reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

চণ্ডীচরণ দাসের হাসির গল্প

লজ্জাবতী বউ

বেশ আকস্মিকভাবেই বিয়েটা হয়েছিল জয়ন্তর। হাওড়ার দেউলটিতে বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে সুন্দরী নুপূরকে দেখে ভালো লেগে যায় তার। বন্ধুর কাছে খোঁজখবর করে মা-বাবাকে পাঠায় ওদের বাড়ি সম্বন্ধ নিয়ে। ছেলে কলকাতায় ভালো চাকরি করে, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান, দেখতে-শুনতেও ভালো, যেচে আসা এত সুন্দর পাত্র পেয়ে নুপূরের বাবা-মা যেন হাতে চাঁদ পেলেন। সদ্য কলেজে ঢোকা মেয়ের সব আব্দার আপত্তি অগ্রাহ্য করে তাড়াতাড়ি একটা শুভদিন দেখে বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেললেন।

বেশ ধুমধাম করে জয়ন্তর বিয়ে হয়ে গেল। সারাটা বাড়ি লোকে লোকারণ্য। বৌভাতের গোটাদিন ব্যস্ত রইল বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন আর আমন্ত্রিতদের খাতির আপ্যায়নে। খাওয়া-দাওয়া মিটতে মিটতে বেশ রাত হয়ে গেল।

ফুলশয্যায় রাতে নববধূর ঘরে ঢুকে দেখল নুপূর যথারীতি কনের সাজে বেনারসি পরে ঘোমটা টেনে জড়সড় হয়ে বিছানায় বসে রয়েছে। কাছে গিয়ে বলল, ‘বন্ধু-বান্ধবদের বিদায় করে আসতে একটু দেরি হয়ে গেল, কিছু মনে করো না।’

নুপূর কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ উঠে প্রণাম করে দুধের গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে মাথা নিচু করে বিছানায় গিয়ে বসল।

জয়ন্ত দুধটা খেয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি খাওয়া-দাওয়া ঠিকঠাক করেছো তো?’

নুপূর ঘাড় নাড়ল।

‘ওঃ, কি গরম!’ বলে জয়ন্ত পাখার স্পিডটা বাড়িয়ে দিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার গরম লাগছে না?’

নুপূর মাথা নেড়ে উঠে গিয়ে পাখাটা আনতে গিতে জয়ন্ত বলে উঠল, ‘না না হাওয়া করতে হবে না। তুমি বসো।’

নুপূর মাথা নিচু করে বসে রইল।

‘তারপর বলো, এখানে তোমার কোনো অসুবিধে হচ্ছে না তো?’

নুপূর ঘাড় নাড়ল।

নুপূরের ভাবসাব দেখে জয়ন্ত আশ্চর্য হলো। কলেজে পড়া শিক্ষিত মেয়ে, গ্রাম্য নিরক্ষরদের মতো এমন লজ্জায় কুঁকড়ে থাকে কেন? বিরক্ত হয়ে বলল, ‘কী তুমি ঘোমটা দিয়ে বসে খালি মাথা নাড়ছো? কথা বলছো না কেন? কলেজে পড়া মেয়ে, এত লজ্জা কীসের? এই আমাকে দেখো কেমন আধুনিক, খোলামেলা কথা বলছি। আমি কিন্তু এসব আদ্যিকালের আদিখ্যেতায় বিশ্বাস করি না। আধুনিক যুগের মেয়ে তুমি, চালচলন, কথাবার্তায় আমার মতো আধুনিক হও। এ রকম লজ্জাবতী লতা হয়ে থেকো না। আমার এসব একদম পছন্দ নয়।’

কথাগুলো শুনে নুপূর মুখ তুলে একবার জয়ন্তর মুখের দিকে তাকাল। তারপর হঠাৎ জয়ন্তর গাল দুটো দু-হাত দিয়ে টিপে আদর করে ‘সোনামণি আমার, একদম আমার মনের কথা বলেছো’ বলে তড়াক করে বিছানা থেকে নেমে এলো। ‘আমারও কি ছাই এই বজ্জরগুলো পরে সঙ সাজতে ভালো লাগে নাকি? নেহাৎ...’ বলতে বলতে এক ঝটকায় বেনারসি শাড়িটা খুলে ফেলল। তারপর বাক্স থেকে একটা শর্ট প্যান্ট আর স্কার্ট পরে সামনে এসে বলল, ‘সর তো একটু আরাম করে বসি, আমি ঘরে এগুলোই পরি।’ বলে বালিশটা টেনে নিয়ে আরামসে হেলান দিয়ে বসে একটা জোরে হাঁফ ছাড়ল। চোখে চোখ রেখে বলল, ‘বল, এবার কী বলছিলে?’

খানিক আগের লজ্জাবতী বউয়ের আধুনিকতার নমুনা দেখে জয়ন্ত তো হতবাক। চোখ বড় বড় করে হাঁ করে তাকিয়ে রইল নববধূর দিকে, কী বলবে ভেবে পেল না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close