reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩০ অক্টোবর, ২০২২

ওলি মুন্সীর হাসির গল্প

খান বাবার কিডস স্কুল

করোনাকালীন সময়ে দেশের মধ্যে বিভিন্ন অনলাইন স্কুলের আনাগোনা বেড়েই চলছে। তারা প্রথমত বাচ্চাদের পাঠ্যবইয়ের পড়াশোনা করালেও এখন আর সেই পর্যায়ে নেই। তারা এখন বাচ্চাদের কীভাবে ব্রেন ডেভেলপ করা যায় পাঠ্য বই ছাড়া সে বিষয়ে হুমড়ি খেয়ে লেগেছে। তার কারণ যাইহোক না কেন সবচে বড় কারণ হচ্ছে ব্যবসায়ী প্রতিযোগিতা।

যেমন অমুক অনলাইন স্কুল শুরু করেছে বাচ্চাদের কীভাবে খুব কম সময়ে ইংরেজিতে পারদর্শী করা যায়।

তার দেখাদেখি তমুক অনলাইন স্কুল শুরু করেছে বাচ্চাদের কীভাবে অ্যাবাকাস শেখানো যায়।

আবার কেউ কেউ শুরু করেছে কিভাবে ম্যাথ এবং ক্যাডেট শিক্ষা তাড়াতাড়ি শিখানো যায়।

এসব ঠিক থাকলেও ফকির সাহেবের মাথায় এখন ভিন্ন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে যে, বাচ্চাদের নতুন কি শেখানো যায় ।

তাই তিনি মনস্থির করলেন তার অনলাইন স্কুলের জন্য একজন দক্ষ কনটেন্ট গবেষকের খুবই প্রয়োজন। তাই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে দিলেন তারা যেন ইন্টারভিউতে তাদের পরিকল্পনা সঙ্গে করে নিয়ে আসেন।

সার্কুলার দেওয়ার পরপরই বেশ কিছু লোক এসে ইন্টারভিউ দিতে শুরু করেছে-

প্রথম জন : ফকির সাহেব প্রশ্ন করলেন, আপনি আপনার পরিকল্পনা এবার বলতে পারেন-

প্রথম জন বলতে শুরু করল, আমার পরিকল্পনা হচ্ছে বাচ্চাদের বইয়ের পাঠ্যদান ছাড়া কীভাবে তাদের মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা যায়। যেমন- বাচ্চারা তার বাবা-মাকে কীভাবে বাসাবাড়ির কাজে হেল্প করতে পারে সে বিষয়ে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করা।

ফকির সাহেব মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, জি সাহেব। এসব পুরোনো আমলের চিন্তা। এবার আপনি আসতে পারেন কারণ অলরেডি এসব কনটেন্টের উপর আমার প্রোডাক্ট টিম কাজ করছে এবং কার্যক্রম চলছে।

তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তিকে ডাকা হলো-

দ্বিতীয় ব্যক্তি : আমার পরিকল্পনা হচ্ছে স্যার, আমাদের সমাজে দিন দিন মানবিক অবক্ষয় বেড়েই চলছে। আর সে অবক্ষয় রোধ করার জন্য বাচ্চাদের এবং তার গার্ডিয়ানদের একত্র করে তাদের সেবা-শুশ্রƒষা এমনকি গার্ডিয়ানদের পায়ের জুতো জোড়া বাহির থেকে হাতে তুলে এনে বক্সের ভেতরে কীভাবে রাখতে হয় সে বিষয়ে বাচ্চাদের শেখানোর জন্য ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করা। ফকির সাহেব মুচকি হেসে বললেন, আপনার কাছে আর কোনো আইডিয়া আছে? না হলে আপনি এবার আসতে পারেন, আপনার পরিকল্পনা খুব সুন্দর কিন্তু এরকম কার্যক্রম আমার স্কুলে অনেক আগেই চালু করা হয়েছে।

তৃতীয় ব্যক্তিকে ডাকা হলো-

তৃতীয় ব্যক্তি : আপনি আপনার পরিকল্পনা বলতে পারেন?

তৃতীয় ব্যক্তি বলতে শুরু করল, আমি এ পরিকল্পনা নিয়ে এসেছি যে, (চিলড্রেন আদার্স পারসন ডিসটেন্ট) বা একজন অপরিচিত লোক একটি বাচ্চার কতটুকু দূরত্বে থেকে কথা বলবে এবং তাকে কতটুকু স্পর্শ করতে পারবে। সেই বিষয়গুলো যাতে বাচ্চারা অনায়াসে তাদের বাবা-মায়ের কাছে বলতে পারে। ফকির সাহেব মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, গুড আইডিয়া। জি সাহেব, আপনি এবার আসতে পারেন। কারণ অলরেডি এ বিষয়ে আমার স্কুল কাজ করে যাচ্ছে।

এবার সর্বশেষ ব্যক্তিকে ডাকা হলো-

ফকির সাহেব বলেন, আপনি আপনার পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে বলতে পারেন।

চতুর্থ ব্যক্তি গলাটা একটু পরিষ্কার করে বলতে শুরু করলেন, স্যার আমি এই পরিকল্পনা নিয়ে এসেছি যে, বর্তমানে আমাদের দেশে খান বাবা নামে একজন লোকের আবির্ভাব ঘটেছে। তার দরবারে গিয়ে কোনো মহিলা খালি হাতে ফেরত আসে না। সবাই একটা একটা করে বাচ্চা নিয়ে আসে। এই কথা শুনে ফকির সাহেব একটু রাগান্বিত হয়ে বললেন- তো কি হয়েছে?

আপনি এই বিষয়টি এখানে তুললেন কেন? আপনি কি ফাজলামি করতে এসেছেন এখানে?

-জি স্যার, আমি বিষয়টি ক্লিয়ারলি বলছি একটু শুনুন।

এই খান বাবা এবং তার দরবার ফেরত মায়েদের টাকাণ্ডপয়সার কোনো কমতি নেই। তাই আমার পরিকল্পনা হলো এসব কাবিননামাহীন পশ্চিমা কালচারাল সন্তানদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। তাই? আপনার স্কুল কোম্পানির বিজনেস ভালো করার পাশাপাশি এসব বাচ্চাদের উপর কাজ করার জন্যই আমি

- তার মানে আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন?

- আমি বলতে চাচ্ছি এসব বাচ্চারা বড় হয়ে কীভাবে তাদের বাবার পরিচয় সমাজে প্রকাশ করবে এবং কাবিন নামাহীন পশ্চিমা কালচারের সাথে বাঙালি কালচার কতটুকু সাংঘর্ষিক তার ওপর ভিত্তি করে ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করা- এই হলো আমার হালকা চিন্তাভাবনা।

ফকির সাহেব অবাক হয়ে বললেন, এটা আপনার হালকা চিন্তাভাবনা- কি আশ্চর্য!

তিনি তাৎক্ষণিক তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে বললেন, ভেরি গুড আইডিয়া। দারুণ। আপনাকেই খুঁজছি আমি। আগামীকাল থেকে আপনি আমার অফিসে জয়েন করতে পারেন। এই নিন আপনার অ্যাপার্টমেন্ট লেটার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close