reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ নভেম্বর, ২০২১

আনিসুল হকের হাসির গল্প

‘ঘোড়ার ডিম?’

‘আজ পুষ্পিতার মন খারাপ’

স্নেহার বয়স ৭ বছর। বয়স ৭ হলে হবে কী, তার কথাবার্তা ৭০ বছরের বুড়ির মতো। তার বড় ভাই শান্তনু। শান্তনুর বয়স ৯ বছর। তাদের দাদি তাদের গল্প শোনাচ্ছেন। আজ দাদি শোনাচ্ছেন ঘোড়ার ডিমের গল্প।

এক ছিল বোকা লোক। তাকে একটা চালাক লোক বলল, আমার বোঝাটা একটু বয়ে দাও না!

বোকা লোক বলল, দিতে পারি। কিন্তু তুমি আমাকে কী দেবে? চালাক লোক বলল, ঘোড়ার ডিম।

বোকা লোক কাজটা করে দিল। বলল, এবার দাও আমার ঘোড়ার ডিম।

চালাক লোক পড়ল মহামুশকিলে। কারণ, ঘোড়ার ডিম বলে তো আসলে কিছু নেই। তাই চালাক লোক বলল, আরে ঘোড়ার ডিম বলতে কিছু আছে নাকি।

বোকা লোক বলল, না, তুমি আমাকে বলেছো, আমাকে ঘোড়ার ডিম দেবে। এখন দাও। চালাক লোক যতই বলে, ঘোড়ার ডিম বলে কিছু নেই। বোকা লোক ততই ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে, না, ঘোড়ার ডিম দিতেই হবে। শেষে চালাক লোক করল কী, হাটে গিয়ে একটা চাল কুমড়া কিনে সেটাই দিল বোকা লোকের হাতে। বোকা লোক তো চাল কুমড়াকে ঘোড়ার ডিম ভেবে খুশিতে আটকানা।

সেই কুমড়া নিয়ে সে বাড়িতে গেল। কুমড়া রেখে দিল তার ভাঙা ঘরে। কুমড়াটা ছিল পচা। রাত্রিবেলা সে পচা কুমড়ার গন্ধ পেয়ে এলো এক শেয়াল।

বোকা লোক দেখে, আরে ডিমের পাশে এটা কী? নিশ্চয়ই ঘোড়ার ডিম থেকে বের হয়েছে। সে এক লাফে উঠে পড়ল শেয়ালের পিঠে। শেয়াল ছুটছে ঊর্ধ্বশ্বাসে। তার পিঠে ওই বোকা লোকটা।

দাদির মুখে এই গল্প শুনে স্নেহা হাসতে হাসতে বাঁচে না।

আর শান্তনু, গম্ভীর। এখন ওই লোকটা শেয়ালের পিঠ থেকে নামবে কী করে?

এই গল্প শোনার পর থেকে শান্তনু আর স্নেহা একটু কিছু হলেই বলে, ঘোড়ার ডিম। যেমন­-স্নেহা, ভাইয়া কী করছে? ঘোড়ার ডিম।

স্নেহা বলল, ঘোড়ার ডিম করছে। বা শান্তনু তুমি কী নাশতা করবে?

এই চলছে।

কিন্তু হঠাৎ করে এক সকালে স্নেহা বলতে লাগল, কে বলল, ঘোড়ার ডিম মানে কিছু না। ঘোড়ার ডিম হয়। শুনে বাবা হাসেন। না মা হয় না।

মা বলেন, স্নেহা, পাগলামি করো না। ঘোড়া তো ডিম পাড়ে না। স্নেহা বলল, পাড়ে।

বাবা বললেন, মা এদিকে এসো। তোমাকে বলি, কে ডিম পাড়ে। কে পাড়ে না। ডিম পাড়ে পাখি। বুঝলে?

স্নেহা বলল, বাবা মাছও তো ডিম পাড়ে। মাছ তো পাখি না। বাবা বললেন, আচ্ছা পাখি আর মাছ ডিম পাড়ে।

শান্তনু বলল, বাবা টিকটিকিও তো ডিম পাড়ে।

বাবা বললেন, হ্যাঁ। সরীসৃপ ডিম পাড়ে। যেমন-সাপ। টিকটিকি। কিন্তু হাতি-ঘোড়া-গরু-ছাগল এরা ডিম পাড়ে না।

স্নেহা বলল, কিন্তু বাবা ঘোড়া ডিম পাড়ে।

বাবা বললেন, কেমন করে।

কারণ কালকে তুমি আমাকে একটা গল্প বলেছিলে। মনে আছে!

