হুমায়ুন কবির, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা)
নেত্রকোনার কেন্দুয়া
সেচ নিয়ে দুপক্ষের বিরোধ বোরো উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের সিংহেরগাঁও গ্রামে সেচ নিয়ে দুপক্ষের লোকজনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। দুপক্ষের একজন হলেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মুকুল এবং অপরপক্ষে রয়েছেন গ্রামটির অর্ধশতাধিক কৃষক। এ অবস্থায় বোরো ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় অর্ধশত কৃষক।
গত সোমবার সরেজমিনে গ্রামের একাধিক কৃষক জানান, বিগত সরকারের সময়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মুকুল দলীয় প্রভাব বিস্তার করে একটি সেচ লাইনের অনুমোদন নিয়ে সেচ লাইন স্থাপন করেন। পরবর্তীতে গ্রামের যাদের জমির পরিমাণ বেশি রয়েছে, তাদের জমিতে ঠিকমত সেচের পানি না দেওয়া এবং কৃষকদের কাছে সেচের পানির বিল হিসেবে অতিরিক্ত চার্জ দাবি করেন। এ নিয়ে রফিকুল ইসলাম মুকুলের সাথে অধিকাংশ কৃষকদের বনিবনা হচ্ছিল না। বিষয়টি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে একপর্যায়ে গ্রাম্য সালিশ বসে। এতেও সমস্যা সমাধান না হওয়ায় গ্রামের লোকজন কৃষক বাবুল মিয়ার নামে একটি সেচ লাইনের অবেদন করে উপজেলা সেচ কমিটির কাছে এবং অনুমোদন নিয়ে সেচ লাইন স্থাপন করেন তারা। পরবর্তীতে রফিকুল ইসলাম মুকুলের অভিযোগের ভিত্তিতে বাবুল মিয়ার সেচ লাইনের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকজন।
কৃষক বাবুল মিয়া বলেন, রফিকুল ইসলাম মুকুল ব্যবসার উদ্দেশ্য নিয়ে সেচ লাইন স্থাপন করে আমাদের কাছে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে। এ নিয়ে তার সাথে আমাদের বেশ কয়েকবার আলোচনা করেও কোনো সমাধান না হওয়ায় প্রায় ৩৫ একর জমির মালিক কৃষকদের সম্মতিতে আমার নামে একটি সেচ লাইন অনুমোদন নিয়ে আমার জমিতে স্থাপন করি। পরবর্তী সময়ে মুকুল অভিযোগ করে আমার লাইন বিচ্ছিন্ন করায়। এ অবস্থায় আমিসহ গ্রামের অধিকাংশ কৃষক ডিজেল ইঞ্জিনের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিয়ে কোনো রকম জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন করেছি। কিন্তু এখন মুকুল ডিজেল ইঞ্জিনের মাধ্যমে জমিতে সেচের পানি দিতে দিচ্ছে না।
কৃষক এখলাস উদ্দিন বলেন, এই হাওরে আমাদের গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষকের অন্তত ৩৫ একর জমি রয়েছে। আর রফিকুল ইসলাম মুকুলের নিজের ৪ শতক জায়গা ছাড়া অন্য কোনো জমি নেই। তার পক্ষের কিছু লোকের প্রায় ১০ একরের মতো জমি রয়েছে। মুকুল আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তার করে সেচ লাইন স্থাপন করে আমাদের জমিতে সেচের পানি না দেওয়ায় আমরা বাবুলের নামে সেচ লাইন অনুমোদন এনে স্থাপন করেছিলাম। এখন এই লাইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে লাইন কেটে ফেলেছে। আমাদের ধানের জমি পানির অভাবে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রফিকুল ইসলাম মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। আর বাবুল মিয়ার সেচ লাইনটি যেখানে অনুমোদন করিয়েছিল সেই স্থানে স্থাপন না করে আমার সেচ লাইনের পাশে স্থাপন করায় আমি তাদের সেচ লাইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ঘটনাটি আমি অবগত আছি। উভয়পক্ষকে নিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করব।
"