
মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেনের হাসির গল্প
প্রেডিকশন টু প্রফেশন

কাতার বিশ্বকাপ, ২০২২-কে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে ফুটবল উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। বলা চলে, বিশ্বকাপের সময় দেশ যেন দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা জিতলেই পরের দিনই তাদের জার্সি বিক্রির হিড়িক পড়ে যায় দোকানগুলোতে। পতাকার কথা তো বলাই বাহুল্য। কে কার চেয়ে বড় পতাকা বানাতে পারে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। আর জামালপুর জেলায় তো ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার পতাকার ডিজাইনে বাড়িই বানিয়ে ফেলেছে দুই সাপোর্টার।
আবার প্রেডিকশন করে পুরস্কার নাও, এমন পোস্টের অভাব ছিল না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। কেউ কেউ প্রেডিকশন করে রীতিমতো আলোচনায়। তেমনি একজন পলাশপুরের পলাশ, যিনি এখন প্রেডিকশন পলাশ বলেই বেশি পরিচিত। তার করা প্রেডিকশন আল জাজিরার রোবট কাশেফ কিংবা ব্রাজিলের লিভিং নসট্রাডামোসের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।
পলাশের প্রেডিকশনের চমক শুরু মূলত আর্জেন্টিনা ও সৌদি আরবের ম্যাচ দিয়ে। পলাশ খেলা শুরু হওয়ার আগেই বলে দিয়েছিল আর্জেন্টিনা হারবে, শুধু হারবেই না ২/১ গোলের ব্যবধানে হারবে এটাও বলে দিয়েছিল। তখন পলাশকে সবাই পাগল বলে সম্বোধন করেছিল। কিন্তু যখন আর্জেন্টিনা হেরে যায় ও পলাশের প্রেডিকশন গোল ব্যবধানসহ মিলে যায়, তখন থেকেই তিনি আলোচনায়।
পলাশের করা প্রেডিকশন বেশির ভাগই মিলে যায়, শুধু সে ব্যক্তিগতভাবে ব্রাজিলের সাপোর্টার হওয়ায় ক্রোয়েশিয়া বনাম ব্রাজিলের ম্যাচটিতে তার প্রেডিকশন ভুল হয়। এমনকি ফাইনাল খেলায় ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা খেলবে এটাও সে আগেই বলে দিয়েছিল।
প্রেডিকশন পলাশ নামে সে যেমন খ্যাতি পেয়েছে, তেমনি আর্জেন্টিনা সমর্থকদের রোষানলেও পড়েছে। এর কারণ সৌদি ও আর্জেন্টিনা ম্যাচে করা তার প্রেডিকশন।
প্রেডিকশন করে আলোচনায় লাইম লাইটে আসার পর সে এটাকে পেশা হিসেবেও নিয়ে নেয়। এখন তার বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা লেগেই আছে। সে এখন অগ্রিম বলে দেয় কার ভাগ্যে কী ঘটবে। এখানে সে অবশ্য ধান্দাবাজির আশ্রয় নিয়েছে। যখন এলাকার মানুষ মধ্যরাতে খেলা দেখায় মগ্ন ছিল, তখন তিনি গ্রামের বাড়িভিটার কোনায় তাবিজ পুঁতে রাখত। আবার কারো কারো বাড়িতে গাছের ডালে তাবিজও বেঁধে রেখেছিল। এটাও বলা চলে তার একটা প্রেডিকশন। সে বুঝতে পেরেছিল, মানুষ ভবিষ্যৎ জানার জন্য তার কাছে আসবে।
এক দিন এক লোক এসে তার কাছে বলছিল-
- ভাই, আমার ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে কেন?
- আপনার ব্যবসা তো খারাপই যাবে। আপনার বাড়ির আমগাছের মগডালে আপনার শত্রুপক্ষ আপনার ব্যবসায়ের ক্ষতি করার জন্য তাবিজ বেঁধে রেখেছে।
লোকটি বাড়িতে গিয়ে দেখে সত্যি সত্যিই তাবিজ বাঁধা।
এটা প্রচার হওয়ায় প্রেডিকশন পলাশ আরো টপে উঠে যায়।
তার এমন সাফল্য দেখে আর্জেন্টিনার এক সাপোর্টার মনে মনে একটা প্ল্যান করে। তার ভ-ামি রুখতে টিনা নামের এক মেয়ে, যে কি না আর্জেন্টিনার কট্টর সাপোর্টার। তার পেটে বালিশ বেঁধে, বালিশের ওপরে শাড়ি এমনভাবে পড়ানো হয়, যাতে মনে হয় টিনা ৯ মাসের প্রেগন্যান্ট। সঙ্গে আরো কিছু আর্জেন্টাইন সাপোর্টার নিয়ে প্রেডিকশন পলাশের বাড়িতে উপস্থিত হয়।
পলাশকে বলে, এত দিন তো অনেক প্রেডিকশন করলে, বলো তো ওর ছেলে হবে নাকি মেয়ে?
পলাশ একটু চিন্তা করে ভাব নিয়ে বলে, ওর ছেলে হবে।
যেই বলা, তখনই তার পিঠে কিল আর কিল। কেউবা আবার ঘুসি মারা শুরু করল। পলাশ নিচ থেকে যতই বলে, আমাকে মারছেন কেন? কিন্তু কে শোনে কার কথা! অবশেষে যখন জানতে পারে, এ মেয়েটির বিয়েই হয়নি তখন সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, এ রকম পেট ফোলা মেয়ের বিয়েই হয়নি। এটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। এ ঘটনার পর থেকে সে আর কখনো কোনো বিষয়ে প্রেডিকশন করে না।
"