reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ নভেম্বর, ২০২২

জুয়েল আশরাফের হাসির গল্প

একি কাণ্ড!

পাখাল একটি পত্রিকা অফিসে চাকরি করে। জরিনার সুপারিশেই আমড়া কাঠের ঢেঁকি হয়েও চাকরিটা পেয়েছে। কারণ সম্পাদক সাহেব হলেন জরিনার আপন মামা। আজ পাখালের মন বেদনায় অতিশয় ভরা। এই মুহূর্তে সে অফিস ঘরে মন খারাপ নিয়ে ‘আজ কোনো কাজ নয়, সব ফেলে দিয়ে ছন্দোবন্ধগ্রন্থগীত, এসো তুমি প্রিয়ে...’ কবিতা আবৃত্তি করছে। মন ভালো রাখার জন্য কবিতা আবৃত্তি খুব আরামপ্রদ। কিন্তু মন ভালো তো হচ্ছেই না বরং কয়েক গুণ বেড়ে গেল। জানালার ধারে একটা কাক বসা, হাত দিয়ে তাড়াতে হলো না। পাখালের কণ্ঠে ছন্দোবন্ধগ্রন্থগীত শুনেই কা কা কা করতে করতে পালাল।

আজ পাখালের জন্মদিন। নিজের জন্মদিনে সবাই থাকে হাসিখুশি। কিন্তু সে হাসতে পারছে না। কারণ আজ অফিসের বসেরও জন্মদিন। একই দিনে দুইটি জন্মদিবস পড়েছে। সন্ধ্যায় বসের জন্য কেক কাটা হবে। কেকের দায়িত্ব পড়েছে পাখালের ওপর। বিকালের মধ্যেই কেক এনে দিতে হবে অফিসে। সে এখনো কেকের অর্ডার দেয়নি। নিজের অফিস ঘরে মন খারাপ নিয়ে বসে আছে। গত সপ্তাহেই জরিনার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে- সারা শহর ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে টগবগ টগবগ ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু অফিস থেকে আজ সে ছুটিই পাবে না, বরং সকাল থেকেই বস তাকে বিভিন্ন কাজ দিয়ে রেখেছে।

নিজের জন্মদিনের কথা বলে এক দিনের ছুটি চাওয়ার আগেই বস মনে করিয়ে দিলেন, আজ বিশাল আনন্দের মধ্য দিয়ে বসের ৫৬তম জন্ম উৎসব পালন হবে। এজন্য অফিস পরিষ্কারের কাজ, প্রতিটি অফিস-ঘর সাজানো, বসার ব্যবস্থা, আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে আন্ডাবাচ্চাদের উত্তম স্থানে ‘হিসু’ করানো- এসব কাজের ভার পাখালের ওপর। স্বপ্ন ছিল জরিনাকে সঙ্গে নিয়ে কেক কেটে নিজের ৩৬তম জন্মোৎসব পালন করবে। তার স্বপ্নের ওপর বস স্টিমরোলার চালিয়েছে। সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার কোনো রাস্তা জরিনার কাছে পাওয়া যাবে ভেবেই জরিনাকে ফোন করল। ওপাশে জরিনার বাঁজখাই গলা।

হ্যালো জরিনা।

কানবার লাগচো কিল্লাই? তোমারে মারচে কিডাই?

জরিনা, আমি বড় বিপদের মধ্যে আছি।

বিপদ! কিসের বিপদ? কী বিপদ হইচে কও?

আজ আমার জন্মদিন। আশা ছিল তোমাকে নিয়ে পুরান ঢাকার সব কয়টা গলিতে অলিতে ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে টগবগ টগবগ করব। সন্ধ্যার পর বুড়িগঙ্গার পচা পানিতে ভাসমান নৌকার ভেতর ৩৬টা মোমবাতি জ্বালিয়ে কেক কাটা দিব। কিন্তু তোমার সম্পাদক মামা সব নষ্ট করে দিয়েছে। আমাকে ছুটি দেয়নি। আজ তার জন্মোৎসব হবে অফিসে। আমার ৩৬তম জন্মদিন এ বছর পালন আর হবে না। জরিনা শুনছো?

শুনবার লাগচি তো। কইতে থাকো।

আমার বলা শেষ। তুমি একটা উপায় বের করো যেন আমার জন্মোৎসবে তোমাকে সঙ্গে নিয়ে কেক কাটতে পারি।

ভাববার দাও। কইতাচি কী করতে অইবো।

পাখাল ১০ মিনিটের ভেতর সমাধান পেয়ে গেল। জরিনা সব শিখিয়ে দিল। খুশিতে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল কেকের অর্ডারের করতে। বিকেলের মধ্যেই রাজকীয় সজ্জায় সজ্জিত হয়ে গেল অফিসঘর। অতিথিরা এলো। জরিনাও এলো। বিশাল হলঘরে বসের ৫৬তম জন্মোৎসব। সম্পাদক সাহেব কেক কাটার জন্য ছুরি নিলেন। পাখালের আনিত কেক সামনে রাখা। সবাই তালি বাজিয়ে বলতে লাগল ‘হ্যাপি বার্থ ডে বস’। কিন্তু কেকের বাক্স খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ বসের ৯২তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা!

একি কান্ড?

পাখাল লাজুক মুখে বলল, আমার আর বসের জন্মদিনটা এক কেক দিয়েই সেলিব্রেট হোক। আমার বয়স ৩৬, বসের ৫৬।

মোট ৯২তম জন্মদিন। এসব শুনে, সম্পাদক সাহেব জ্ঞান হারিয়ে

হুমড়ি খেয়ে কেকের ওপর পড়ে গেলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close