reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৩ অক্টোবর, ২০২১

জুয়েল আশরাফের হাসির গল্প

চালাকির খেসারত

হাবুর বড় বোন ফোন করেছিল অফিসে। বলল, আজ অবশ্যই একবার আয়। ভীষণ দরকার।

কী দরকার ফোনে বলতে চাইল না।

হাবু বড় আপার বাড়ির গেটের সামনে রিকশা থেকে নামল। অনেক দিন আসা হয়নি। একটু অপরাধবোধেও ভুগছে সে। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে ঘুরে দেখে বড় আপা মূল গেটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। গেট খুলে রুমালের মতো ছোট্ট বাগান পেরিয়ে বড় আপার উদ্বিগ্ন চেহারার সামনে দাঁড়াল। জিজ্ঞাসা করল, কী হয়েছে?

বড় আপা কোনো উত্তর দিল না। হাবুর হাত ধরে নিয়ে এলো তার দুলাভাইয়ের ঘরে। দুলাভাই চেয়ারে বসে চা খাচ্ছে। বিমর্ষ ভঙ্গি। বড় আপা অভিমান-চাপা গলায় বলল, তোর দুলাভাই আমাকে চিনতে পারছে না।

ইদানীং হাবুর দুলাভাই যে একটু ভুলে-টুলে যাচ্ছে, বড় আপা হাবুকে বলেছিল ফোনে। সেটা যে এই পর্যায়ে চলে যাবে ভাবতে পারেনি হাবু। দুলাভাইয়ের কাছে গিয়ে বলল, কেমন আছেন দুলাভাই?

আর থাকা। তোর আপা আমাকে একা রেখে কোথায় যে চলে গেল। এখন বাড়িতে একটা কাজের লোক ঢুকেছে। কে যে জোটাল, কে জানে। সে আবার বলছে, আমিই তোমার বউ। ভেবে দেখ একবার, তোর আপা এত মোটা, অপরিচ্ছন্ন ছিল? তার সেই কী স্নিগ্ধ রূপ, রোগা ছিপছিপে, জ্যোৎস্নামাখা মুখ। কলেজ সোশ্যালে এক দেখাতেই কুপোকাত হয়ে গিয়েছিলাম...।

দুলাভাইয়ের কথার মাঝেই আঁচল-চাপা কান্না ভেসে আসে বড় আপার। বলল, সব বদমায়েশি। তোকে চিনতে পারছে, আমাকে পারছে না।

হাবু আপার কাছে ফিরে আসে। বলল, ভুলে যাওয়া রোগটা বেড়েছে দুলাভাইয়ের। অ্যালজাইমার্স ভীষণ জটিল রোগ। তোমাদের পাড়ার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলো। দেখো কী অ্যাডভাইস দেয়। আমি খবর নেব তোমার কাছে।

১০ দিন কেটে গেছে। অফিসের কাজের চাপে খোঁজ আর নেওয়া হয়নি হাবুর। ভেবেছিল বড় আপাই ফোন করবে। করেনি। আজ তাই সোজা চলে এসেছে আপার বাড়ি। ডোরবেল শুনে দরজা খুলল বড় আপা। হাবু জিজ্ঞাসা করল, কোথাও বেরোচ্ছিলে?

না তো, কেন?

হাবু উত্তর দিল না। বড় আপার সাজগোজ দেখে প্রশ্নটা করেছিল। বলল, দুলাভাই এখন কেমন?

নিজে গিয়েই দেখ।

হাবু নিজের চোখে দেখার জন্য এলো দুলাভাইয়ের ঘরে। আজ চেহারাটা চনমনে। পরনে নতুন শার্ট। আগের দিনের মতোই চা খাচ্ছে। বলল, খবর কী দুলাভাই?

না, তোর আপার কোনো খবর নেই। তবে একটা ভালো খবর, আগের কাজের মহিলাটি বিদায় হয়েছে। এখন যে এসেছে সে বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। খুব যত্ন-আত্তি করে। মাঝে মাঝে গান শোনায়, গলাটি ভারী সুরেলা।

চা খেয়ে আপার বাড়ি থেকে হাবু যখন বিদায় নিচ্ছে, আপা বলল, কী বুঝলি হাবু? আমার এখন কী করা উচিত?

হাবু বলল, আমার ধারণা দুলাভাই তোমার সঙ্গে কোনো খেলা খেলে যাচ্ছে। কত দিন হলো এরকম করছে? বড় আপাও হাবুর সঙ্গে একমত। আগ্রহ নিয়ে বলল, যেদিন থেকে তোর দুলাভাইয়ের নতুন বাড়িটা আমার নামে লিখে দিতে বললাম সেদিন থেকেই ভোলাভুলির খেলা খেলছে।

হাবু বিজ্ঞ ভঙিতে বলল, আপা এক কাজ করো। তোমার ছোট্ট ফ্ল্যাটটি দুলাভাইয়ের নামে লিখে দাও। বড় মাছ ধরতে গেলে ছোট মাছ দিয়েই টোপ ফেলতে হয়।

১৩ দিন কেটে যেতেই অফিসে বসে বড় আপার ফোন পেল হাবু। হ্যালো বলতেই ওপাশে জড়ানো গলায় বড় আপার মরা-কান্না। আমার কী সর্বনাশ হলো রে হাবু! ফ্ল্যাট লিখে দিতেই তোর দুলাভাই এখন আর আমাকে চিনতে পারছে না। আমার কী হবে রে হাবু।

হাবু জলদি লাইন কেটে দিয়ে মোবাইল সুইচ অফ করে দিল। কারণ ফ্ল্যাট লিখে দেওয়ার বুদ্ধিটা তারই ছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close