শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ঝিনাইদহের শৈলকুপা

২০ বছর ধরে আলো ছড়াচ্ছে পাঠাগার, সংস্কারের দাবি

গ্রামে নেই কোনো স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসা, নেই খেলার মাঠও। গ্রাম থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকলেও গ্রামটিতে রয়েছে একটি পাঠাগার। অবসর সময়ে শিক্ষার্থীরা এই পাঠাগারে বই পড়েই সময় কাটায়। এতে দিতে হয়না কোনো ফি। শুধু খাতায় এন্ট্রি করলেই পাওয়া যায় বই। গত বিশ বছর ধরে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে ‘বিএসডি ক্লাব এন্ড পাঠাগার’ জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে। তবে এর ঘরটি কিছু জায়গা মেরামত করা প্রয়োজন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, উপজেলা শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় স্কুল পড়ুয়া তরুণেরা ২০০৪ সালে নিজেদের উদ্যোগে পাড়ার পরিত্যাক্ত একটি জায়গায় একটি টিনের ঘর করে তাতে চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে নামকরণ করেন ‘বিএসডি ক্লাব’। কয়েকবছর পর ক্লাবটিকে ‘বিএসডি ক্লাব এন্ড পাঠাগার’ নামে নতুনভাবে নামকরণ করা হয়। প্রাথমিকভাবে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলমগীর অরণ্যের সংগ্রহ থেকে তিন শতাধিক বই নিয়ে শুরু হয় পাঠাগারের কার্যক্রম। পরে অন্যদের সংগ্রহে থাকা আরও দুই শতাধিক বই নিয়ে গড়ে তোলা হয় পাঠাগারটি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বেসরকারি গ্রন্থাগার উন্নয়ন প্রকল্পের অধিনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় পাঠাগারটিকে এক লাখ বিশ হাজার টাকা অনুদান বরাদ্দ দেয়। সরকারি রেজিস্ট্রেশন পেয়ে সরকারি ওই অর্থ সংগ্রহ করে পাঠাগারে শুরু হয় নবউদ্যোমে কর্মকাণ্ড। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ৫০ শতাংশ টাকা খরচ করে নতুন ঘর নির্মাণ করা হয়। বাকি টাকায় ঢাকা থেকে নতুন বই কেনা হয়।

পাঠাগারটির পরিচালনা কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেনের ভাষ্যমতে, বর্তমানে এ গ্রন্থাগারের সংগ্রহে রয়েছে দুই হাজারের অধিক বই। প্রতিদিন ৩টি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা এবং ২টি সাময়িকী নিয়মিত রাখা হয়। প্রকৌশলী ড. গোলাম মোস্তফার নামে একটি শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্প চালু আছে। পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতি বছর ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ১৫ জনকে দেওয়া হয় শিক্ষাবৃত্তি।

সরেজমিনে ওই পাঠাগারে দেখা গেছে, উপন্যাস, কবিতা, গল্প, মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণা, ইতিহাস, ঐতিহ্যের বইয়ে ভরা রয়েছে সাতটি আলমারি। সারি করে রাখা চেয়ারে বসে আছেন কয়েকজন পাঠক। কেউ বই পড়ছেন, কেউ দৈনিক সংবাদপত্র, কেউবা সাময়িকী। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাঠাগারের ঘরটির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। দরজা-জানালা ভেঙে গেছে, টিনের ছাদ ভেঙে সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছে। বর্ষায় বইয়ের সংরক্ষণ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চিন্তা দেখা দিয়েছে।

আবু আরিফ রেজা নামের এক পাঠক বলেন, ‘আমি নিয়মিত পাঠাগারে এসে বই পড়ি। সরকারি সহযোগিতায় ক্লাবটির প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হোক।’ পাশ্ববর্তী চতুড়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক আব্দুস সালাম জানান, ‘প্রয়োজনীয় বই এই পাঠাগারে এসে পেয়ে যাই। তাই যখন যে বই দরকার পড়ে তা নিতে পাঠাগারটিতে চলে আসি। এসে কিছুক্ষণ সময় কাটালাম। সন্তানদের পড়ার জন্য বই বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি আবার এসে পাঠাগারে রেখে যাবো।’

শহিদুজ্জামান বাবু নামের এক পাঠক বলেন, যুবক-যুবতীরা এই পাঠাগারে সময় কাটালে খারাপ কাজগুলো থেকে বিরত থাকবে।

পাঠাগারটির পরিচালনা কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেন জানান, নির্দিষ্ট জায়গায় ক্লাব খোলার চাবি রাখা হয়। সকাল-বিকাল যে যখন আসে চাবি নিয়ে পাঠাগার খুলে বই পড়ে। এছাড়া কেউ আসলে আমরা পাঠাগার খুলে দিই।

বিএসডি ক্লাব এন্ড পাঠাগারে সভাপতি আলমগীর অরণ্য জানান, পাঠাগারের ঘরটির অবস্থা বর্তমানে খুবই খারাপ। ঘরটি পুননির্মাণ না করা গেলে আগামীতে ঝড়-বৃষ্টিতে পাঠাগারে থাকা সব বই নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ টিনের ঘরে এই ধরণের পাঠাগার গড়ে তোলা সম্ভব না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা দাস বলেন, পাঠাগারের পক্ষ থেকে যেকোনো প্রয়োজনে সরকারি অনুদান পাওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করলে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close