শাহ এস এম ফরিদ, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ)
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর
জলাশয় শুকিয়ে অবাধে মাছ নিধন, ধ্বংস জীববৈচিত্র্য

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় উন্মুক্ত ও ইজারা নেওয়া জলাশয় শুকিয়ে অবাধে মাছ নিধন করা হচ্ছে। মৎস্য আহরণে ইজারা নীতিমালা ও মৎস্য আইনের প্রয়োগ না থাকায় জলাশয় শুকিয়ে অবাধে চলছে মাছ নিধন। সেচে শুকিয়ে নির্বিচারে মাছ ধরার ফলে ক্রমশই হাওর খাল-বিলে কমছে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এসব মৎস আহরণের উপর নির্ভর মানুষ গুলো বিপাকে পড়েছেন।
জানা গেছে, দিন দিন কমছে চিরচেনা টেংরা, শিং, মাগুর, কই, পাবদা, লাচু, শোল, গজার সহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। হাওর এলাকার অনেক পরিবার মৎস আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। উন্মুক্ত জলাশয়ে দেশীয় মাছের উৎপাদন কমায় বিপাকে পড়েছেন মাছের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় য় দেখা গেছে, চলতি মৎস্য আহরণ মৌসুমে খাল-বিল, ডুবা, সেচে মাছ ধরার মহোৎসব চলছে। হাওর এলাকার স্থানীয় লোকজন জানান, সেচ মেশিন দিয়ে শুকিয়ে মাছ ধরা হলেও মৎস আইন অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়না। মৎস নীতিমালা থাকলেও বাস্তবে এসব আইনের প্রয়োগ না থাকায় দেশীয় প্রজাতির মাছ সহ ধ্বংস করা হচ্ছে জলজ জীববৈচিত্র্য।
জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের আবু তাহের জানান, এলাকায় সেচ মেশিন দিয়ে খাল-বিলের পানি শুকিয়ে মাছ ধরা হয়। আগের সময় গুলোতে সেচ দিয়ে মাছ ধরা হতোনা, বাজারে সস্তায় কই, মাগুর, শউল মাছ পাওয়া যেতো। বাজারে দেশি মাছের চাহিদা বেশি, অনেক বেশি দামে দেশি মাছ কিনতে হয়। জলমহাল না শুকালে দেশি মাছের উৎপাদন বেশি হতো।
সৈয়দপুর-শাহারপড়া ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের আক্তার মিয়া বলেন, বাজারে শুধু দীঘির উৎপাদিত মাছ পাওয়া যায়, এসব হাইব্রিড মাছে স্বাদ পাওয়া যায় না। চারপাশে মেশিনের শব্দ, খাল-বিলের পানি শুকিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে, আইনের নিয়মনীতি কেউ মানে না।
পাইলগাঁও ইউনিয়নের গোতগাঁও গ্রামের আব্দুল মনাফ বলেন, আমরা ফিশারীর উৎপাদিত মাছ কিনে বিক্রি করি। হাওর খাল-বিল উন্মুক্ত নেই, বেশির ভাগ জলাশয় ইজারা দেওয়া হয়। উন্মুক্ত ভাবে মাছ ধরতে পারেন না, যাদের পূঁজি আছে তারা আড়ৎ থেকে মাছ কিনে বিক্রি করে। বেশিরভাগই গরিব মানুষ, নদী, খাল-বিলে মাছ ধরে পরিবার চলে। ইজারাদার সেচযন্ত্র দিয়ে মাছ ধরেন, পরবর্তীতে হাওরে প্রজনন সময়ে মাছ পাওয়া যায় না।
জগন্নাথপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আল-আমীন জানান, হাওরে নিম্নাঞ্চল ইজারা নিয়ে ডুবা, বিল সেচ দিয়ে শুকিয়ে মাছ ধরা হয়ে থাকে, এটা মৎস্য আইনের পরিপন্থি কাজ, মৎস্য সুরক্ষা এবং মৎস্য সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ এবং মৎস্য বিধিমালা ১৯৮৫ অনুযায়ী সরকারি জলাশয় কিংবা উন্মুক্ত জলাশয় হউক সম্পুর্ণ ভাবে সেচে অথবা বিষ প্রয়োগ করে এখান থেকে মাছ ধরা যাবেনা। সেচযন্ত্র দিয়ে যদি কেউ এ ধরনের কাজ করেন তাহলে আইন অনুযায়ী এখানে অভিযান মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যেতে পারে। তিনি আরও জানান, কিন্তু তাদের ধরাবাঁধা নিয়ম আছে। তারা চাইলেও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারেন না। ইউএনও মহোদয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। মৎস্য অফিস কর্মকর্তারা সবসময় চেষ্টা করেন হাওরে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণের জন্য।
"