reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেনের হাসির গল্প

ডিম সম্মেলন

আজ ২৫ সেপ্টেম্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ডিম সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল থেকেই দেশি মুরগির ডিম, ব্রয়লার মুরগির ডিম, হাঁসের ডিম, কোয়েলের ডিম সবাই জড়ো হতে লাগল। উদ্দেশ্য একটাই, জন্মের পর থেকেই তারা শুনে আসছে ডিম আগে না মুরগি আগে- এ বিতর্কে কখনো আমরা জয়ী তো কখনো মুরগি জয়ী। কিন্ত আজ আমরা খুুব খুশি। কারণ, জন্মের পর থেকে শুরু করে এত দাম আমাদের কখনো হয়নি। মুরগির দাম বাড়লেও কখনো বাড়েনি ডিমের দাম। দেশের ইতিহাসে ডিমের সর্বোচ্চ দাম হওয়াতে আজ তাদের এই আনন্দ সম্মেলন। সম্মেলনে সবাই তাদের সারা জীবনের সুখণ্ডদুঃখের কথা বলবে।

হঠাৎ একটি ডিম বলে উঠল, যখন তেলের দাম বাড়ল সেটা মানুষ সহ্য করল, আর যখনই আমাদের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলো তখনই মানুষের গায়ে লেগে গেল। অথচ ডিম একটি নিখুঁত প্রাকৃতিক পুষ্টিকর খাবার।

আরেকটি ডিম বলল, আমার খুবই ভালো লাগছে জীবনে এই প্রথম এতটা দাম পেয়ে, টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে। এমনকি আমাদের নিয়ে টিভি চ্যানেল, প্রিন্ট মিডিয়ায় খুব হইচই পড়ে গিয়েছিল। কবি সাহিত্যিকরাও তাদের বিষয়বস্তুতে যারা কখনো চিন্তাও করেনি তারাও আমাদের নিয়ে ছড়া-কবিতা লিখেছেন। এটাও কম সৌভাগ্যের ব্যাপার না।

কথা শেষ হতে না হতেই একটি ডিম বলে উঠল, এত দিন মাছে ভাতে বাঙালি বললেও মাছের যে দাম! মাছের দাম বাড়াতে আমাদের ওপরে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। আমাদের রান্না করাও সহজ। কেউ কেউ অবশ্য আমাদের ভাজি করতে গিয়ে তেলের দাম বেশি হওয়ায় কম করে তেল দেয়। যার ফলে ভাজি হওয়ার সময় আমরা কেউ কেউ পুড়ে কালো হয়ে যেতাম। নিষ্ঠুরভাবে ভাঙার পর আবার খাওয়ার আগে এমন পুড়ে ফেলে বিভৎস চেহারা দেখে আমাদের খারাপই লাগত।

আরেকটি ডিম বলে উঠল শুনছি সরকার নাকি বিদেশ থেকে ডিম নিয়ে আসবে। খবরটা শুনে খুব খারাপ লাগছে। সরকার তো কত কিছুতে ভর্তুকি দেয়। দেশের মানুষের পুষ্টির জন্য আমাদের দাম ঠিক রাখতে ভর্তুকি দিলেই হয়। আবার বিদেশ থেকে ডিম আনতে গেলে পরিবহন খরচ বেড়ে এর মূল্য বেড়ে যাবে। হয়তো বিদেশিরা প্লাস্টিকের ডিম দিয়ে দিবে। তখন তো খেয়ে বাঙালিরা আমাদের বদনাম করবে। বিদেশি পণ্যের তো কোনো দোষ হয় না। দোষ হয় দেশি পণ্যের। আরেকটি ডিম বলে উঠল, আমাদের চুরি করতে গিয়ে এক লোক ধরা পড়ায় বেদম প্রহার করা হয়েছে। ভাবতে ভালোই লাগে। আগে শুনতাম সোনার গয়নাগাটি চুরি হয়, টাকা পয়সা চুরি হয়। এখন আমরাও চোরের টার্গেট।

এবার একটি ডিম বলে উঠল আগে মিটিং মিছিলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় আমাদের ঢিল ছোড়া হতো। এখন দাম বাড়াতে দাঙ্গা-হাঙ্গামায় অন্তত আর আমরা ব্যবহার হব না।

আরেকটি ডিম বলে উঠল, আমি যখন ফার্ম থেকে এক দোকানে গেলাম, একজন কাস্টমার বলে উঠল ‘ডিমের দাম এত বাড়তি কেন, মুরগি কি তেল খায়? মালিক জবাব দিল, তেল সরাসরি না খেলেও তারা যা খায় তার সঙ্গে তেলের সম্পর্ক রয়েছে। তেলের দাম বাড়াতে সবাই সুযোগ নিচ্ছে, দোহাই দিচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের।

তাহলে ডিমের দাম বাড়াতে এত জ্বালা কিসের শুনি? এই ডিমগুলো আমি যেদিন নিয়ে আসি, আসার পথে গ্যাস চালিত সিএনজিতে উঠেছি, নামার পরে ২০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা দিতে হইছে। ওই গাড়ি কি তেল দিয়ে চলে বলেন? কাস্টমার নিরুত্তর। তারপর আমতা আমতা করে বলে, ডিম এত ছোট ক্যান? দোকান মালিক এবার আরো রেগে বলেন, আপনি তো বলছেন ছোট। মুরগিকে জিজ্ঞাসা করেন ডিম পাড়া কতটা কষ্টের? যে পাড়ে তার ফাটে।

এরই মধ্যে কোয়েলের ডিম বলে উঠল, আমরা সাইজে ছোট হলেও আমাদের দাম এখন হালিপ্রতি ১৫ টাকা, আগে যেটা ছিল ১০ টাকা। যদিও অকটেন ৯০ টাকা থেকে হয়েছে ১৩৬ টাকা। যা কিনা ফিফটি পারসেন্টের ওপরে। আর আমার দাম বেড়েছে ফিফটি পারসেন্ট। এতে আমি অনেক খুশি।

সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে অনুষ্ঠানের সভাপতি রাজ হাঁসের ডিম সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, মানুষের মাঝে ধর্মের নামে বিভেদ থাকলেও আমরা কে ছোট, কে বড়, কার গায়ের রং সাদা, কার গায়ের রং বাদামি, কে দেশি কে ফার্মের? এসব না ভেবে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এখানে একত্রিত হয়েছি। আমরা আবারও বিশ্ব ডিম দিবসে এখানে সমবেত হব। সবাইকে আবারও ধন্যবাদ জানিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close