গোলাম কিবরিয়া পিনু
বৈশাখের রোদ্র-তাপে নবায়ন
বৈশাখের তাপ নিয়ে ঝাঁপ খুলে বের হই
খোঁয়াড় খুলে বের হই
পাঁজরা খুলে বের হই
মনে হয় আমি এক কাকাতুয়া
আমার দুচোখে দিগন্তপ্রসারী সবুজের স্বপ্ন
যেখানে রয়েছে তরুলতা
যেখানে রয়েছে লতাগৃহ
যেখানে রয়েছে চারাগাছ
যেখানে রয়েছে কচিপাতা
যেখানে রয়েছে কুসমকোরক!
হৃৎপি-ের সকল রক্তবহনকারী শিরা জানে
জন্মভূমি কীভাবে আমার ভেতর জেগে আছে
বৈশাখ এলেই বোধের ব্যঞ্জনা নিয়ে
ঐক্য সূত্র নিয়ে
নিজেরই বাদ্যযন্ত্রে নিজে বেজে উঠি
নিজেরই দুন্দুভিতে নিজে বেজে উঠি
নিজেরই পাখোয়াজে নিজে বেজে উঠি
নিজেরই করতালে নিজে বেজে উঠি।
আমাকে জাগিয়ে রেখেছে আমারই জবাফুল
আমাকে জাগিয়ে রেখেছে আমারই নদীকুল,
পূর্বজ্ঞান নিয়েÑ
ড্রাগনের মুখ থেকে বারবার বাঁচিয়ে রেখেছিÑ
আমার মায়ের সোনাদুল!
বৈশাখ এলেই বৈশাখী সৌন্দর্যে আমাদের নবজন্ম হয়
ভেদরেখা লুপ্ত হয়
সংকীর্ণতা লুপ্ত হয়
বর্ণভেদ থাকে না
ধর্মভেদ থাকে না,
যদি শ্রেণিভেদ না থাকত
তাহলে বাঁশি বাজানোর স্পর্ধা আরো বেড়ে যেত,
পায়ে পরানো অনেক শৃঙ্খল ও বেড়িও
আপনাআপনি খুলে যেত,
একটা বাবুই পাখি আরো কিচিরমিচির করে
নলখাগড়ার বন থেকে মহুয়াবনে চলে আসত।
দৃষ্টি ফেরানো যাবে না
বৈশাখ এলেই নিজেদের বাঁশি বাজানোর স্পর্ধা নিয়ে
আমিও অনুরণিত হইÑ
পুনরুদ্ধার করি
নিজের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের বটেশ্বর
পুনরুদ্ধার করি
নিজের ভেতর পীড়া-ক্লেশে মাটিচাপা স্বপ্ন।
বৈশাখের বায়ু হিল্লোল আমাকেও জাগিয়ে তোলে
ভগ্নচিত্ত থেকে
ঝরঝরে হয়ে উঠি,
বধিরতা থেকে
চনমনে হয়ে উঠি,
চাপা কান্না থেকে
তরতাজা হয়ে উঠি,
নিজেকে নিজেই নবায়ন করি বৈশাখের রোদ্র-তাপে
নিজের জলের স্রোত থেকে তৈরি করি
তড়িৎপ্রবাহ!
সূর্যশক্তি নিয়েÑ
উৎসব ও আনন্দপর্ব খুলে খুলে
বাংলার বারো মাসেÑ বৈশাখ থেকে চৈত্র মাসে
নিজেদের প্রাচুর্য-বৈভবে
ও রূপবৈচিত্র্যে
যে সজীবতা খুঁজে পাই
তা যেন ধুলোঝড়ে কখনো না হারাই
তা যেন ধুলোঝড়ে কখনো না হারাই!
"