আবু সাইদ খোকন, আমতলী (বরগুনা)
বরগুনার আমতলী
ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় কৃষি উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা

বরগুনার আমতলী উপজেলায় ফসলি জমির উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। ইটভাটায় দেদারছে মাটি বিক্রি করছেন কৃষকরা। মাটি বিক্রি করায় ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বরতা হারাচ্ছে। এতে হুমকিতে আবাদী জমি। ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া ফৌজদারী অপরাধ। কিন্তু মাটি সংগ্রহকারী ঠিকাদার ও ইটভাটার মালিকরা আইন না মেনে কৃষকদের মানিয়ে ভাটায় মাটি নিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত মাটি কাটা বন্ধ না হলে কৃষি উৎপাদন বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়বে বলে জানান কৃষকরা।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ঈছা জানান, কৃষি জমি’র উপরের ৮-১০ ইঞ্চি থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত মাটির উপরিভাগে রাসায়নিক উপাদান থাকে। এ মাটি কেটে নেওয়া হলে যেমন জমি উর্বরতা হারাবে, তেমনি ফসল আবাদ বিপর্যয়ের মুখে পরবে। তিনি আরো জানান, ফসলি জমিতে গভীর করে মাটি কেটে নিলে ওই জমি অনাবাদি হয়ে যায়। এতে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। সরকারিভাবে নির্দেশনা আছে, ফসলী জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া ফৌজদারী অপরাধ। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নিলে মাটি কাটার প্রবনতা হ্রাস পেতো।
জানা গেছে, উপজেলার আমতলী সদর, হলদিয়া, চাওড়া, কুকুয়া, গুলিশাখালী, আঠারগাছিয়া ইউনিয়নে ঝিকঝ্যাঁক, ড্রাম চিমনি পদ্ধতির ২০টি ইটভাটা রয়েছে। এ ইটভাটা গুলোতে বছরে অন্তত ২০ কোটি ইট পোড়ানো হয়। ইট পোড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় মাটি ইটভাটার মালিকরা ফসলি জমি কেটে আনছে। আবার অনেকে ইটভাটায় মাটি বিক্রির জন্য কৃষি জমি কেটে পুকুর খনন করেছে। এর ফলে হাজার হাজার একর কৃষি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। ফসলি জমির মালিকরা না বুঝে ইটভাটার মালিকদের প্রলোভনে পরে দেদারসে মাটি বিক্রি করছে। গত বছর যারা ফসলি জমির মাটি বিক্রি করছে ওই জমিতে এ বছর আমনের মৌসুমে ভালো ফসল হয়নি।
সরেজমিনে উপজেলার রায়বালা, ফকিরবাড়ী, বান্দ্রা, খলিয়ান, ঘটখালী, কালিবাড়ী ও কুকুয়ার আজিমপুরে দেখা গেছে, ট্রলার ও ট্রলি বোঝাই করে শ্রমিকরা দেদারসে মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে।
গুলিশাখালীর কৃষক মোতালেব বলেন, ‘মোগো এলাকায় অনেক মানু হ্যাগো জমির মাটি বেইচ্ছা হালাইছে। কেউ সরল জমি কাইট্টা পুহোইর হরছে, মুই জমি’র মাডি কাইটা সর্বনাশ করমু না।’ দক্ষিন আমতলীর বাদল বলেন, অনেকে জমির মাটি বিক্রি করছেন।
ট্রাক্টর চালক মো. রিয়াজুল বলেন, কৃষি জমির মাটি কেটে বিবিসি ইটভাটায় ট্রাক্টর বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছি। কৃষি জমির মাটি বিক্রিতে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু জমির মালিকরা বুঝেও ঠিকাদারের টাকার লোভে পড়ে মাটি বিক্রি করছেন। আরেক কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে ভুল করেছি। ওই জমিতে এ বছর ভালো ফসল হয়নি।
রায়বালা গ্রামের এমবিএম ইটভাটার মালিক মাহবুব মৃধা ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারের কাছ থেকে ১০ টাকা ফুট হিসেবে মাটি ক্রয় করি। তারা ইটভাটায় ট্রাক্টরে করে মাটি দিয়ে যায়। কোথা থেকে ঠিকাদার মাটি সংগ্রহ করে তা আমার জানা নেই।
মাটি সংগ্রহকারী ঠিকাদার মো. মোজাম্মেল হাওলাদার বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে ৪ থেকে সাড়ে চার টাকা ফুট দরে মাটি কিনে ইটভাটিতে ১০ টাকা দরে বিক্রি করছি। কৃষকরা অপরিত্যাক্ত জমি, দলখেত, পুকুরের মাটি বিক্রি করছেন। উপজেলায় অন্তত ২০টি ইটভাটা রয়েছে। প্রত্যেক ইটভাটায় একজন করে মাটি সংগ্রহকারী ঠিকাদার আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ফসলি জমির কেটে নেওয়া ফসল উৎপাদনের জন্য হুমকি। কিন্তু জমির মালিকরা না বুঝে জমির মাটি বিক্রি করছেন। খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
"