মোল্লা নাসিরুদ্দীন হোজ্জার হাসির গল্প
সাবান দিয়ে গোসল করছি
নদীর ময়লা পানিতে নাসিরুদ্দিন হোজ্জাকে নামতে দেখে পথিক প্রশ্ন করলেন, ‘হোজ্জা, নদীতে কী করছেন?’
হোজ্জা : গোসল করছি।
পথিক : কিন্তু নদীর পানি তো খুবই ময়লা।
হোজ্জা : সমস্যা নাই। সাবান দিয়ে গোসল করছি।
মোল্লা এক বাড়িতে চাকরের কাজ করছে
মোল্লা এক বাড়িতে চাকরের কাজ করছে। মনিব তাকে ডেকে বললেন, ‘তুমি অযথা সময় নষ্ট করো কেন, তিনটা ডিম কিনতে কেউ তিনবার বাজারে যায়? এবার থেকে সব কাজ একবারে সেরে আসবে।’
এক দিন মনিব অসুখে পড়লে মোল্লাকে বললেন ডাক্তার ডাকো। মোল্লা গেল কিন্তু ফিরল অনেক দেরিতে আর সঙ্গে অনেক লোক।
মনিব বললেন, ‘ডাক্তার কই?’
তিনি আছেন সঙ্গে আরো অনেকে আছেন, বলল মোল্লা।
- আরো কেন?
- আজ্ঞে ডাক্তার বলল পুলটিশ দিতে লোক চাই। জল গরম করতে কয়লা লাগবে, কয়লাওয়ালা চাই। আপনি যদি মারা যান তো দোয়া পড়ার লোক চাই। আপনাকে কবর দেওয়ার লোক চাই, আপনি মরলে পরে লাশ বহনের লোক চাই। তাই সবই একবারে এনেছি।
অপয়া যে কে, সেটা বুঝতে পারলেন না
শিকারে বেরিয়ে পথে প্রথমেই নাসিরুদ্দীনের সামনে পড়ে রাজামশাই খেপে উঠলেন। লোকটা অপয়া। আজ আমার শিকার প-। ওকে চাবকে হটিয়ে দাও।
রাজার হুকুম তামিল হলো। কিন্তু শিকার হলো জবরদস্ত। রাজা শিকার থেকে ফিরে নাসিরুদ্দীনকে ডেকে পাঠালেন। ‘ভুল হয়ে গেছে মোল্লা। আমি ভেবেছিলাম তুমি অপয়া। এখন দেখছি তা নও।’
নাসিরুদ্দীন তিন হাত লাফিয়ে উঠল। আপনি ভেবেছিলেন আমি অপয়া? আমায় দেখে আপনি ২৬টি হরিণ মারলেন আর আপনাকে দেখে আমি ২৬ ঘা চাবুক খেলাম। আপয়া যে কে, সেটা বুঝতে পারলেন না?
মধুর মতো মিষ্টি
হোজ্জা বাজারে বসেছেন আঙুর বিক্রেতা হিসেবে। এক বন্ধুকে দেখে তার কাছেই আঙুর বিক্রি করতে চাইলেন। কিন্তু বন্ধু বললেন, তার কাছে টাকা নেই। হোজ্জা উদার মানুষ। বললেন, ‘আপনি বন্ধু মানুষ। টাকা পরে দিলেও চলবে। দুটো আঙুর মুখে দিয়ে দেখুন, মধুর মতো মিষ্টি।’
বন্ধু অপারগতা জানিয়ে বললেন, তিনি রোজাদার। হোজ্জা বললেন, ‘রোজার মাস আসতে এখনো দুই মাস বাকি। এখনই রোজা?’
বন্ধু বিগত বছরের ভাঙা রোজাগুলো পূরণ করার কথা জানালেন। সঙ্গে সঙ্গে হোজ্জা বললেন, ‘ভাই আমি তোমার কাছে আঙুর বিক্রি করব না। কারণ যে লোক খোদার বাকি পূরণ করতে দশ মাস লাগায়, সে আমার বাকি টাকা দিতে কবছর লাগাবে?’
পোশাকটি আসলে আমার
হোজ্জার বাড়িতে এক বন্ধু এসেছেন বেড়াতে। সন্ধ্যায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে পরিচয় করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় হোজ্জা নিজের একটি ভালো পোশাক ধার দিলেন।
প্রথম বাড়িতে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় এও জানালেন, ‘এর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, তা আসলে আমার।’ সেখান থেকে বেরিয়ে বন্ধু মহা ক্ষ্যাপা। ‘কী দরকার ছিল ওটা বলে আমাকে অপমান করার?’ হোজ্জা ক্ষমা চাইলেন।
দ্বিতীয় বাড়িতে গিয়ে বললেন, ‘এর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, তা আসলে এরই।’ এবার তো বন্ধু আরো ক্ষ্যাপলেন। ‘পোশাকটি নিয়ে তুমি কিছু না বলাই ভালো।’
তৃতীয় বাড়িতে গিয়ে হোজ্জা বললেন, ‘ইনি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, সে সম্পর্কে কিছু না বলাই ভালো!’
বিড়ালে সব মাংস খেয়ে ফেলেছে
হোজ্জা এক কেজি মাংস কিনে এনে গিন্নিকে দিলেন রান্না করতে। গিন্নি রান্নার পর সব মাংস খেয়ে ফেলল। হোজ্জা নদী থেকে গোসল সেরে এসে খেতে বসলে মাংস না দেখে জিজ্ঞাসা করলে গিন্নি জানাল, বিড়ালে সব মাংস খেয়ে ফেলেছে।
হোজ্জা তাড়াতাড়ি বিড়ালটাকে ধরে ওজন করে দেখলেন যে সেটার ওজন এক কেজি। গিন্নিকে তখন বললেন, ‘এটা যদি বিড়াল হয় তবে মাংস কোথায়, আর এটা যদি মাংস হয়, তবে বিড়ালটা কোথায়?’
বিবি তোমার কথাই ঠিক
হোজ্জা তখন কাজী। বিচার-আচার করেন। একদিন বিচারে বসেছেন। ফরিয়াদি আসামি সম্পর্কে তার অভিযোগের বয়ান দিচ্ছে। হোজ্জা মনোযোগ দিয়া তার কথা শুনছেন। বাদীর বলা শেষ হলে মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক।’
এবার আসামি বলে উঠল, ‘হুজুর, আমার দুটা কথা ছিল।’ হোজ্জা বললেন, ‘ঠিক আছে তুমি তোমার বক্তব্য বল।’ আসামির বক্তব্যও মনযোগ দিয়ে শোনার পর হোজ্জা বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক।’
হোজ্জার স্ত্রী পর্দার আড়ালে এতক্ষণ সব কথা শুনছিলেন। বিরক্ত হয়ে স্বামীকে তিনি বললেন, ‘দুজনই ঠিক হয় কীভাবে? হয় আসামির কথা ঠিক, না হয় ফরিয়াদির কথা ঠিক।’
হোজ্জা স্ত্রীর দিকে ফিরে সমর্থনসূচক হাসি দিয়ে বললেন, ‘বিবি তোমার কথাই ঠিক।’
"