
আহসান হাবিবের হাসির গল্প
সন্দেহ

জগলুল চৌধুরী তার সুন্দরী স্ত্রীকে সন্দেহ করেন। বিয়ের পর থেকেই তার এই রোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যদি সন্দিহান স্বামী হিসেবে অস্কার বা ওই জাতীয় কোনো বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকত। তাহলে সবার আগে সেটা বোধকরি তিনিই পেতেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি অফিসে গেলে নিয়ম করে পরপর দুবার ফোন করেন বাসায়। উদ্দেশ্য স্ত্রী বাসায় আছে কি-না। প্রথমবার করেন দুপুর ১২টার দিকে।
- রেনু?
- উ
- তুমি কোথায়?
- বাসায়
- কী করো?
- রান্না করছি
- তুমি রান্নাঘরে?
- হ্যাঁ
- ব্লেন্ডারটা একটু চালু করো তো।
- কোনটা চালাব ব্যাটারিতে চলে যেটা সেটা না ইলেকট্রিকে চলে যেটা সেটা?
- ব্যাটারিতে চলে যেটা সেটা চালাও।
স্ত্রী রেনু ব্লেন্ডারটা চালু করল ‘ঘর ঘররররর ঘর ঘররররররর... হয়েছে? শুনেছ?’ স্ত্রী জানতে চাইল।
- হ্যাঁ ঠিক আছে। আচ্ছা রাখি। স্বামী আপাতত নিশ্চিত হলো যাক স্ত্রী বাইরে কোথাও যায়নি। বাসাতেই আছে।
দ্বিতীয় ফোনটা লাঞ্চের পর, প্রায় সেই একই ভাঙা রেকর্ড। যদি ধৈর্য পরীক্ষায় অস্কার বা ওই জাতীয় কোনো বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে সবার আগে সেটা বোধ করি জগলুল সাহেবের স্ত্রীই পেতেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
- রেনু?
- উ!
- হ্যালো, তুমি কোথায়?
- বাসায়
- কী করো?
- রান্না করছি
- এখনো রান্না ঘরে?
- কী করব, গ্যাস ছিল না। রান্না শেষ করতে পারিনি।
- ও আচ্ছা, ব্লেন্ডারটা একটু চালু করো তো আবার।
- কোনটা চালাব? ব্যাটারীতে চলে যেটা সেটা না ইলেকট্রিকে চলে যেটা সেটা?
- ব্যাটারিতে চলে যেটা সেটা চালাও।
স্ত্রী ব্লেন্ডারটা চালু করল, ‘ঘর ঘররররর ঘর ঘররররররর... হয়েছে? শুনেছ?’ স্ত্রী জানতে চাইল।
- হ্যাঁ ঠিক আছে। আচ্ছা রাখি। স্বামী আপাতত নিশ্চিত হলো যাক স্ত্রী বাইরে কোথাও যায়নি। বাসাতেই আছে।
কিন্তু তারপরও যেন জগলুল চৌধুরীর সন্দেহ যায় না। এক দিন কী হলো, ফোন না করে সোজা বাসায় এসে হাজির হলেন। এসে দেখেন স্ত্রী নেই। কাজের ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করলেন।
- তোর খালাম্মা কই?
- বাইরে গেছে।
- সঙ্গে কিছু ছিল?
- হ একটা ব্যাগ ছিল।
- ব্যাগে কী ছিল?
- ক্যামনে কমু ব্যাগে কী ছিল দেখি নাই।
- সঙ্গে কেউ ছিল?
- না
স্বামী জগলুল চৌধুরীর কী হলো ছুটে গেলেন রান্নাঘরে। গিয়ে দেখেন সব আছে জায়গা মতো। মরিচের ডিব্বা মরিচের জায়গায়, তেলের বোতল তেলের জায়গায়, চিনির বয়াম চিনির জায়গায়, লবণের পোটলা লবণের জায়গায়, চালের ড্রাম ঠিক জায়গায়... ইলেকট্রিকের ব্লেন্ডারটাও তার জায়গায় শুধু ব্যাটারিতে চলে ব্লেন্ডারটা নেই।
গল্পটা এখানে শেষ হলেও চলত। কিন্তু কথায় বলে না, এক মাঘে নাকি শীত যায় না।
তারপর অনেক দিন গেছে। জগলুল চৌধুরী আছেন, তিনি এখন বড় কর্মকর্তা; তার ব্লেন্ডার ক্যারিয়ার স্ত্রীও আছেন। তাদের ছেলে মেয়েও হয়েছে। তো এক দিন স্ত্রী ফোন দিলেন
- তুমি কোথায়?
- অফিসে
- কী করছো?
- কয়েকটা জরুরি পেন্ডিং ফাইলে সাইন করছি।
- তোমার রুমে?
- তো আর কোথায়?
- কিছু খেয়েছ?
- ভাত খেয়েছি, এখন একটু জুস খাব।
- ভালো, মেয়েটাকে বলো ইলেকট্রিক ব্লেন্ডারে জুসটা বানাতে, আর জানালার পর্দাটা টেনে দাও। বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে।
‘ঘর ঘররররর ঘর ঘররররররর...!’ মেয়েটা জুস বানাচ্ছে বোধহয়।
"