reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১০ অক্টোবর, ২০২১

বনফুলের হাসির গল্প

নাথুনির মা

Fixity of Purpose-এর বাংলা কী?

উদ্দেশ্যের দৃঢ়তা?

যাহাই হোক, ইহার সুন্দর একটি উদাহরণ সেদিন দেখিয়াছিলাম। গল্পটি বলিবার পূর্বে ‘লক জ’ কাহাকে বলে, তাহাও বোঝানো দরকার। ‘লক জ (Lock Jaw)’ তাহাকেই বলে যাহা হইলে ব্যায়ত আনন আর বন্ধ হয় না, ব্যায়তই থাকে। হাই তুলিতে গিয়া অনেক সময় এই বিপদ ঘটে। মুখ কিছুতেই বোজে না, হাঁ করিয়াই থাকিতে হয় যতক্ষণ না ডাক্তার চোয়ালের হাড়টি যথাস্থানে বসাইয়া দেন। ইহার ঠিক ডাক্তারি নাম ডিসলোকেশন অব ম্যান্ডিবল (Dislocation of Mandible)-একবার হইলে সঙ্গিন ‘পরিস্থিতি’।

একটি রোগীকে লইয়া অনেক রাত্রি পর্যন্ত জাগিতে হইয়াছিল। সকালে চোখ হইতে ঘুম ছাড়িতে ছিল না। গৃহিণীর বারম্বার তাগাদা সত্ত্বেও তন্দ্রাচ্ছন্ন হইয়া বিছানায় পড়িয়াছিলাম।

‘কড়কড়’ শব্দে বাজ পড়িল না-দুয়ারে কড়া নড়িল।

বাহিরে আসিয়া দেখিলাম, একটি আধ ঘোমটা দেওয়া কম বয়সি মেয়ে একটি বুড়িকে লইয়া দাঁড়াইয়া আছে। চিনিতে পারিলাম- নাথুনির স্ত্রী ও মা। ইহাদের বাড়িতে ইতিপূর্বে চিকিৎসা করিয়াছি। নাথুনি স্থানীয় ময়দার কলে চাকরি করে।

কী হলো?

বুড়ি নীরব।

নাথুনির বউ বলিল, মায়ের মুখ হাঁ হয়ে গেছে। বুঝছে না। বলিয়া সে মুখ ফিরাইয়া হাসি গোপন করিল।

তাই নাকি? দেখি-

দেখিলাম, ঠিকই তাই- বুড়ির ‘জ’ স্থানচ্যুত হইয়াছে।

নাথুনি কোথায়?

নাইট ডিউটি থেকে ফেরেনি এখনো।

এ রকম হলো কী করে? হাই তুলতে গিয়ে?

বধূই উত্তর দিল (বুড়ির পক্ষে কথা বলা অসম্ভব), না, হাই তুলতে গিয়ে নয়।

তবে?

এমনই।

এমনই কী করে হবে? কীসের জন্য হাঁ করেছিল?

বধূটি তখন ঈষৎ হাসিয়া অবনত মস্তকে পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ দিয়া মাটি খুঁড়িতে খুঁড়িতে সংকোচে বলিল, মা আমাকে গাল দিচ্ছিলেন। অনেকক্ষণ গাল দেওয়ার পর যেই ‘পোড়ারমুখী’ বলতে গেছেন, অমনি ‘পোড়ার’ পর্যন্ত বলেই-

মুখে আঁচল দিয়া ঘাড় ফিরাইয়া সে হাসি গোপন করিল। বুড়ির চোখের দৃষ্টি অগ্নিবর্ষণ করিতে লাগিল।

কতক্ষণ হয়েছে?

আধঘণ্টা হবে।

আচ্ছা, বস তোমরা, এখুনি ঠিক করে দিচ্ছি আমি।

ভাবিলাম মুখরা বুড়িটা একটু শাস্তিভোগ করুক, আমি ততক্ষণে প্রাতঃকৃত্যাদি সারিয়া লই।

রোগী দেখিবার ঘরটায় তাহাদের বসাইয়া আমি ভিতরে চলিয়া গেলাম।

ফিরিলাম প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে।

আসিয়া বিধিমতো দুই হাতের দুইটা বুড়া আঙুল বুড়ির মুখগহ্বরের পুরিয়া নিচের চোয়ালের হাড়টায় বেশ জোরে চাপ দিয়া টান দিলাম। খুট করিয়া হাড় যথাস্থানে বসিয়া গেল।

মুখ হইতে বুড়া আঙুলটি বাহির করিয়া লইবার সঙ্গে সঙ্গে বুড়ি বলিল- মুখী!

হ পেশায় চিকিৎসক হওয়ায় বনফুল-এর অধিকাংশ গল্পে উঠে এসেছে মানুষের বিভিন্ন শারীরিক রোগ এবং চিকিৎসা, প্রতিকার ইত্যাদির ঘটনা। সেগুলোর পাশাপাশি গল্পগুলোও লেখক অসম্ভব চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। ‘নাথুনির মা’ও সে ধরনের একটি গল্প।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close