reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৬ নভেম্বর, ২০২২

জোবায়ের রাজুর হাসির গল্প

নববধূ

বিয়ের কিছুদিন পর নিশির মনে হলো বাবা-মা তাকে ভালো একটি পরিবারে বিয়ে দিলেও ভালো ছেলের হাতে পাত্রস্থ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সফিক দেখতে যথেষ্ট সুদর্শন। ভালো বংশের ছেলে তো বটেই। কিন্তু সফিকের ব্যক্তিত্ববোধ নিয়ে নিশি কখনো সম্ভ্রান্ত সমাজে গলা উঁচু করে বলতে পারবে না তার স্বামীটি একজন সৎ মানুষ।

জমিদার বংশীয় ছেলে সফিক। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে হওয়ার কারণে আনন্দ আহ্লাদে বড় হয়েছে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানো এই যুবক। বখাটে বন্ধুদের তালিকায় যুক্ত হতে হতে পড়ালেখার অবনতি ঘটতে থাকে। ফলে বই খাতা ছুড়ে ফেলে সে মিশে যায় বন্ধুদের সঙ্গে বেপরোয়া চা চানাচুরের রমরমা আড্ডায়। ধূমপানের সূত্রপাতটা সেখান থেকেই। লাল টকটকে রক্তিম ঠোঁটগুলো অল্প দিনে কালো কুঁচকুঁচে হয়ে যায়। ছেলের এমন অধঃপতনে বাবা মা দুজনেই চিন্তিত। বহু চেষ্টায় অনেক অশোভনীয় কর্ম কীর্তির কালো অধ্যায় থেকে আলোর জগতে ফেরাতে সফল হলেও ধূমপানের নেশাটা থেকে আর রেহাই পায়নি সফিক। বখাটেপনা ছেড়ে আগের তুলনায় কিছুটা ভদ্র হলেও লোকচক্ষুর আড়ালে সে ঠিকই বিড়িতে জোরসে টান মেরে বাতাসে ধোঁয়া ছাড়ে।

২.

সফিকের যখন বয়স ২৫, বেশ ধুমধামে তার বিয়ে হয় রূপসী নিশির। এই সংসারে এসে নিশি সবার কাছ থেকে যথাযথ মূল্যায়ন পেলেও স্বামীর বিরুদ্ধে কিছুটা অভিযোগ থেকেই গেল। ধূমপায়ী সফিকের এই বিড়ি টানার বদ স্বভাবকে সে মানতেই পারে না। কেন মানবে! মুখ থেকে বিড়ির এমন বিশ্রী গন্ধ বের হলে সেটা নিঃসন্দেহে একটি নিন্দিত কাজ।

নিশির শাশুড়ি হামিদা বেগম পুত্রবধূর এই অভিযোগের কথা জানেন। তিনি নিজেও ছেলের ওপর বেশ বিরক্ত। তাই বৌমা নিশিকে প্রায়ই সান্ত¡না দিয়ে বলেন, ‘এক দিন সব ঠিক হয়ে যাবে। বিয়ের পর তোমার শ্বশুরকেও আমি অনেক বাজে অভ্যাস থেকে ফিরিয়ে এনেছি।’ শাশুড়ির কথায় মন গলে নিশির। এই পরিবারের মানুষগুলো এত ভালো কেন সে নিজেও জানে না।

বিয়ের তিন মাসের মাথায় সুখবর আসে জমিদার পরিবারে। নিশির মা হওয়ার আগাম বার্তায় পুরো পরিবারে আনন্দের ঢল নামে। হামিদা বেগম নিশির শরীর স্বাস্থ্য সেবায় যথেষ্ট উপদেশ দেন। এই বিশেষ সময়ে ভালো ভালো খাওয়ানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু নিশি রসিক নয়। খাওয়া-দাওয়ার বেলায় তার চিরকাল আলস্যব্যাধি। কিন্তু হামিদা বেগম নাছোড়বান্দা। বংশের অনাগত বাত্তির জন্য তিনি বড় ব্যাকুল। সে বাত্তির শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নিশির দরকার যথেষ্ট মনোযোগ, হামিদা বেগম সোজা এটাই বোঝেন আপাতত।

এক থালা রকমারি ফলের সমাহার নিয়ে এসে হামিদা বেগম নিশিকে বললেন, ‘এগুলো সব খাবে কিন্তু!’ নিশি দুটো আঙুর মুখে দিয়েই বলল, ‘ভাল্লাগছে না মা!’ হামিদা বেগম আপত্তির সুরে বললেন, শোনো বৌমা, সফিক পেটে থাকতে আমি যা যা খেয়েছি, সবগুলো এখন ওর প্রিয় খাবার! চুপচাপ এগুলো খেয়ে নাও।’ নিশি দুষ্টুমির ছলে হেসে বলল, ‘তাহলে মা বিড়িটা যদি একটু কম টানতেন, তাহলে ভালো হতো।’ হামিদা বেগম তাজ্জব সুরে বললেন, ‘মানে?’ নিশির জবাব, ‘ওই যে বললেন সফিক পেটে থাকতে আপনি যা যা খেলেন, সব এখন ওর প্রিয়। সফিকতো প্রচুর বিড়ি টানে! নিশির কথায় হামিদা বেগম ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close