reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ মার্চ, ২০২৩

জুয়েল আশরাফের হাসির গল্প

চিৎপটাং

ফুলির পেছনে ঘুরে রোদে পুড়ে গায়ের রং তামাটে করে ফেলেছে হাবু। তবু পাত্তা পাচ্ছে না। ঘুরে-ফেরার সময়টা যদি পৃথিবী দেখার পেছনে খরচ করত তাহলে এত দিনে শুধু হেঁটেই পৃথিবীর অর্ধেক দেখা হয়ে যেত, এই ব্যাপারে হাবু শতভাগ নিশ্চিত। ফুলিকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা-তদবির কম করেনি। সব ধরনের প্রস্তুতির পরও ফলাফল শূন্য। হাবু ঠিক করল যা থাকে কপালে, চূড়ান্ত ফয়সালা আজ করেই ছাড়বে। ফুলিই জীবনের সব, না হয় মামলা ডিশমিশ।

গাবগাছের নিচে প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করে হাবু রোজ। আজও দাঁড়াল। এই পথ দিয়েই ফুলির আসা-যাওয়া। প্রেমিকা আসতেই হাবু মুখস্থ পঙ্ক্তি আওড়াল,

ওহে আমার ফুলি,

আর কতকাল পেছনে ঝুলি?

প্যান্ট, জামা, ছেঁড়া জুতা অমলিন ধূলি!

নিজের টাকায় কেন সব- বাবার বাজখাঁই বুলি!

কবিতা শেষ হওয়ার আগেই ফুলি নাকের নিচের ঘাম মুছে নিয়ে বলল, আমি তো তোমাকে আগেই বলেছি তোমাকে আমার পছন্দ না।

হাবুর ইচ্ছে হলো হো হো করে হেসে উঠবে। কিন্তু সে মুখ টিপে অন্যদিকে তাকিয়ে মিচকে হাসল! তার ধারণা, তাকে দেখলে পাড়ার সব মেয়েরা উদাস বনে হারায়। শুধু ফুলিই তাকে অপছন্দ করে।

মিচকে হাসি থামিয়ে হাবু বলল, শোনো ফুলি, এটা তোমার সাজানো কথা। আমাকে অপছন্দ করার কারণ অন্য কিছু। তুমি নিজেও জানো দেখতে আমি কত হ্যান্ডসাম।

ফুলি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলল, তোমার যত রূপই থাক তোমাকে আমার পছন্দ না।

হাবু জিজ্ঞেস করল, তাহলে কেমন ছেলে তোমার পছন্দ?

ফুলি বলল, সুজালের মতো ছেলে আমার পছন্দ। নিজের গাড়ি-বাড়ি-টাকাপয়সা থাকবে এমন ছেলে।

ফুলির কথা শুনে হাবু ছদ্ম হাসি হেসে বলল, বলবে তো তোমার গাড়ি চাই, তোমার চাহিদাগুলো জানা থাকলে এত দিনে তোমাকে নিয়ে আমার গাড়িতে ৬৪টি জেলা বেড়ানো হয়ে যেত।

ফুলি যেন আনন্দে আত্মহারা। হাবুর গাড়ি আছে শুনেই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়যন্ত্র করে সে জিজ্ঞেস করল, সত্যিই তোমার গাড়ি আছে?

হ্যাঁ আমার গাড়ি আছে।

সত্যি বলছো?

হ্যাঁ গো হ্যাঁ। সুজালের চেয়েও ভালো গাড়ি আছে। আমার ডিজিটাল জাপানি গাড়ি। পেট্রল ছাড়াই চলে। গাড়িতে কখনো পেট্রল অকটেন লাগে না।

ফুলি অধিক আহলাদে গদগদ গলায় বলল, আমার গাড়িতে ভীষণ ঘুরে বেড়ানো শখ।

হাবুও খুশিতে গদগদ হয়ে বলল, আমি কালই তোমাকে নিয়ে পুরো শহর ঘুরব। তুমি শুধু একবার বলো- আই লাভ ইউ।

ফুলি বলে উঠল, যদি কাল সত্যি সত্যিই তোমার গাড়ি দেখাতে পারো তখন বলব।

পরেরদিন হাবু গাড়ি এনে হাজির। রোজকার নিয়ম মেনে ফুলি দেরিতে এলেও আজ এলো তাড়াতাড়ি। সেজেগুজে ভারিক্কি চালে হাঁটতে হাঁটতে হাবুর কাছাকাছি এসেই উত্তেজিত হয়ে বলল, গাড়ি এনেছো? গাড়ি কোথায়?

হাবু ফুরফুরে মেজাজে পকেটে হাত ঢোকাল। একটা খেলনার গাড়ি বের করে খুশি গলায় বলল, মামা এনেছেন জাপান থেকে। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। বড় হয়েও যত্ন করে রেখেছি। দারুণ গাড়ি, জাপানি গাড়ি। রিমোট ছাড়াই চলে, শুধু হাত দিয়ে ঘোরাতে হয়।

ফুলি যেমন উত্তেজিত হয়ে এসেছিল, যাওয়ার সময় গেল আরো উত্তেজনায়। শুধু যাওয়ার আগে হাবুর কানের নিচে কী যেন একটা বাজিয়ে দিয়ে গেল, আর তাতেই হুমড়ি খেয়ে কয়েক হাত দূরে চিৎপটাং। তারপর থেকেই চারপাশটা কেমন হলুদ, শুধু হলুদ রংই দেখছে হাবু।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close