reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৬ জুন, ২০২২

মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেনের হাসির গল্প

ওয়ান টিথ ব্ল্যাক

জয়নাল, দশম শ্রেণির ছাত্র। স্কুলের হোস্টেলে থাকে। পড়াশোনা, আনন্দ, উচ্ছলতায় ভালোই দিন কাটছিল। হঠাৎ তার সামনের দিকের ওপরের পাটির একটি দাঁত কালো হয়ে যায়। কালো দাঁত সাদা করতে সে বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে যায়, কিন্তু তার দাঁত আর সাদা হয় না। এক দিন হোস্টেলের এক বন্ধুকে নিয়ে হোমিওপ্যাথির নামকরা এক ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার তখন তাকে জিজ্ঞাসা করল, দাঁতে কোনো ব্যথা আছে কি না।

জয়নাল বলল, কোনো ব্যথা নেই। শুধু কথা বলতে গেলে, হাসতে গেলে সেই কালো দাঁতটা বের হয়ে আসে। সব শুনে ছোট্ট একটি সাদা খাম ডাক্তার হাতে নিল। খামের ওপরে ডাক্তার লিখল ‘ওয়ান টিথ ব্ল্যাক’। তারপর ছোট্ট কাচের শিশিতে লিকুইড ওষুধ দিয়ে বলল, প্রতিদিন সকালে পাঁচবার ঝাঁকি দিয়ে পাঁচ ফোটা করে ওষুধ খালি পেটে খেতে।

ওষুধ নিয়ে হোস্টেলে আসতেই জয়নালের সাথের বন্ধু ওয়ান টিথ ব্ল্যাক লেখাটা বন্ধুদের দেখাল। বন্ধুরা সবাই রোগের হেডলাইন দেখে হাসতে হাসতে মেঝেতে গড়াগড়ি খায়।

ওষুধ নিয়ে আসল সে কালো দাঁত সাদা করার জন্য। কিন্তু তার চেয়ে আরো বিব্রতকর পরিস্থিতি হলো এখন তাকে তার বন্ধুরা দেখা হলেই বলে ‘ওয়ান টিথ ব্ল্যাক’। যেখানেই যায় তাকে এই কথা বলে শুধু ক্ষেপায়।

জয়নাল ইদানীং এই দাঁতের কারণে কথাও কম বলে। আগে খুব হাসত, এখন আর প্রাণখুলে হাসতেও পারে না। বন্ধুদের সঙ্গে তেমন আর আড্ডাও দেয় না। এদিকে ওষুধের এক ফাইল শেষ করে আবার সে ডাক্তারের কাছে যায়। গিয়েই ডাক্তার কে বলে, ওষুধে তো কোনো কাজ হচ্ছে না। হোমিও ডাক্তার মৃদু হেসে বলে, ধৈর্য ধরতে হবে। হোমিও ওষুধ খুব ধীরে ধীরে কাজ করে।

জয়নাল খুব বিষন্ন মনে ওষুধের দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে হোস্টেলে ফিরে আসে।

ওষুধের কয়েক ডোজ খাওয়ার পরও কোনো কাজ হয় না। অবশেষে ওয়ান টিথ ব্ল্যাক নিয়েই সে ১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে হাইস্কুলের গ-ি শেষ করে।

বহু দিন পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরের দিকে স্কুলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে জয়নালও অংশগ্রহণ করে। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে প্রায় দুই যুগ পরে এ রকম একটা মিলনমেলায় আসতে পেরে জয়নালের মনে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে।

মিলনমেলার সেই অনুষ্ঠানে জয়নাল কে দেখেই তার বন্ধুরা বলে ওঠে, দোস্ত তোমার ওয়ান টিথ ব্ল্যাকের কী অবস্থা?

জয়নাল বলে, সেই দাঁত আমি উঠিয়ে ফেলে আর একটি নতুন কৃত্রিম দাঁত লাগিয়েছি। জয়নালের কথা শুনে বন্ধুরা সবাই হেসে ওঠে। একজন বলেই ফেলে, মাথাব্যথা হলে কি মাথা কেটে ফেলতে হবে?

জয়নাল প্রত্যুত্তরে বলে, এই দাঁতের কারণে আমার অনেকগুলো বিয়ের সমন্ধ ভেঙে গেছে। ওয়ান টিথ ব্ল্যাকের জন্য তো আমার এই ওয়ান লাইফ নষ্ট করতে পারি না। এ কথা শুনে সবার মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close