আছে। বাবা বললেন।

সেই গল্পে রাজপুত্র কীসে চড়ে আসে।

পক্ষীরাজ ঘোড়া চড়ে আসে।

পক্ষীরাজ ঘোড়া আকাশে উড়ে কী করে?

কী করে?

পাখা দিয়ে। যার পাখা আছে, সে কী পাখি? তাহলে পক্ষীরাজ ঘোড়া অবশ্যই ডিম পাড়ে।

বাবা বললেন, হুঁ। তোমার কথা আমি মানলাম। কিন্তু পক্ষীরাজ ঘোড়া তো কেবল রূপকথার গল্পে থাকে।

ঘোড়ার ডিমও কেবল রূপকথার গল্পেই থাকুক। ক্ষতি কী?

বাবা এক দিন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন। স্নেহা শান্তনু এদিকে এসো। তোমাদের জন্য ঘোড়ার ডিম এনেছি।

ওরা দৌড়ে গেল বাবার কাছে। বাবার হাতে একটা কাগজের প্যাকেট। কাগজের ওপরে লেখা, তিতাস কনফেকশনারি।

কাগজের প্যাকেটের ভেতর থেকে সাদা সাদা কতগুলো জিনিস বেরুল। বাবা বললেন, কোন দুনিয়ায় আছি। ঘোড়ার ডিম নামেও খাবার বেরিয়েছে। নাও। খাও।

স্নেহা মুখেই তুলল না ঘোড়ার ডিম। কারণ কোনো অপরিচিত খাবারই সে খায় না। শান্তনু খেল। ডিমের সাদা অংশ দিয়ে তৈরি। তবে খেতে মিষ্টি লাগে।

স্নেহা বলল, ভাইয়া, কেমন লাগল খেতে।

শান্তনু বলল, ঘোড়ার ডিম লাগে।

রাতের বেলা একটা ঘটনা ঘটল। ঘুম ভেঙে গেলে স্নেহা দেখল, একটা পক্ষীরাজ ঘোড়া এসেছে তার ঘরের ভেতরে। উড়ে উড়ে এসে বলল, তোমার জন্য একটা পুরস্কার আছে।

স্নেহা বলল, কী পুরস্কার।

তোমাকে আমি আমার পিঠে তুলে চাঁদের দেশ থেকে ঘুরিয়ে আনব।

পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে স্নেহা উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশে। শেষে তারা নামল চাঁদের গায়ে। সেখানে তার দেখা হলো অনেকগুলো পরীর সঙ্গে।

পরীরা তার সঙ্গে নাচল, গাইল। শেষে তাকে দিল একটা আস্ত ঘোড়ার ডিম।

বলল, শক্ত করে ধরে রেখো। যেন ফেলে দিও না। ফেলে দিলেই ভেঙে যাবে।

স্নেহা শক্ত করে ধরে রইল ডিমটা। সেটা হাতে নিয়েই সে উঠল পক্ষীরাজ ঘোড়ার পিঠে।

ফেরার পথে খুব বাতাস উঠল। পক্ষীরাজ ঘোড়া টাল খেতে লাগল। ঘোড়া বলল, আমাকে শক্ত ধরে রাখো। নইলে পড়ে যাবে।

স্নেহা বলল, আমি তোমাকে ধরে রাখতে পারছি না। কারণ আমার হাতে ঘোড়ার ডিম।

ডিম ছেড়ে দাও। আমাকে ধরো।

স্নেহা তা করল না। সে হঠাৎ ছিটকে পড়ল পক্ষীরাজ ঘোড়ার পিঠ থেকে। মেঘ ফুড়ে সে নিচে নামতে লাগল।

ধপাস করে পড়ল সে।

ঠিক তখনই তার ঘুম ভেঙে গেল। সে দেখল সে বিছানায়। আর হাতে একটা ঘোড়ার ডিম। ডিমটা কোত্থেকে এলো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close