সিলেট প্রতিনিধি

  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

সিলেট

মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেট, ক্ষতির মুখে ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিমচাষি

সিলেটে শীতকালীন সবজির মধ্যে ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিম বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় এ শিমের ব্যাপক চাষ হয়। এ বছরও এ জাতের শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে দরপতন হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন তারা। আশানুরূপ দর না পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সিলেট জেলায় ৪ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে গোয়ালগাদ্দা শিম চাষ হয়। উৎপাদন হয় ৫০ হাজার ৪৮৫ মেট্রিক টন। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৪ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে ৪৮ হাজার ৮৩৬ মেট্রিক টন শিম উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা।

সরেজমিন দেখা যায়, গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষীপাশা ইউনিয়নের দক্ষিণ পালপাড়া এলাকায় মাঠে, বাড়ির আঙিনা, পুকুরপাড় সর্বত্রই শুধু শিমের সমাহার। গাছগুলোতে থোকায় থোকায় ঝুলছে ‘গোয়ালদাদ্দা’ শিম। এসব শিম বাজারজাত করতে মাচা থেকে তারা সংগ্রহ করছেন কৃষকরা। শিম সংগ্রহ করে বিক্রি করতে নিয়ে যাবেন স্থানীয় বাজারে।

স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, ভাদ্র মাস থেকে শিম চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করা হয়। কার্তিক মাসে বীজ বপন করা হয়। রোপনের ২১-২৫দিনের মধ্যেই গাছ লতায় লতায় ছেয়ে যায়। এরপর ফুল ও ফল। এ বছর শিমের উৎপাদন দেখে খুশি হয়েছিলেন কৃষকরা।কিন্তু পাচ্ছেন না চাহিদামত দাম।

দক্ষিণ পালপাড়া গ্রামের চাষি সিরাজ উদ্দিন বলেন, আমি দীর্ঘ দিন যাবত শিম চাষ করছি। গতবছর ফলন ভালো হয়েছিল। এবছর আমি তিন বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি, ফলন ও ভালো হয়েছে। তবে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছি। সার বীজ ও শ্রমিক খরচ শেষে লাভের অংশ পাওয়া অনেকটাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

শিম চাষি আজমান বলেন, গতবছর আমরা শিম বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পেয়েছি। তাই এ বছর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আগের চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ করেছি। কিন্তু এবছর শিমের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি না। এ বছর প্রতি কেজি শিম ১৩-১৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনসুর আলম জানান, এবছর গোলাপগঞ্জে ৭৪২ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। এখানকার মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু শিম চাষের জন্য উপযোগী। কৃষকরা শিম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তাদের নানা সহায়তা দিচ্ছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাশরেফুল আলম বলেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৭৪২ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। স্থানীয় পুরকায়স্থ বাজার, চৌধুরী বাজার ও রাখালগঞ্জ বাজারে কৃষকেরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে শিম বিক্রি করেন। সেখান থেকে পাইকাররা সরাসরি শিম সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে শিম প্রক্রিয়াজাত করে সারা দেশে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। এবছর কৃষকরা আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না শিমের। এর কারণ আমরা খুঁজে পেয়েছি ।

দুটি কারণ চিহ্নিতের কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, করেছে। এরমধ্যে একটি হল এই শিমগুলো বিদেশে রপ্তানি হয়। কিন্তু এবছর কোনো কারণে পর্যাপ্ত এক্সপোর্টার আসেননি শিম কিনতে। এবং কৃষকরা পাইকারদের কাছে শিম বিক্রি করেন। এখন এই পাইকাররা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন কারন দেখিয়ে শিমের দাম কম দেন কৃষকদের। তবে আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন এক্সপোর্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা শিম কিনতে আসবেন বলেছেন। এবং এই এক্সপোর্টরা যেন সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে শিম কিনতে পারেন আমরা সেই ব্যবস্থা করছি। মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করতে আমরা সবধরনের চেষ্টা করব।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, সিলেট অঞ্চলে বিগত কয়েক বছরের ব্যবধানে শিম চাষ বেড়েছে। বিশেষ করে দেশ বিখ্যাত গোয়ালগাদ্দা শিম এখন জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার চাষিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রপ্তানিযোগ্য এ শিম চাষে সফলতা পেয়ে অনেক কৃষক শিম চাষে এগিয়ে এসেছে। কৃষি অফিস এসব কৃষকদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে আসছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close