reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৮ মে, ২০২২

মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেনের হাসির গল্প

তেলাপোকার প্রতিশোধ

টনি মিয়া, ২০ বছরের টগবগে এক যুবক। খুবই ফ্যাশনসচেতন। স্টাইল করে চুল কাটে। চুলে জেল লাগায় প্রতিদিন। নেট ঘেঁটে হালের নামকরা সব নায়ক বা প্লেয়ারদের চুলের স্টাইল ফলো করে। এই ঈদে সবার চেয়ে ব্যতিক্রম চুলের স্টাইল যেন হয়, নেটে সার্চ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে টেরই পায়নি। সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই দেখে তার মাথায় ১ ইঞ্চি ব্যাসে একটি বৃত্ত যেখানে কোনো চুল নেই। চিৎকার করে মাকে ডাকে, মা কে যেন আমার চুল নিয়ে গেছে। মা দৌড়ে এসে দেখে সত্যিই ছেলের মাথায় টাক পড়েছে। মা তখন বলে, এটা তেলাপোকার কাজ। তোর মামার এ রকম হয়েছিল, ডাক্তার, কবিরাজ সব দেখিয়েও সেখানে কোনো চুল গজাতে পারেনি। ছেলে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল।

কদিন পরেই ঈদ, সবাই দেখে কী যে বলবে!

টনি খুবই হতাশ হয়ে গেল- কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। তেলাপোকার প্রতি তার রাগ যেন হাজার গুণ বেড়ে গেল। খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা কিছুই যেন তার ভালো লাগছে না। হতাশা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আজ খুব তাড়াতাড়ি। ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখে তেলাপোকা শুয়ে আছে তার পাশেই।

তেলাপোকাকে টনি জিজ্ঞেস করে- আমার মাথার চুল নিয়েছিস কেন? উত্তরে তেলাপোকা বলে- ‘প্রতিশোধ’।

‘কীসের?’

ইন্টারমিডিয়েটে প্র্যাকটিক্যালের নামে ডিসেকটিং টেবিলে আমার মামার ব্যবচ্ছেদ করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আলাদা করেছেন। ওটা তো প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস ছিল। সবাই করে, তাই আমিও করেছি।

করলে কী হবে? আপনি খুব নির্মমভাবে মামার বুকে কাঁচি চালিয়েছেন। আমার নানা ল্যাবে এক কোনায় বসে সব দেখেছে।

বলো কী? এটা কোনো কথা হলো? এ কেমন প্রতিশোধ!

স্বপ্নে কথোপকথনের একপর্যায়ে টনি বলল, অনেক আগের ঘটনাও মনে রাখো দেখছি। জিদ পুষে রাখো।

তেলাপোকা বলল, হ্যাঁ। তা ছাড়া আমাদের ‘আরশোলা ঐক্য ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন রয়েছে। টনি বলল, অন্তত ঈদটা শান্তিতে করতে দিতে, তারপরই না হয় প্রতিশোধটা নিতে। কিছু করার নেই- সংগঠনের সভাপতির আদেশ। টনি মিয়া তেলাপোকাকে আরো কিছু প্রশ্ন করল- বলল তোমাদের সবচেয়ে সুখের মূহূর্তটা কী?

তেলাপোকার ঝটপট উত্তর- যখন সিনেমায় নায়িকা তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করে নায়কের বুকের সঙ্গে মিশে যায়। দৃশ্যটা খুবই ভালো লাগে। তেলাপোকা আরো বলল, আপনারা অনেক সময় আমাদের বিষ দিয়ে মারতে চান। কিন্তু খবরে দেখেছেন তেলাপোকার বিষ খেয়ে ছেলে-মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। তেলাপোকা বলল, এবার যাই অনেক কাজ পড়ে আছে, তা ছাড়া দ্রব্যমূল্যের যে দাম!

টনি বলল, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পেলে তোমাদের তাতে কী? তেলাপোকা বলল, দাম বৃদ্ধি পেলে লোকে সবজি কম নিয়ে আসে, আমাদের খাবারে টান পড়ে যায়।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখে তেলাপোকা তার পাশেই শুয়ে। টনি মিয়া রেগে গিয়ে বিছানার ঝাড়ু দিয়ে তেলাপোকাকে মেরে ফেলল। দেখে ছাদের এক কোনায় আরো একটি তেলাপোকা। ওটাকে অনেক চেষ্টা করেও মারতে পারল না।

টনি মিয়া এখন আরো ভয় পেয়ে গেল। না জানি ওই তেলাপোকাটা তাকে আবার কী করে বসে।

তাই পরের রাতে সে মাথায় হেলমেট পরে ঘুমাল। কিন্তু খুব ভোরে আঙুলের তীব্র ব্যথায় ঘুম ভেঙে গেল। লাইট অন করতেই দেখে বৃদ্ধাঙ্গুলির ডগা থেকে ৪০ গ্রাম পরিমাণ মাংস নেই। মেঝের দিকে তাকাতেই দেখে একটি মোটাসোটা তেলাপোকা। তার বুঝতে বাকি রইল না গতরাতে তেলাপোকা মারার জন্যই আজ এই তেলাপোকাটি আবার প্রতিশোধ নিল। মানুষের কাছে শুনেছি- মাংস খেলে মাংস হয়। কিন্তু মাংসের যা দাম!

না হয় মাংস খেয়ে মাংস হলো কিন্তু আমার চুল!

মাথায় হাত দিয়ে টনি মিয়া নির্বাক হয়ে ছয় পায়ে পিলপিল করে তেলাপোকার পালানো দেখে!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close