reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

শেখ সজীব আহমেদের হাসির গল্প

অঙ্ক পরীক্ষায় কবিতা

আহমদ নবম শ্রেণির ছাত্র। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলছে। ছাত্র ভালো, তবে মাঝে মাঝে পাগলামি করে।

রাত পোহালেই অঙ্ক পরীক্ষা দিতে যাবে। আহমদ বড় চিন্তায় আছে, কোনো অঙ্কই পারে না। পরীক্ষার হলে তো যেতেই হবে, পরীক্ষা তো দিতেই হবে। চিন্তায় ঘুম আসছে না। তাই টেলিভিশন দেখা শুরু করল, দেখতে দেখতে রাত ১টা পর্যন্ত সময় অতিবাহিত হয়ে গেল। তারপর ঘুমিয়ে পড়ল।

সকালে ঘুম থেকে ওঠে, আবার টেলিভিশন দেখা শুরু করল। তার মা-বাবায় কোনোকিছু জিজ্ঞাসা করলে বলে-

: তোমরা কোনো চিন্তা কইরো না, সব অঙ্কই পারি। তাই টেলিভিশন দ্যাইখা মনটা আরো পরিষ্কার করতাছি।

আহমদ বাড়ি থেকে রওনা দিল। পরীক্ষার হলে আসল এবং আসনে বসল। পরীক্ষা শুরু হলো। আহমদ তো বড় চিন্তিত, অন্তত এক ঘণ্টার আগে তো খাতা জমা নিবে না, এই এক ঘণ্টা কীভাবে অতিবাহিত করা যায়? চিন্তা করতে লাগল। সাদা পৃষ্ঠা তো জমা দেওয়া যাবে না, কিছু তো লেখতে হবে। প্রথম পৃষ্ঠা সাদা রেখে, পরের পৃষ্ঠায় লেখল কবিতা। কবিতা লেখা শেষ হলো ৩০ মিনিটে, আরো ৩০ মিনিট বাকি। প্রতিটি পৃষ্ঠায় একই কবিতা লেখতে লাগল।

এক ঘণ্টা শেষ হলো। আহমদ খাতা জমা দিতে গেলে, স্যার বললেন-

: পরীক্ষা শেষ নাকি?

: হ স্যার, পরীক্ষা শেষ, সব কমন পড়ছে। সারা রাতই অঙ্ক করছি, পাঁচ দিস্তা খাতা শেষও করছি।

: তিন ঘণ্টার পরীক্ষা এক ঘণ্টায় শেষ? তুমি নিয়মিত ক্লাস করোনি, হাতের লেখাও তেমন দ্রুত না!

: স্যার, আমি ক্লাস না করে পড়াবেট পড়ছি, আংগ বাড়ির নীল কমল স্যারের কাছে।

এখানে আইতে যাইতে অনেক সময় চইলা যায়, ভাবলাম সামনে পরীক্ষা, এই মাসটা ক্লাস না কইরা বাড়িতেই পড়ি, কামে লাগব।

স্যার: পড়াবেট পড়ছ, প্রাইভেট পড়নি?

: না স্যার, প্রাইভেট পড়িনি, পড়াবেট পড়ছি।

স্যার: দেখি তাহলে, খাতাটা?

স্যারে খাতা দেখছেন, আহমদ, এর ফাঁকে দৌড়িয়ে পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে চলে যেতে লাগল।

সামনে এক স্যার দেখে বললেন-

: আহমদ, দৌড় পারিস ক্যান?

: টয়লেটে যামু, এই পইড়া গেল রে!

অঙ্ক পরীক্ষক স্যার আসছেন দেখে, আহমদ আরো জোরে দৌড় দিয়ে চলে যাচ্ছে। অঙ্ক পরীক্ষক স্যার সবাইকে আহমদের খাতাটা দেখাতে লাগলেন। কবিতার নাম ‘সময়ের মূল্য’ ছন্দহীন কবিতাটি স্যারে পড়ে সবাইকে শোনালেন-

: ‘যে সময় চলিয়া যায় সে সময় আসে না তো ফিরে,

নদীর স্রোত যে তীর থেকে যায় আসে না তো সে তীরে।

সময়ের গতি দ্রুত অতি পরিতাপের প্রসঙ্গ হবে তাহার,

না করিলে সময়ের প্রতি সদ্ব্যবহার।’

এভাবে ষোল লাইনের মতো শোনাল।

পরের দিন যখন পরীক্ষার হলে আসল, তখন আহমদকে, যে ছাত্র-ছাত্রী দেখে সেই ছাত্র-ছাত্রী কবি ভাই বলে ডাকতে থাকে। আহমদের মুখে কোনো কথা নেই, ভয় পাচ্ছে। হয়তো আজ স্যার অনেক মারবেন।

আহমদ ভয়ে ভয়ে পরীক্ষার হলে নিজ আসনে বসল।

স্যার আসতে দেরি, আহমদকে দাঁড় করিয়ে বলতে দেরি নেই।

: তুমি যে কবিতা লেখছ এর মানে কি জানো?

তুমি সময়কে সঠিক কাজে লাগাও? সময়ের সদ্ব্যবহার করো?

: না, করি না। করি না দ্যাখাই তো সময় নিয়া কবিতাটা লেখলাম। এখন থেকে আর সময় অপচয় করুম না, প্রতি মুহূর্তকে কামে লাগামু, এই কানে ধরলাম।

: তুমি কবিতাটা বলো দেখি।

: আমার মুখস্ত নাই।

: তুমি লেখলা আর তোমার মুখস্ত নাই?

: আমি লেখছি, আমি মুখস্ত করি নাই তো।

: তুমিই লেখলা, আর তোমার মুখস্ত থাকবে না এটা একটা কথা হলো?

: কবিরা নিজের কবিতা নিজে মুখস্ত করে না।

: ও তাই! অঙ্ক পরীক্ষায় তো দুইটা ডিম পাইবা।

: সমস্যা কী? ভাইজ্জা খাইয়া ফেলামু।

: এখন কিছু বলব না, যখন খাতা দেখাব না? তখনই বুঝতে পারবা ডিম ভাইজ্জা খাওয়ার মজাটা কী!

পরীক্ষার ঘণ্টা শুরু হলো, সবাই পরীক্ষা দিতে ব্যস্ত হয়ে গেল, সবার পরীক্ষা শেষও হয়ে গেল, আহমদের পরীক্ষা শেষ হচ্ছে না। শেষ ঘণ্টায় সে পরীক্ষা শেষ করে খাতা জমা দিল। স্যার খাতা দেখে বললেন-

: আজকের পরীক্ষাটা তো ভালোই দিলা।

: বুঝতে অইব স্যার, এটা অঙ্ক পরীক্ষা না কবিতা লেখব, ইসলাম শিক্ষা পরীক্ষা। আর সময়টাকেও অপচয় করি নাই, কামে লাগাইছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close