সোহানুর রহমান, দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি)

  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

নির্মাণের এক বছরেও চালু হয়নি ৩ কমিউনিটি ক্লিনিক

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় এক বছর আগে বিপুল অর্থ ব্যায়ে নির্মাণ করা তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা চালু হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা উত্তর ছাদকছড়া, পনছড়ি নেত্রজয় কার্বারীপাড়া ও ক্ষেত্রপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম চালু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে রয়েছে জনবল সংকট সহ নানা সমস্যা। অসুস্থতার জন্য উপজেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।

জানা গেছে, ক্লিনিক গুলো নির্মাণ করা হয় উপজেলা সদর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরের গ্রাম ক্ষেত্রপুর, প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম পনছড়ি নেত্রজয় কার্বারীপাড়া এবং ৭ কিলোমিটার দূরে উত্তর ছাদকছড়া এলাকায়। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্বাবধানে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক তিনটির নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার পর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে হস্তান্তর করা হলেও আলোর মুখ দেখেনি দুর্গম পাহাড়ি জনপদের এই তিন কমিউনিটি ক্লিনিক। হস্তান্তরের পর এগুলো কাগজে-কলমে চালু দেখানো হলেও বাস্তবে চালু করা হয়নি। এতে কোনো স্বাস্থ্যকর্মীর দেখাও পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় স্থানীয়রা দুর্নীতি ও অনিয়মের গন্ধ পেয়েছে।

সরেজমিনে উপজেলার দুর্গম গ্রামগুলোর ক্ষেত্রপুর, পনছড়ি নেত্রজয় কার্বারীপাড়া ও উত্তর ছাদকছড়া গ্রামবাসী জানান, ক্লিনিক নির্মাণের পর প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও একদিনের জন্য কোনো ডাক্তার আসেনি এবং ক্লিনিকের তালাও খোলা হয়নি। তাদের পাড়া খুবই দুর্গম, রাস্তা ঘাট ঠিক নেই, পাড়ার বেশিরভাগ মানুষ দিন মজুর এবং কৃষক। অসুস্থতার জন্য উপজেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।

আরো জানা গেছে, উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য একটি হাসপাতাল, ৩টি সাব সেন্টার, ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে রয়েছে জনবল সংকট, পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি সংকট রয়েছে। পাশাপাশি জরাজীর্ণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে চিকিৎসা সেবা চালু রাখতে হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের পরিসংখ্যানবিদ মি. মিলন স্মৃতি চাকমা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের সিনিয়র জুনিয়র মিলে ৯জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছে মাত্র ৫জন, একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মধ্যে থাকলেও তিনি ডেপুটেশনে রামগড় উপজেলায় রয়েছেন। স্বাস্থ্য সহকারীর ৩৫টি পদ থাকলেও আছে মাত্র ৯ জন। তাছাড়া আল্টাসনোগ্রাফি, ইসিজি করার ব্যবস্থা নেই। অবকাঠামোগত সমস্যাও রয়েছে।

উত্তর ছাদকছড়া পাড়া কার্বারী (গ্রাম প্রধান) আনন্দ কুমার চাকমা বলেন, ‘ক্লিনিকটি চালু না হওয়ায় আমাদের এলাকার গরিব মানুষরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দ্রুত চালু করার জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

পনছড়ি নেত্রজয় কার্বারী পাড়ার কার্বারী (গ্রাম প্রধান) পুতুল ময় চাকমা জানান, উপজেলা সদর হতে তাদের পাড়ার দূরত্ব প্রায় ১৫-১৬ কিলোমিটার। প্রায় ১৫০ পরিবারের বসতি। এখান থেকে উপজেলা সদরে নিয়োমিত গাড়ি চলাচল করে না। গরীব মানুষেরা টাকার অভাবে সবসময় উপজেলা সদরে গিয়ে সু-চিকিৎসা নিতে পারি না। হাসপাতাল তৈরির এক বছর পরেও কেনো কমিউনিটি ক্লিনিকটি চালু হয়নি তা ভেবে অবাক তিনিও। কাগজে-কলমে এটি চালুর কথা শুনে। এটি চালু না হওয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। গ্রামের মানুষেরা সু-চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ক্ষেত্রপুরপাড়ার কার্বারি অমূল্য চাকমা বলেন, ‘আমাদের পাড়ায় ১২০ পরিবারের বসতি। ক্লিনিক নির্মাণ হলেও চালু করা হয়নি। ক্লিনিকটি দ্রুত চালু করা হবে বলে আশা করি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের পরিসংখ্যানবিদ মি. মিলন স্মৃতি চাকমা বলেন, নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক তিনটি চালু আছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর খাগড়াছড়ির উপসহকারী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে উত্তর ছাদকছড়া, ক্ষেত্রপুর ও পনছড়ি নেত্রজয় কার্বারি পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো নির্মাণ করা হয়। পরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও যথাযথ কতৃপককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তনয় তালুকদার বলেন, ‘স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নতুন ৩টি ক্লিনিক আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকা থেকে পর্যাপ্ত ওষুধ না পাওয়ায় চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত চালু করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close