মো. জামাল উদ্দিন, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)
কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
হাসপাতালে জনবল সংকট চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

অর্ধেকেরও কম চিকিৎসক ও জনবল দিয়ে চলছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা না থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ। জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে রোগীদের যেতে হচ্ছে জেলা শহরসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। ফলে যেমন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা, তেমনি পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। জনবল শূন্যতা পূরণে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় উপজেলার সচেতন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৫০০ থেকে ৭০০ রোগী চিকিৎসা নেন। ৫০ শয্যার বিপরীতে ৬০ থেকে ৭০ জন পর্যন্ত রোগী ভর্তি থাকেন নিয়মিত। বিপুল সংখ্যক এই রোগীর জন্য ২১টি চিকিৎসকের পদ বরাদ্দ থাকলেও ৯টি রয়েছে শূন্য। আবার ২জন আছে সংযুক্তিতে। এছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. নাজনিন আক্তার যোগদানের পর থেকে রয়েছেন অনুপস্থিত। ফিল্ড স্টাফ ৫৩ পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ২২টি। এ ছাড়া নার্স মিডওয়াইফ ২৬টি পদের মধ্যে ১৭টি পদ শূন্য এবং ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ২৭টি পদের মধ্যে ১৯টি শূন্য রয়েছে। এতে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের। প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কাজেও রয়েছে নানা বিড়ম্বনা। ৪র্থ শ্রেণির গুরুত্বপূর্ণ কুক পদটিও রয়েছে দীর্ঘ দিন থেকে শুন্য। ফলে রোগীদের খাবার তৈরী ও বিতরণে রয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম। হাসপাতালে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ (কার্ডিওলজিস্ট)। কিন্তু দীর্ঘ দিন থেকে এ পদটিও শূন্য রয়েছে এবং বর্তমানে কার্ডওগ্রাফারও নেই অনেকদিন থেকে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী জানান, কোনো রোগী দুপুর ১২টায় ভর্তি হলে পরের দিন সকালে একজন চিকিৎসক দেখেন। এ সময়ে রোগী কষ্টে মরে গেলেও নার্স ছাড়া কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ফজলে রাব্বি চর জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বাড়ি তিনি বলেন, আমি তিন দিন ভর্তি হয়েছি, ডাক্তার মাঝে মাঝে আসেন।
তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা বিবি হনুফা বলেন, আমি ২দিন ভর্তি হয়েছি। হাসপাতালে ময়লা, আবর্জনা অপরিষ্কার এবং টয়লেট থেকে দুগ্ধ আসে।
এছাড়া আনোয়ার হোসেন নামে এক রোগী বলেন, এই হাসপাতালে অনেক রোগী, সে তুলনায় ডাক্তার ও নার্স পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কর্মীর অভাব।
রোগী ও রোগীর স্বজনদের দাবি, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকায় প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের ফিরে যেতে দেখা যায়। সংকট সমাধানে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথ জানান, হাসপাতালে অনেক দিন ধরেই চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে কিছুটা বঞ্চিত হচ্ছে। এরপরও যে জনবল রয়েছে, তাই দিয়ে তারা মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তিনি আরও জানান, জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
"