শামীম শাহাবুদ্দীনের হাসির গল্প
বিয়ের দাওয়াত
আমাদের মদন ভাই উদার প্রকৃতির লোক। মানে দিলখোলা মানুষ। মদন ভাইয়ের কাছে কেউ কোনো প্রয়োজনে এসে খালি হাতে ফেরত গেছে, এমন কথা তার শত্রুরাও বলতে পারবে না!
মদন ভাইয়ের সুন্দরি শ্যালিকা জবা। পাড়ার পরিচিত মুখ। আজ তার বিয়ে। তো... বড় ভাইয়ের শ্যালিকার বিয়ে, আমরা না এসে পারি! আমরা বলতে আমি, আলম, সিদ্দিক, রাসেল ও বাবুসহ আরো কয়েকজন। আমরা অবশ্য দাওয়াত পাইনি! তাতে কী? আমাদের তো একটা বিবেচনাবোধ আছে! নাকি?
বড় ভাই ব্যস্ত মানুষ, দাওয়াত-টাওয়াত দিতে হয়তো ভুলে গেছেন। পাড়ার পোলাপান হিসেবে বড় ভাইয়ের শ্যালিকার বিয়েতে একটু আমোদ ফুর্তি করব, দু-চারটা ডাল-ভাত খাব...। তা না হলে দুদিন পরে হয়তো দেখা গেল, বিয়েতে না যাওয়ার কারণে বড় ভাই মাইন্ড করে বসেছেন! সেটা কি ভালো দেখাবে?
বড় ভাইয়ের কথা বাদ দিলাম। উনি তো (জবা) আমাদের বেয়াইন...মানে পাড়াতো বেয়াইন। বেয়াইনের বিয়েতে আসব না? এতটা অকৃতজ্ঞ আমরা কবে ছিলাম!
আসার সময় অবশ্য তাড়াহুড়ার কারণে আমরা গিফট আনতে পারিনি। আমাদের এরকম ভুলভাল কাজকামের ব্যাপারে বড় ভাই মোটামুটি অবগত আছেন।
সকাল থেকে পেটে দানাপানি কিছু পড়েনি। সবাই মিলে বেয়াইনের সঙ্গে দেখা করা দরকার। সৌজন্য সাক্ষাৎও হলো, মিষ্টিও খাওয়া হলো। বেয়াইন তো আর আমাদের খালি মুখে ফেরাতে পারবে না!
দেখা করার উদ্দেশে যেই পা বাড়িয়েছি, অমনি দেখি বড় ভাই সামনে এসে হাজির! তিনি আমাদের দেখে বললেন, তোমরা এসে ভালোই করেছ। গরু কাটার জন্য কসাই বলে রেখেছিলাম, ওরা আসতে দেরি করছে। পুকুরপাড়ে গরু বাঁধা আছে, তোমরা এটাকে জবাই করে কেটে কুটে সাইজ কর। আমি তোমাদের জন্য আরসি, মুড়ির ব্যবস্থা করছি।
খিদেয় পেট চো চো করছে। খালি পেটে আস্ত গরু কেটে সাইজ করতে হবে? কী আর করা! বড় ভাইয়ের কথা তো আর ফেলতে পারি না। সবাই মিলে কাজে লেগে গেলাম।
গরু কাটাকুটি শেষ। এবার খাওয়ার পালা। পেটের ক্ষুধায় চোখে ধোয়া উড়ছে, আর নড়তে পারছি না! দেখি বড় ভাই এদিকেই আসছেন। তার হাতের তালুতে একটি খাঁচার মধ্যে গোটা দশেক ডাব এবং ডাবের ওপরে একটি মুড়ির প্যাকেট। আরসির (জপ) বদলে ডাব দেখে মনটা খুশিতে নেচে উঠল। এই না হলে বড় ভাই!
তিনি হাত থেকে খাঁচা নামিয়ে আমাদের সামনে রাখলেন এবং বললেন, তোমরা আসার আগে মেহমানকে ডাবের পানি খেতে দিয়েছিলাম।
ভাবলাম ডাবের এই আরসিগুলোকে নষ্ট করে লাভ নেই। (বৃহত্তর ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় নারকেল বা ডাবের পরিত্যক্ত মালাকে আরসি বলে) এক কাজ কর, ডাবগুলোকে মাঝখানে ফেঁড়ে আরসি থেকে শাস আলাদা করে নাও। তারপর মুড়ির সঙ্গে আরসির শাস মেখে খাও। খুবই টেস্টি।
রাজু বলল, হ ভাই; হেব্বি টেস!
ওর কথা শুনে মনে হলো, ওই হারামজাদার পাছায় কষে দুটো লাথি দেই! কিন্তু পেটের ক্ষুধায় ওঠে দাঁড়াতে পারছি না!
বাবু বলল, ভাই আমরা ভাবলাম; আপনি ঠান্ডাঠুন্ডা মানে কোমল পানি জাতীয় কিছু খাওয়াবেন!
- বোকা ছেলে! ওসব কি মানুষে খায়? ক্ষতিকর ক্যামিক্যাল মেশানো ওই রঙিন পানি আমাকে কখনো খেতে দেখেছ? বড় ভাই হিসেবে আমি তো তোমাদের ওরকম বিষপানি খাওয়াতে পারি না!
সাকিব মুখে সিরিয়াসনেস এনে বলল, না ভাই পারেন না।
রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে! সাকিবকে বললাম, অ্যাই তুই মুখ বন্ধ করবি? বড় ভাইকে বলতে দে।
বড় ভাই একটু কেঁশে গলা পরিষ্কার করে বললেন, সামনের বছর আমার ছোট শালির বিয়ে। তোমাদের আগাম দাওয়াত দিয়ে রাখলাম। তোমরা সবাই আসবে কিন্তু, কেমন? এই বলে তিনি আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অন্যদিকে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
আমরাও হাড়ির মতো মুখ কালো করে যার তার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলাম।
রবি বলল, ছোট বেয়াইনের বিয়েতে কিন্তু গিফট নিয়ে যেতে হবে, ভুল করা যাবে না! বললাম, রাখ তোর গিফট! ওরকম পাড়াতো বেয়াইনের কপালে ঝাটা মারি...। গোষ্ঠী কিলাই অমন বড় ভাইয়ের! ক্ষিধেয় আমার পেট জ্বলে যাচ্ছে! আর উনি কিনা আছেন উনার পেয়ারের বেয়াইনকে গিফট দেবার ধান্ধায়, শালা লু... কোথাকার! আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না...।
"