মানুষের মুখ দেখা আনন্দের।

বন্ধুকে বললাম, দাঁড়া, মেয়ে দুজনকে আই লাভ ইউ বলে আসি।

বন্ধু অবাক হয়ে বলল, কি বলবি?

আই লাভ ইউ।

মাথা ঠিক আছে তোর! গণপিটুনি খেয়ে আত্মহত্যা করতে চাস?

আরে কিচ্ছু হবে না। দেখ না ব্যাটা কী করি...

সে ভয় পাওয়া গলায় বলল, তোর কি মাথাটা গেছে নাকি? কী করছিস এসব?

আমার মাথা ঠিকই আছে।

সে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, না ঠিক নাই, চল এখান থেকে কেটে পড়ি। গণপিটুনি খেয়ে তোর মরার ইচ্ছে হতে পারে, আমার নাই।

রাখ না ব্যাটা, দেখ কি করি। বলেই আমি সামনে এগিয়ে গেলাম।

বন্ধু ভয়ে দোয়া পড়তে শুরু করল, লা ইলাহা ইল্লা আনতা-

আমি মেয়েদের দিকে হেঁটে এগিয়ে গেলাম। বন্ধু পারে তো দৌড় দেয়। ছেলেগুলো সতর্ক হলো। সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটা আমার দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকাল।

আমি বললাম, ম্যাডাম আপনারা কলেজে যাচ্ছেন?

মেয়েটা বলল, জি।

আমি এই এলাকায় নতুন, চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িটা কোনদিকে বলতে পারেন?

কেন?

চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলে আমার বন্ধু, ওদের বাড়ি যাব।

সে তো অনেক দূর!

ওহ তাই? তা গ্রামের নামটা কী?

মেয়েটা লালপুর বা এ জাতীয় কি যেন একটা নাম বলল।

আমি বললাম, আহ ইয়া লাভু।

মেয়েটা অবাক হয়ে বলল, এসব কী বলেন? মানে কি!

এটা ইতালিয়ান ভাষা। অর্থ, ভালো থাকবেন।

আপনি ইতালি থাকতেন নাকি?

জি ম্যাডাম।

মেয়ে দুজন হাসতে লাগল। পাশের মেয়ে হাসতে হাসতে উচ্চারণ করল, আহ ইয়া লাভু।

ছেলেরা আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।

লঞ্চ চলে এসেছে। মেয়েরা লঞ্চে উঠল। ডেকে গিয়ে দাঁড়াল। লঞ্চ ছেড়ে দিল। আমি হাত নেড়ে চিৎকার করে বললাম, ম্যাডাম, আহ ইয়া লাভু (দূরে দাঁড়ানো বন্ধু এবং ছেলেরা শুনল, আই লাভ ইউ)

মেয়েরা হাসল এবং হাত নাড়ল।

ছেলেদের দিকে তাকালাম। তারা চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি চায়ের দোকানে ফিরে এসে দেখি, ?বন্ধু অজ্ঞান!।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close