জোবায়ের রাজুর হাসির গল্প
মুমূর্ষু রোগী
ডাক্তার হিসেবে বরাবরই আমার মধ্যে একটু অহংবোধ কাজ করে। যেদিন প্রথম ডাক্তারি পাস করি, সেদিন থেকেই এই অহংকার নিজের মধ্যে নিজেই টের পেয়েছি। আমিশাপাড়া বাজারের জীবন ফার্মেসিতে আমার চেম্বার। সঠিক সময়ে চেম্বারে আমার আগমন ঘটলেও এখানে আশানুরূপ রোগী পাই না। দিনরাত মিলে ৬ থেকে ৭ জন রোগী আসে আমার কাছে। কিন্তু জীবিকা হিসেবে সেটা আমার জন্য বেশ অপ্রতুল।
চেম্বার করার শুরুর দিকে প্রথমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগী দেখতে আমার আত্মসম্মানে লাগত। তাই মুখের ওপর অনেককে না করে দিতাম। তাতে আমার ডাক্তারি পেশায় কিছুটা দুর্নাম ঘটেছে। এমন কাহিনি শোনে আব্বা বললেন, ‘বাড়ি গিয়ে রোগী দেখলে পয়সা আসলে সমস্যা কী!’ আব্বার যুক্তি আমলে নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগী দেখার সিদ্ধান্তে ভূমিকা রাখতে শুরু করলাম। মুমূর্ষু রোগীদের এমন সেবাদানে তারা খুশি হয়ে আমার পকেট ভাসিয়ে দিতে থাকে অবিশ্বাস্য টাকায়। ফলে অল্পদিনে একখানা বাইক কেনার মতো হিম্মত দেখালাম। এবার থেকে মুমূর্ষু রোগী দেখতে যেতে নিজের বাইক নিজেই ড্রাইভ করার পারদর্শিতা দেখাতে শুরু করলাম।
২.
রাত ৮টা। একটি ছেলে চেম্বারে এসে বলল, ‘আপনি তো বাড়ি গিয়ে রোগী দেখেন, না?’ হ্যাঁসূচক মাথা নাড়াতেই সে বলল, ‘ফি কত নেন?’ নরম সুরে বললাম, ‘৫০০ টাকা।’ সে হেসে বলল, ‘আসুন তবে।’
বাইকটা বের করে রওনা দিলাম ছেলেটার বাড়ির উদ্দেশে। বাইকের পেছনে চেপে বসে সে বলল, ‘জলদি চালান।’ বোঝা গেল তার রোগী ভীষণ অসুস্থ’। তাই ঝড়ের বেগে ছুটলাম গন্তব্যে। প্রায় আধা ঘণ্টার ড্রাইভ শেষে আমরা পৌঁছালাম কালিকাপুর হাজী বাড়িতে।
হাজী বাড়ির প্রকান্ড উঠোনে এসে বাইক থামাবার পর ছেলেটি পেছন থেকে নেমে গিয়ে মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকার নোট বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘এই নিন আপনার ফি।’ অবাক হয়ে বললাম, ‘রোগী কই? রোগী না দেখে ফি?’ মুচকি হেসে সে বলল, ‘রোগী তো নেই। সিএনজিওয়ালা আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে ৮০০ টাকা দাবি করল, অথচ আপনি ৫০০ তে রাজি হলেন বলে আপনাকেই নিয়ে আসলাম।’ ছেলেটির কথা শোনে আমি হা করে তাকিয়ে থাকি। সে মিটিমিটি হাসছে। আজকালকার পোলাপানের বুদ্ধি এত জিলাপির মতো প্যাঁচানো কেন!
"