মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেনের হাসির গল্প
মাস্ক সম্মলেন
আজ ৯ জানুয়ারি, ঐতিহাসিক মাস্ক সম্মেলনের দিন ধার্য করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলে দলে মাস্করা যোগ দিচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির, বিভিন্ন রঙের, বিভিন্ন লেয়ারের মাস্করা উপস্থিত হচ্ছে। মাস্ক সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো-তাদের সুখ-দুঃখের কথা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা সবার সঙ্গে শেয়ার করা।
সকাল ১০টায় সম্মেলন শুরু হলো, নেতৃত্ব দিচ্ছে কেএন ৯৫ মাস্ক। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কেএন ৯৫ স্বাগত বক্তৃতায় বলল, করোনাভাইরাসের জন্যই আমাদের কদর বেড়ে গেছে, তাদের ধন্যবাদ দিতে চাই। যদিও করোনাভাইরাসরা আমাদের প্রধান শত্রু মনে করে।
সার্জিক্যাল মাস্ক বলল, আমরা এত দিন একটা বক্সের ভেতর গাদাগাদি করে ছিলাম। যখনই করোনাভাইরাস দেশে এলো তখনই আমরা বাইরে এলাম। আসার পর পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখে খুব ভালো লাগছে। যদিও এর আগে আমাদের গোত্রের কেউ কেউ অপারেশন থিয়েটার ও হাসপাতালগুলোতে এসেছিল।
অন্য একটা মাস্ক বলল, আমাদের কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, ব্যবহারের উপকারিতা নিয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র প্রচার চালালেও সঠিকভাবে ব্যবহার করে না, এটা বড় কষ্টের বিষয়।
পাশ থেকে আরেকটি মাস্ক বলল, আমাকে প্রায়ই পকেটের চিপায় রেখে দেয়, দম বন্ধ অবস্থা। আমার মালিক বলে, তোকে নাকে দিয়ে আমারও তো নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অভ্যাস নাই তো, তাই তোকে বেশির ভাগ সময় পকেটে রাখি।
ওয়ানটাইম ইউস ক্যাটাগরির একটি মাস্ক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, আমাদের ব্যবহার করেই ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। ডাস্টবিনের ময়লার দুর্গন্ধ আর সহ্য হয় না, মনে হয় তার চেয়ে বক্সের ভেতর বন্দি থাকা অনেক ভালো ছিল।
আরেকটি মাস্ক বলল, আমাকে শুধু প্রশাসনের লোক দেখলে মুখে দেয়, তা না হলে সারাক্ষণ পকেটেই থাকতে হয়।
আরেকটি মাস্ক খুব আক্ষেপ নিয়ে বলল, সবারই প্রমোশন হয়, আমাদের দেখি দিন দিন ডিমোশন হচ্ছে। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাতেই মাস্কটি ব্যাখ্যা করল, আমরা আগে নাকে ও মুখে ছিলাম, এখন আমাদের থুতনিতে রাখে। এটাই আমার দুঃখ। সবাই সমস্বরে বলল, আমাদের সবারই এমন করুণ পরিণতি।
কথা শেষ হতে না হতেই একটি মাস্ক খুব হাসি হাসি মুখে বলল, আমার সৌভাগ্য যে, দেশের বহুল আলোচিত ঘটনা-নায়িকা পরীমনির আটকের দিন বাসার সামনে একজন মাস্ক বিক্রেতা মাস্ক বিক্রি করে। তিনিও আলোচনায় আসেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় উনার ছবিও ছাপা হয়। সেখানে আমিও ছিলাম। এতে আমার জীবন ধন্য।
আর একটি মাস্ক বলল, তবে আমার ভালো লাগছে এটা ভেবে, এখন স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীরা আমাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করছে। কারণ মাস্ক ছাড়া শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ নিষেধ।
সম্মেলনের শেষপর্যায়ে এসে কেএন ৯৫ সবার উদ্দেশে বলল, বিশ্ব মহামারি করোনা ঠেকাতে আমাদের নিযুক্ত করা হয়েছে। মানবজাতি আমাদের সঙ্গে যে রকম আচরণই করুক না কেন, আমাদের কাজ হলো করোনাকে ঠেকানো। মহৎ এ কাজে নিযুক্ত হতে পেরে আমাদের জীবন ধন্য। আমি আপনাদের সবার কাছে একটা প্রস্তাব রাখতে চাই-তা হলো বিশ্ব মাস্ক দিবসের জন্য আমরা জাতিসংঘের কাছে আবেদন করব। সবাই কি রাজি আছেন? সবাই তুমুল করতালি দিয়ে প্রস্তাব সমর্থন করল।
মাস্ক দিবসে মাস্কের ব্যবহার, গুরুত্ব বিশ্বব্যাপী তুলে ধরলে আমাদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে। মাস্ক দিবস জাতিসংঘ যদি অনুমোদন দেয়, তাহলে আমরা আবারও সবাই এখানে একত্র হয়ে আনন্দ মিছিল করব।
এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে মাস্কদের মিলনমেলা মাস্ক সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হলো।
"