reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২২

সুলতান মাহমুদের হাসির গল্প

ফুটবলের উন্মাদনা

তখন আমরা সবুজ বাংলা উচ্চবিদ্যালয়ে ক্লাস এইটে পড়ি। স্কুলে আমরা নেতা নেতা একটা ভাব নিয়ে চলাফেরা করি। কারণ সিক্স, সেভেনে পড়ুয়াদের বাচ্চা বাচ্চা মনে হতো আর নাইন, টেনে যারা পড়ে তাদের মুরুব্বি মনে করতাম। সেক্ষেত্রে স্কুলের মধ্যে ক্লাস এইট হচ্ছে শক্তিশালী এবং কর্তৃত্বস্থানীয়। দিন কয়েক পরেই নব্বই দশকের শেষ ফুটবল বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের আগে আমাদের স্কুলের বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে। স্কুলের বিশ্বকাপ মানে আমাদের ইন্টার ক্লাস ফুটবল প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আমরা শক্তিশালী দল হওয়া সত্ত্বেও বিগত দুই আসরে সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এবার আমাদের সামনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। ক্লাসের মধ্যে আমি সবচেয়ে ভালো(!) ফুটবল খেলোয়াড় বলে কেউ ইনজুরি হলেই শুধু আমার ডাক পড়ে। আমাদের দলের চৌকস খেলোয়াড় হচ্ছে সরুজ, মাসুদ, আ. কাদের, ভারত, মোতালেব, দুলাল, সোহেল, শিপন, মাহবুব, চানু, হুমায়ুন, গীরেন্দ্র, সুভাষ। আর আমি, শাকিল, খালেক, মোশারফ, আমরা কয়েকজন ভল্যান্টিয়ারের কাজ করি। আমরা এবার ফাইনালে ক্লাস সেভেনের সাথে খেলব। আগামীকাল ফাইনাল খেলা বলে আজকে সন্ধ্যায় বন্ধুরা সবাই মিলে আড্ডা দিয়ে রাতে বাসায় ফিরলাম। মাথায় শুধু ফুটবল খেলা ঘোরাঘুরি করছে। খেলার চিন্তায় কোনো রকমে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু খেলার উন্মাদনায় কিছুতেই ঘুম আসছে না। ফাইনালে কয়টা গোল হবে, কে কে গোল করবে, বিজয়োৎসব কীভাবে হবে, আমি নিজে চান্স পাব কি-না ইত্যাদি ভাবনা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই। ফাইনাল খেলা শুরু হয়েছে। মোতালেব পায়ে ব্যথা পাওয়ায় আমি খেলতে নেমেছি। ডিফেন্সের দায়িত্বে পালন করছি। ফাইনাল খেলার সুযোগ পেয়ে আনন্দ আর উত্তেজনায় জোরে একটা কিক দেওয়ার জন্য পা টা নিশপিশ করছে। হঠাৎ বলটা আমার সামনে চলে এলো আর আমিও বলটাকে ক্লিয়ার করার জন্য জোরে একটা কিক মারলাম। বলটা কোথায় পড়ল তা দেখতে না পারলেও, ঠিকই টের পেলাম পায়ের আঙুলে প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছি আর খুব জোরে একটা শব্দ হয়েছে। চোখ মেলে দেখি আমি চৌকিতে শুয়ে আছি। স্বপ্নের মধ্যে বল ভেবে টিনের বেড়ার খুঁটিতে সজোরে লাথি মেরেছি আর পায়ের আঙুলটা মচকে গেছে। জোরে শব্দ হওয়ায় বাবা, মা ঘুম থেকে জেগে আমাকে হালকা বকাঝকা করে ঘুমিয়ে গেলেন। আমাদের স্কুলের সবার প্রিয় শোয়েব স্যার হচ্ছেন খেলাধুলায় উৎসাহব্যঞ্জক একজন মানুষ। স্কুলের যে কোনো সাংস্কৃতিক বা ক্রীড়া অনুষ্ঠানে স্যার সবার সঙ্গে মিশে সাহস আর উৎসাহ জোগান। আজকেও স্যার আমাদের সাহস দেওয়ার জন্য দুই ক্লাসের ক্যাম্পে ঘুরে সবকিছু উপভোগ করছেন। স্যারের শারীরিক গঠন এবং উচ্চতা প্রায় আমাদের মতোই। একত্রে দাঁড়িয়ে থাকলে স্যারের গোঁফ আর বয়সটাই শুধু ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়। সত্যি সত্যি ফাইনাল খেলা শুরু হয়ে গেছে। ায়ের আঙুলে হালকা ব্যান্ডেজ নিয়ে আমি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছি আর খেলা উপভোগ করছি। টানটান উত্তেজনায় খেলা উপভোগ করছে সবাই। খেলার প্রথমার্ধে গোলশূন্য ড্র হয়েছে। আবার দ্বিতীয়ার্থের খেলা শুরু হলো। এখন শেষ ১০ মিনিটের খেলা চলছে। বন্ধুরা একত্রে দাঁড়িয়ে বিপুল উত্তেজনায় খেলা দেখছে। আমার পাশে দাঁড়ানো এক বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে খেলা উপভোগ করছি। যেইমাত্র আমাদের দলের স্ট্রাইকার সুরুজ গোল করার জন্য বিপক্ষ দলের গোল পোস্টের খুব কাছাকাছি এবং বল গোল পোস্টের ভেতরে তখন আনন্দে আমি আমার পাশের বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে মাথার ওপর পর্যন্ত উঁচু করে ফেললাম। না, অফসাইডের জন্য গোল মিস হয়েছে। গোলটা মিস হওয়ায় কথা শেয়ার করার জন্য পাশের সেই বন্ধুর মুখের দিকে তাকাতেই চরম ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম। বন্ধু ভেবে এতক্ষণ যার কাঁধে হাত রেখে খেলা দেখছিলাম আর জড়িয়ে ধরেছিলাম সে আমাদের বন্ধু নন। তিনি আমাদের প্রিয় শোয়েব স্যার। চরম লজ্জিত হয়ে ক্ষমা চাইতেই স্যার মুচকি হেসে সরে গেলেন আর আমরা আবার খেলা উপভোগ করতে লাগলাম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close